শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ১৭ ১৪৩১   ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২২৭

সীমান্তবর্তী জেলায় বাড়ানো হয়েছে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২১  

বাংলাদেশে গত বছরের অক্টোবর মাসে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়। এর দুই মাস পরে ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়। গত সপ্তাহখানেক হল র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে। শুরুতে ১০ জেলার কয়েকটি হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্ট করোনা হলেও সম্প্রতি এ টেস্ট বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানো হয়েছে।

সিলেট জেলায় শুরুর মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সবগুলোতে অধিক নির্ভরযোগ্য আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে সব মিলিয়ে ৩৩৪ টি স্থানে এখন র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সর্বমোট র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৩ হাজার ৩৮০ টি। মঙ্গলবার (৮ জুন) গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার ছিল র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। এক সপ্তাহ আগেও এ সংখ্যা অন্তত এক হাজার কম ছিল।

অ্যান্টিজেন টেস্টের শুরুতে গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, যশোর, মেহেরপুর ও সিলেটে অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন সবচেয়ে বেশি এই পরীক্ষা করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। বিশেষ যেখানে সংক্রমণ বেশি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, সিলেটসহ দক্ষিণ-পশ্চিম ও সীমান্তবর্তী যেসব জেলাতে সংক্রমণের হার অনেক বেশি। তাই এ অঞ্চলগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানো হয়েছে। ঢাকাতেও নমুনা পরীক্ষার জন্য ব্রাকের যেসব বুথ রয়েছে সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। রাজশাহীতে ৬ জুন পাঁচ জায়গায় অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়।

এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়েও টেস্ট করানো হচ্ছে। এখন দেশের বেশিরভাগ সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আলমগীর।

এএসএম আলমগীর বলেন, যেসব জায়গায় সংক্রমণের হার বেশি সেখানে মূলত স্ক্রিনিং-এর জন্য পাড়ায় পাড়ায় বা বাড়িতে গিয়ে এই পরীক্ষাটি করা হয়। এক্ষেত্রে যাদের সংক্রমণ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করার মতো কোনো উপসর্গ রয়েছে এমন কারোর নাক থেকে নমুনা নিয়ে একটা কিটে পরীক্ষা করা হয়। এতে ভাইরাস শনাক্ত হলে তাকে আর পিসিআর পরীক্ষা করার কথা বলা হয় না। কিন্তু উপসর্গ থাকার পরও যদি ভাইরাস শনাক্ত না হয় তখন অধিকতর পরীক্ষার জন্য তার নমুনা পাঠানো হয়।

এই টেস্টের মাধ্যমে বিশেষ ভাইরাল অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়, যা আসলে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তিনি বলেন, যেসব অঞ্চলে সংক্রমণ অনেক বেশি, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আশা মানুষের সংখ্যা বেশি তাদের এসব পরীক্ষা করা হয়। যাদের সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কারণে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হয় তাদের ওই সময়ের মধ্যে কয়েকবার অ্যান্টিজেন টেস্ট করে দেখা হয়।

যেখানে সংক্রমণ অনেক বেশি সেখানে উপসর্গ নাও থাকতে পারে এরকম 'অ্যাসিম্পটমিক' ব্যক্তিদের করানো হয় অ্যান্টিজেন টেস্ট। এছাড়া স্থলবন্দর হয়ে যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন তাদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এরপরই ইমিগ্রেশন পার করে আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ভাইরলজিস্ট ডা. সাবেরা গুলনাহার বলেন, এই পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল দিতে পারে। ২০ মিনিটের মধ্যে এর ফল পাওয়া যায়। দ্রুত শনাক্ত মানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়। এছাড়া খরচ খুব কম। পিসিআর টেস্টে সময় লাগে কম পক্ষে ছয় ঘণ্টা।

অন্যদিকে অ্যান্টিজেন টেস্টে তেমন কোন ব্যবস্থা লাগে না। একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে অল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে, আঙুলের আকৃতির একটি কিট ও দরকারি সল্যুশন সহ একটি টেবিলে থাকলেই হয়।

গাড়ির ভেতরেও যেকোনো জায়গায় বসেই করা যায়। কোন ল্যাব দরকার হয় না। এর জন্য দরকারি কিট বহনযোগ্য। চাইলে কোনো ব্যক্তি নিজেও এই পরীক্ষা করতে পারেন। যুক্তরাজ্য সহ কিছু দেশে ইতিমধ্যেই ঘরে বেশি নিজেই পরীক্ষা করার বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এএসএম আলমগীর বলেন, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হলে অ্যান্টিজেন ছাড়া উপায় নেই। এই পরীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা ৮০ শতাংশ বলে জানান এই স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরো খবর