বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৪৭

সবুজ পাতার খামে গোলাপি রঙের চিঠি

রাজশাহী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২৩  

আট গ্রামের মাঝে একটি বিল। নাম তার ‘ঘোড়ার বিল’। বিলটি ঘিরেই গ্রামগুলোর অবস্থান। তাই বিলটিতে পানি জমে থাকে সারাবছর। সেই পানিতে জন্মেছে অসংখ্য পদ্মফুল। বড় বড় সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দেওয়া হালকা গোলাপি রঙয়ের পদ্মফুলগুলো যে কারো মন কেড়ে নেয়। অনেকটাই প্রিয় মানুষের কাছে সবুজ পাতার খামে গোলাপি রঙের চিঠির মতো।

রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চল। এই বরেন্দ্র ভূমির বেশ কিছু সৌন্দর্যের মধ্যে একটি হলো দিগন্তজুড়ে বিল আর বিল। বিলে ছোট ছোট আইলগুলো কোথাও উঁচু থেকে নিচুতে নেমেছে, আবার নিচু থেকে দেখলে মনে হবে উঁচুতে উঠেছে। দেখতে অনেকটা সিঁড়ির মতো। এমন বৈচিত্র্যময় বরেন্দ্রের পবা ও গোদাগাড়ী সীমানায় অবস্থিত ঘোড়ার বিলটিতে ফুটেছে পদ্মফুল। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকেও চোখে পড়বে পদ্মফুল ও বড় বড় পাতা। 

সরেজমিনে ঘোড়ার বিলে গিয়ে দেখা মেলে এই অপরূপ সৌন্দর্যের। ফুটে আছে গাঢ় সবুজ পাতার মাঝে হালকা গোলাপি রঙয়ের পদ্মফুল। আর নতুন করে মাথা তোলা কুঁড়িগুলোর মিলন মেলা। এরই মাঝে আনন্দে বিচরণ করছে পানকৌড়ি আর ডাহুকের দল। একই সঙ্গে ফুলে ফুলে খেলা করছে প্রজাপতি আর ভ্রমরের দল। বিলে ফুটে থাকা হাজারো পদ্মফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য মানুষকে খুব সহজেই আকর্ষণ করে।dhakapost
ঘোড়ার বিলে পদ্মফুল, পাতা ও পদ্ম চাকা তুলতে এসেছে পবার নিমঘটু গ্রামের নিরঞ্জন হাঁসদা। নিরাঞ্জন হাঁসদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বিল পবার শেষ ও গোদাগাড়ীর শুরুতে। বিলের চারপাশে গহমাবোনা, লীলবোনা, খরচাকা, বহালাবোনা, কামিরপাড়া, কানাইডাঙ্গা, চাঁপাল, আলিমগঞ্জ গ্রাম। বেশ কয়েক বছর থেকে এখানে পদ্মফুল জন্মাচ্ছে। অন্য গ্রামের মানুষরা এই ফুল তুলতে আসে। আমরা পদ্ম ফুল ও পদ্ম চাকা খাই। এছাড়া পদ্ম পাতায় ভাত খাই।
বিলটিতে বেশ কয়েক বছর থেকে জন্মাচ্ছে পদ্ম ফুল। শাপলা, শালুক, পদ্মের মত উদ্ভিদ নিয়ে জমে উঠেছে অপার সৌন্দর্যের লীলাখেলা। আর এই খেলায় অংশ নিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, অতিথি পাখি ও সরীসৃপ প্রাণিও। তবে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বর্ষাকালে এই বিলে সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় পদ্মফুলগুলো। জেলা আশেপাশে উপজেলা থেকে ফুটে থাকা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে দর্শনার্থীরা।

ডাংপাড়ার কৃষক মাইনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বিলে ধানের আবাদ হতো। কয়েক বছর ধরে ডুবে আছে। তাই জমির মালিকরা ধান লাগাননি। আগে শাপলা ফুল হতো। কয়েক বছর ধরে এখানে পদ্ম ফুল হচ্ছে। দূরের মানুষ আসে পদ্ম তুলতে। অনেকেই আসে ছুবি তুলতে।dhakapost

পদ্ম ফুল তুলতে আসা সাইলা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মফুলগুলো দেখতে অনেক ভালো লাগে। পদ্ম চাকাগুলো খেতেও ভালো লাগে। এই ফুলগুলো তুলে নিয়ে বোতলের পানিতে রাখলে অনেক দিন ভালো থাকে। এই বিলে অনেক সরীসৃপ প্রাণি রয়েছে। এক হাঁটুর বেশি পানিতে নামতে হবে। না হলে পদ্ম ফুল তোলা যাবে না।

পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয় পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সির রাজু আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাড়ে ৩০০ একর জমির বেশি নিয়ে ঘোড়ার বিল। পুরো বিলে পানি জমে মাঝখানে। সেই পানিতে জমেছে পদ্মফুল। অনেকেই আসে পদ্মাফুল দেখতে। অনেকেই পদ্ম ফুল তুলে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, বিলগুলো উঁচু-নিচু। অনেকটাই সিড়ির মতোন। উপর থেকে নিচে বা নিচ থেকে উপরে দেখতে বেশ চমৎকার। এমন দৃশ্য শুধু মাত্র বরেন্দ্র অঞ্চলেই চোখে পড়বে। পদ্ম বিলের চারপাশে আট গ্রাম। আর বিলে সারা বছর ধানের চাষ করে কৃষকরা। বর্ষার সময় দেখতে চমৎকার লাগে। রাজশাহীতে আর একটিও এমন বিশাল পদ্মা বিল নেই।

পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজভী আল হাসান মুঞ্জিল বলেন, এখানে যে পদ্মফুল দেখা যাবে তা কয়েক বছর আগেও চিন্তার বাইরে ছিল। বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানি না। প্রকৃতির আশীর্বাদে এই বিলে পদ্মফুল হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর