বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৩৬৬

শরীয়তপুরে ডাক্তার মিতু আক্তারের ভুল অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যু

নুরুজ্জামান শেখ,শরীয়তপুর প্রতিনিধি।

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২০  

শরীয়তপুরের প্রাণকেন্দ্র সদর হাসপাতাল সংলগ্ন একটি বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিকে সদর হাসপাতালের সরকারি ডাক্তার মিতু আক্তার এর ভুল অপারেশনের কারণে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৮ অক্টোবর ২০২০রবিবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মোঃ সবুজ ফকির এর স্ত্রী খাদিজা আক্তার (২৫) এর প্রসব ব্যাথা ওঠে। ওই মুহূর্তে খাদিজা আক্তার এর স্বামী সবুজ ফকির তার স্ত্রীকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মিতু আক্তার প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেন এবং সিজারের জন্য তার অধীনে ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন। ডাক্তার মিতুর কথায় স্বামী সবুজ ফকির তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার ক্লিনিকে ভর্তি করান। একইদিন বেলা ২ঃ১০ মিনিটের সময় ডাক্তার মিতু আক্তার, সদর হাসপাতালের ডাক্তার মফিজুর রহমান স্বপন এবং ডাক্তার মামুন এই তিনজন মিলে খাদিজা আক্তার কে অপারেশন করেন। অপারেশনের কিছুক্ষণ পরে রোগীর অবস্থা অবনতি হলে ডাক্তার মফিজুর রহমান স্বপন ঢাকা মেডিকেলে দ্রুত পাঠানোর পরামর্শ দেন। তাৎক্ষণিকভাবে প্রসূতি খাদিজা আক্তার কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। গত ১৯ অক্টোবর ২০২০ ভোর ছয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রসূতি খাদিজা আক্তার মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, রোগীর ভুল অপারেশনের কারণে তিনটি রগ কাটা যায় ,যার ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এই রক্তক্ষরণের কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহমদ শিকদারের ছোট পুত্র মামুন শিকদারের স্ত্রী ডাক্তার মিতু আক্তার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। ডাক্তার মিতু আক্তার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই তার দূর্নীতি-অনিয়ম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ডাক্তার মিতু আক্তার মেডিকেল অফিসার হলেও তিনি পিজিটি (গাইনি ও/অবস) সিএমইউ, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে শরীয়তপুর সদরের বিভিন্ন ক্লিনিকে গর্ভবতী মহিলাদের চিকিৎসা করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডাক্তার মিতু আক্তার প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নয়। তিনি বিভিন্ন ক্লিনিকে নেমপ্লেট ব্যবহার করে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে।

গোপন সূত্রে জানা গেছে ডাক্তার মিতু আক্তার সদরের বিভিন্ন ক্লিনিকের মালিক এবং দালালদের সাথে হাত মিলিয়ে দূর্নীতি অনিয়ম করে আসছে। এছাড়াও ডাক্তার মিতু আক্তার সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতি ও  সিজারের রোগীদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে সদর হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও অপারেশনের সুব্যবস্থা না থাকার কারণ দেখিয়ে তার নিজস্ব কন্টাক করা ক্লিনিকে রোগীদেরকে পাঠিয়ে দেন এবং পরবর্তীতে ক্লিনিকে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে অপারেশন করান।

মৃত খাদিজা আক্তার এর স্বামী সবুজ ফকির গণমাধ্যমকে বলেন, ডাক্তার মিতু আক্তারের ভুল অপারেশনে তিনটি রগ কাটা গেছে, আর এই রক কাটার কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, মূলত এই কারণে প্রসূতির মৃত্যু হয়, একথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার।

ডাক্তার মিতু আক্তার এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলে্‌ প্রসূতি খাদিজা আক্তার আমার আন্ডারে ক্লিনিক ভর্তি হয়েছিল। আমি এই রোগীর অপারেশন করি এবং অপারেশনের সময় আমার সাথে ছিল সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার মফিজুর রহমান স্বপন এবং ডাক্তার মামুন। গাইনি ডাক্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমি গাইনি ডাক্তার।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মুনির আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, ডাক্তার মিতু আক্তার সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। সে তো গাইনি ডাক্তার নয় তবে প্রসূতি ও গাইনি এ বিষয়ে যদি ছয় মাসের প্রশিক্ষণ থাকে তাহলে অপারেশন করতে পারেন, তাছাড়া নয়।

মৃত খাদিজা আক্তার (২৫) বালাখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন  শিক্ষিকা ছিলেন। খাদিজা আক্তার সদ্য নবজাতক শিশুসহ তিন বাচ্চা এই পৃথিবীতে রেখে গেছেন।

এই বিভাগের আরো খবর