বুধবার   ৩০ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ১৫ ১৪৩১   ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৫০

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর ১৪ নিরাপত্তাকর্মী লাপাত্তা

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২১  

রোহিঙ্গাদের শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনই পলাতক রয়েছে। আছে শুধু নুরুল আলম। পলাতক ১৪ জনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। যে কারণে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তাদের কোনো খোঁজখবর নেই বলে জানান তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা নুরুল আলম।

তিনি জানান, মুহিবুল্লাহকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ১৫ জনের একটি টিম ছিল। তবে তারা সবাই রোহিঙ্গা। নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি জড়িড ছিল মুহিবুল্লাহর সংগঠনের সঙ্গেও। নিজেদের নেতাকে সুরক্ষিত রাখতে তারা ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিত। কিন্তু মুহিবুল্লাহকে যেদিন খুন করা হয়েছে সেদিন নিজে ছাড়া (নুরুল আলম) বাকি কোনো নিরাপত্তারক্ষী অফিসে আসেনি বলে দাবি করেন নুরুল আলম।

নুরুল আলমের দাবি, ঘটনার আগে তাদের কাউকে দেখা যায়নি। অথচ অন্য সময় সবাই উপস্থিত থাকত। তাছাড়া ঘটনার পর থেকে তাদের খোঁজও নেই। সেই ১৪ নিরাপত্তারক্ষী হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তবে হঠাৎ লাপাত্তা হওয়ার কারণে তাদের সন্দেহের চোখে দেখছেন তিনিও।

নুরুল আলমের মতে, মুহিবুল্লাহকে হত্যার পর থেকে তাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে হত্যাকারীরা। তবে হুমকিদাতারা কারা সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে তিনি কিছুই বলতে পারছেন না। 

সরেজমিন জানা যায়, মুহিবুল্লাহর বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া তার সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের কার্যালয়। যে কার্যালয়ে বসে বাড়ি ফেরার অর্থাৎ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের স্বপ্ন দেখতেন এবং দেখাতেন তিনি। সেই কার্যালয়ে এখন শুধুই মুহিবুল্লাহর রক্তের দাগ। স্বগোত্রের লোকজনই কেড়ে নিয়েছে মুহিবুল্লাহর প্রাণ, এমন অভিযোগ ও দাবি স্থানীয় সাধারণ রোহিঙ্গাদের। এছাড়া ঘটনার পর থেকে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে ঘিরে রেখেছে তার বাড়ি এবং অফিস। মামলার তদন্তে নিয়োজিত সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন না নিহত মুহিবুল্লাহর পরিবার ও নিরাপত্তাকর্মী নুরুল আলম।

মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে নিরাপত্তাকর্মী নুরুল আলম বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মোরশেদসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় এসেছে। কারণ ওই দিন মোরশেদ নামাজের পর থেকেই মুহিবুল্লাহর কার্যালয়ের সামনে ছিলেন। অফিসে প্রবেশের সময় মোরশেদের সঙ্গে মুহিবুল্লাহ কথাও বলেছেন। অল্প সময় পর সেই মোরশেদকেই হত্যাকারীর ভূমিকায় দেখেন তিনি। মোরশেদ আরসা নামে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য বলে দাবি করেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২৯ সেপ্টেম্বর এশার নামাজের পর আশপাশের রোহিঙ্গা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন মুহিবুল্লাহ। বৈঠকে প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলছিলেন। এরইমধ্যে হঠাৎ সন্ত্রাসীরা এসে তাকে খুন করে চলে যায়। এ সময় সেখানে আগে থেকে উপস্থিত থাকা লোকজনও সন্ত্রাসীদের দেখে কোনো বাধা না দিয়ে সরে যান। তবে ওই সময় নিরাপত্তাকর্মী নুরুল আলম অফিসের পশ্চিম পাশের সরু পথের পর্দা সরিয়ে দিতে গিয়েছিলেন বলে নুরুল আলমসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে আঁতাত করে মুহিবুল্লাহকে খুন করেছে আরসা তথা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। যে কারণে ঘটনার দিন একসঙ্গে ১৪ জন নিরাপত্তাকর্মী রহস্যজনকভাবে অনুপস্থিত ছিল। তবে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ও দায় এড়াতে নির্দোষ দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে আরসা। এদিকে এ বার্তাকে সাধারণ রোহিঙ্গারা আরসার সাজানো নাটক বলে দাবি করছে।

কক্সাবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, অনেক বিষয় মাথায় রেখে তারা তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন। সেখানে কোনোকিছুই বাদ পড়ার সুযোগ নেই। যারা হত্যা করেছে তাদের মাস্টারমাইন্ডদেরও খুঁজে বের করার কথা বলছেন পুলিশ সুপার। তবে ঘটনার পর মুহিবুল্লার সংগঠনের কোনো নেতাকর্মীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার বিষয়টি তাদের কেউ জানায়নি বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাইমুল হক যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার শুরু থেকেই নিহত মুহিবুল্লাহর সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকা লোকজনদের হত্যাকাণ্ডের সন্দেহের তালিকায় রেখেছি। কারণ যেখানে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে সেখানে বাহির থেকে গিয়ে ঘটানোর সুযোগ খুবই কম। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তার কিছু কাছের লোকজনের সন্ধানে কাজ করছে এপিবিএন। খুনিদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ টিম।   

এদিকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিজের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের অফিসে খুন হন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ। সেই ঘটনায় তার ভাই হাবিবুল্লাহর দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর