বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১   ০৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৪৭

রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গে হাসিনার প্রেতাত্মারা বসে আছে :পরওয়ার

সোহেল আহমেদ সিনিয়র রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

দেশ-জনগণের স্বার্থে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে: গোলাম পরওয়ারবক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, একটি গতিশীল বিপ্লবী সংগঠনের নাম হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এই সংগঠনের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হচ্ছে বাংলাদেশে কোনো দুর্নীতি থাকবে না, সুদ-ঘুষ থাকবে না, বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হবে না।

জামায়াতে ইসলামীর এসব কর্মসূচির সাথে বর্তমানে দেশের মানুষ একমত হয়েছে।  

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আয়োজনে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ড সভাপতি-সেক্রেটারি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে মূলত আমরা আজ ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। ২০২৪ সালে এসে তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। স্মরণে রাখতে হবে ডামি সরকারের ডামি প্রধানমন্ত্রী খুনি হাসিনাকে উৎখাত করে আমরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। খুনি হাসিনা তার মতের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করলেই গুলি চালিয়েছে বাংলাদেশের জনগণের বুকে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৫ বছর খুন, গুম, হামলা-মামলা, কারাগারে বন্দি এমনকি নিজের তৈরি আয়নাঘরেও বন্দি করে রেখেছিল জামায়াতের অসংখ্য নেতারাসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। হাসিনার অপশাসনের নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি শিশু মাসুম বাচ্চা থেকে সাধারণ জনগণের কেউ। এমনকি সাংবাদিকদের খুন, গুম, হামলা-মামলা দিয়ে বন্দি রেখেছে বছরের পর বছর। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। তাদের অপকর্মে দিনের পর দিন মানুষ প্রতিবাদী আর বিদ্রোহী হয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছে। ছাত্র-জনতা বিপ্লবে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেও বাধ্য হয়েছে। তবে হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার প্রেত্মারা বসে আছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গে-অঙ্গে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটা যৌক্তিক সময় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার আওয়ামী লীগের প্রেত্মাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি। অবশ্যই ঘাপটি মেরে বসে থাকা এরা, সুযোগ বুঝে বিপ্লব নস্যাৎ করার চেষ্টা করবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সতর্ক এবং কঠোর হতে হবে। যদি এই বিপ্লব নষ্ট হয়ে যায়, তবে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। শহীদদের সাথে চরম বেঈমানি করা হবে।  

তিনি জামায়াতের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দ্বীনকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে সব শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। এজন্য দেশ ও জনগণের স্বার্থে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আব্দুর রব।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা. দেলোয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নানসহ প্রমুখ নেতারা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ দাম্ভিকতার সাথে বলতো তাদের সরানো যাবে না, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না। শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে আছে ততদিন কেউ ক্ষমতা নিতে পারবে না। ক্ষমতা শেখ হাসিনার পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে গেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা জনরোষানলে পড়ে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অনেক নেতাই সাথে যেতে চেয়েছে কিন্তু হাসিনা কোন নেতাকে না নিয়ে শুধু বোনকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ছাত্ররা রাষ্ট্রের কাছে ন্যায্য অধিকার চেয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ছাত্রদের পুরো জাতিকে রাজাকার বানিয়ে দিয়েছে। ছাত্রলীগ ও পুলিশ কে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা ছাত্র-জনতাকে পশুর মতো গুলি করে মেরেছে। বিগত ১৫ বছর বিরোধী দলের ওপর যেভাবে দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে একইভাবে ছাত্র-জনতার ওপরও নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়েছে। এতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো দেশ। ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে ক্ষমতা কেউ টিকেয়ে থাকতে পারেনি, শেখ হাসিনাও পারেনি।

রফিকুল ইসলাম খান আরো বলেন, ডামি প্রধানমন্ত্রী খুনি হাসিনা খুব দাম্ভিকতার সাথে বলেছে, তার বাসার কাজের লোক ৪০০ কোটি টাকার মালিক। তাহলে তিনি কত হাজার কোটি টাকা লুট করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

খুনি হাসিনার লুটপাট ও ছাত্র হত্যার বিচার করে হাজার বছরের সাজা দিতে হবে। অনতিবিলম্বে খুনি হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার আওতায় আনার দাবি জানান মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।  

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত ইকামাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। এই শাখা সবসময়ে দেশের জনগণের প্রয়োজনে সব আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বপ্রথম অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আগামীতেও জাতির প্রয়োজনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করবে সেই প্রত্যাশা করি।

এই বিভাগের আরো খবর