রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৬ ১৪৩২   ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৭৮

বিদ্যুৎ-জ্বালানি থেকেও বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে বিদেশিরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক    

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২১  

বিদেশিদের শেয়ার ধারণ নিয়ে কোম্পানিগুলোর সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এক বছরে নয়টি কোম্পনি থেকে বিদেশিরা বিনিয়োগের একটি অংশ তুলে নিয়েছেন। এ সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর যে শেয়ার বিক্রি করেছেন বর্তমান বাজারদরে তার মূল্য একশ কোটি টাকার বেশি। বিপরীতে একটি কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। বাকি চার কোম্পানিতে এ চিত্র পরিবর্তন হয়নি।

বর্তমানে বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি, যমুনা অয়েল, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, লুব-রেফ বাংলাদেশ, এমজেএল বাংলাদেশ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড, সামিট পাওয়ার, তিতাস গ্যাস ও ইউনাইটেড পাওয়ার।

এর মধ্যে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি, যমুনা অয়েল, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, এমজেএল বাংলাদেশ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড, তিতাস গ্যাস ও ইউনাইটেড পাওয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ কমেছে। বিপরীতে সিভিও পেট্রোকেমিক্যালে বেড়েছে বিদেশিদের বিনিয়োগ।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদেশিরা সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে তিতাস গ্যাস থেকে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশিরা কোম্পানিটির ১ কোটি ২১ লাখ ৬৭ হাজার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমান বাজার দরে বিদেশিদের বিক্রি করে দেওয়া এই শেয়ারের মূল্য ৫১ কোটি ৮৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এই শেয়ার বিক্রির ফলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদেশিদের কাছে। যা গত বছরের জুন শেষে ছিল ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।


বিদেশিদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যমুনা অয়েল। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির ১০ লাখ ৯৩ হাজার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন বিদেশিরা। বর্তমান বাজারদরে বিদেশিদের বিক্রি করে দেওয়া শেয়ারের মূল্য ১৯ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

খুলনা পাওয়ার কোম্পানি থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন বিদেশিরা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির ২০ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছেন বিদেশিরা। বর্তমান বাজারদরে এই শেয়ারের মূল্য ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

এছাড়া মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ৩ লাখ ৩৮ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছেন বিদেশিরা। যার বাজারমূল্য ৭ কোটি ৯৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা। বিদেশিরা পদ্মা অয়েলের ৩ লাখ ১৪ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৭ কোটি ২৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদেশিরা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির ৫ লাখ ১৬ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য ২ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। বিদেশিরা এমজেএল বাংলাদেশের শেয়ার বিক্রি করেছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৩ কোটি ৫২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ৬ লাখ ৪১ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছেন বিদেশিরা, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪ কোটি ২৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ইউনাইটেড পাওয়ারের ৫৭ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছেন বিদেশিরা, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

অন্যদিকে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের ২৭ হাজার শেয়ার কিনেছেন বিদেশিরা। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা। বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়লেও গত বছরের জুলাই থেকে এই কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে শিগগির আবার উৎপাদন শুরু হবে বলে দাবি করেছে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগের চিত্র-

কোম্পানির নাম

বিদেশিদের শেয়ার ধারন

সেপ্টেম্বর-২০২১

আগস্ট – ২০২১

জুন-

২০২০

 

অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন

.০৬ শতাংশ

.০৬ শতাংশ

 

বাংলাদেশ ওয়াল্ডিং

.৭২ শতাংশ

.৭২ শতাংশ

.৭২ শতাংশ

সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল

.৩৬ শতাংশ

.২০ শতাংশ

.২৫ শতাংশ

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি

.০৬ শতাংশ

.০৬ শতাংশ

.১৯ শতাংশ

যমুনা ওয়েল

.৪৭ শতাংশ

.৪৭ শতাংশ

১.৪৬ শতাংশ

খুলনা পাওয়ার কোম্পানি

.১৮ শতাংশ

.২১ শতাংশ

.৭০ শতাংশ

লুব-রেফ বাংলাদেশ

.০৩ শতাংশ

.০৩ শতাংশ

 

এমজেএল বাংলাদেশ

.১৫ শতাংশ

.১৫ শতাংশ

.২৬ শতাংশ

মেঘনা পেট্রোলিয়াম

.১৯ শতাংশ

.২৪ শতাংশ

.৫৬ শতাংশ

পদ্মা অয়েল

.৯৭ শতাংশ

.৮৭ শতাংশ

১.২৯ শতাংশ

পাওয়ার গ্রীড

.০৬ শতাংশ

.০৬ শতাংশ

.১৫ শতাংশ

সামিট পাওয়ার

৩.৬৫ শতাংশ

৩.৬৫ শতাংশ

৩.৬৫ শতাংশ

তিতাস গ্যাস

.৫৪ শতাংশ

.৫৭ শতাংশ

১.৭৭ শতাংশ

ইউনাইটেড পাওয়ার

.০৩ শতাংশ

.০৩ শতাংশ

.০৪ শতাংশ

এ বিষয়ে সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের কোম্পানি সচিব খাজা মইন উদ্দিন হুসাইন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা কোম্পানি আবার চালু করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীসহ সবাই আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করাই আমরা নতুন করে পারমিশন পেয়েছি। এখন প্ল্যান্ট চালুর বিষয়ে কাজ চলছে। আমরা এটা বলতে পারি আমাদের প্ল্যান্ট চালু হবে, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। মার্কেটে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই।

এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন, রোড শো করেছেন। ধীরে ধীরে জ্বালানিখাতে বিদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে বলে শুনেছি। তবে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।

বিদেশিদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমার ধারণা বিদেশিরা লাভ পাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। এটাকে আমি সমস্যা হিসেবে দেখি না। কারণ লাভ পেলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেবেন এটাই স্বাভাবিক।

পাওয়ার গ্রিডের কোম্পানি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশিরা কেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের কোম্পানিতে কম বিনিয়োগ করছেন বা কী কারণে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন এটা আমরা বলতে পারবো না। বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবেন, সেটা তাদের বিষয়।

এই বিভাগের আরো খবর