বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩১৫১

বরিশালের শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ (ছবিসহ)

এস,এম শাহিন:

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯  

 

বরিশালে দুই লক্ষাধিক কোমলমতি শিশু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা গ্রহন করছে। বছরের পর বছর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে জেলার দুই শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ কারণে প্রায়ই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের প্লাস্টার এবং ঢালাই খসে পড়ে শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। যেসব স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করা একেবারেই সম্ভব না, সেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চলছে খোলা আকাশের নিচে। বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বারবার জানানো হলেও ভবনগুলো সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণে কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে না। জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ২২নং চর দাড়িয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির বয়স ৩৫ বছরের বেশি। সরেজমিনে দেখা গেছে, চার কক্ষের জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের পিলার থেকে ঢালাই খসে রড খুলে পড়ার উপক্রম। বিদ্যালয়ের ছাদ যে কোনও সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ছাদ থেকে প্লাস্টার ও ঢালাইয়ের খন্ড শিক্ষার্থীদের শরীরে পড়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। যে কোনও সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তবু চলছে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ২৬৩ জন শিক্ষার্থীর লেখাপড়া।

 

শিক্ষকরা জানান, শিশু শিক্ষার্থী ধরে রাখতে বিদ্যালয় ভবনটির সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট একাধিক দফতরে বারবার আবেদন নিবেদন করেও কোনও সাড়া মেলেনি।  একই উপজেলার ৪নং দুধল ইউনিয়নের ৩৮নং পিলখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কক্ষে ছাদের প্লাস্টার খসে পড়েছে। সেসময় অল্পের জন্য রক্ষা পান শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলেন, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ভবনটি নির্মাণ করা হলেও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের সংস্কারের বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের বারবার অবহিত করা হলেও সাড়া মেলেনি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ২৮০টি। এর মধ্যে ১০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ৮ টি বিদ্যালয়ে ভবনের অবস্থা একেবারেই বেহাল। এগুলো হলো কাঁকরধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম জিরাইল আদর্শ (নব) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম চরাদী সকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ভরপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দরকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামপুর কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজাপুর সরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চর সমাদি বালিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর পরেও ঝুঁকি নিয়ে চালাতে হয় পাঠদান। উপজেলার হেলিপ্যাড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা আক্তারের অভিভাবক খাদিজা বেগম অভিযোগ করেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ফাটল ধরছে, যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতেও এখন ভয় করে। একাধিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বলে, বার বার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে পাঠিয়েও কাজ হচ্ছে না। দিন দিন ভবনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের ভবন নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসের সভায় আলোচনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অবগত। শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে যেসব বিদ্যালয়ের ভবন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোতে পাঠদান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায় জানান, বাকেরগঞ্জ উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের ভবনের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি।

ইতোমধ্যে কয়েকটি বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ শুরু হবে। জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের ২নং দক্ষিণ শিহিপাশা (দাসেরহাট) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও খারাপ। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, ১৯৪০ খিষ্টাব্দে তিন কক্ষের টিনশেড বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। পরে দুটি কক্ষে টিন ও একটি কক্ষে ছাদ ঢালাই দেয়া হয়। বর্তমানে টিনে মরিচা পড়ে প্রায় শেষ, আর একটি কক্ষের ছাদ ভেঙে একাকার। ৭৯ বছরের পুরাতন ভবনের দেয়াল ধসে পড়ার পরও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনটিতেই চলছে শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। তিনি আরও জানান, বর্ষায় ওই ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারেনি। আগামী বর্ষায় ভবনটি সম্পূর্ণ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চলছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে সকালে প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম এবং দুপুরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩৩ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। প্রায় একই অবস্থা উপজেলার দক্ষিণ শিহিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল হক তালুকদার জানান, উত্তর শিহিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুর্ব সুজনকাঠী, সেরাল, পূর্বসুজনকাঠী আইডিয়াল, পশ্চিম সুজনকাঠী, নাঘিরপাড়, দাসপট্টি, রাংতা, পূর্ব আস্কর, বাগধা, পয়সা, পশ্চিম আমবৌলা, ফেনাবাড়ি, চক্রবাড়ি ও তালতারমাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৫টি বিদ্যালয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৩টি বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণসহ মোট ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিদ্যালয়গুলো চিহ্নিত করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা ও উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে জেলা দফতরকে অবহিত করা হয়েছে। একাধিক অভিভাবক জানান, ভবন ধসে যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় অনেকেই নিজ সন্তানদের ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। একাধিক শিক্ষক জানান, যেদিন ছুটির সময় পার হওয়ার পরও ক্লাস চলে, সেদিন অভিভাবকরা ফোন করে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানতে চান। সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে সবাই এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। আবার শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও প্রাণহানির শঙ্কার মধ্যে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন, যা শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করছে। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম ফারুক জানান, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তথ্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেলে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

Image result for বরিশালের শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ

Image result for বরিশালের শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ

Related image

Image result for বরিশালের শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ

 

 

এই বিভাগের আরো খবর