রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   ভাদ্র ২৩ ১৪৩১   ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৩৮

বন্ধু তৈরিতে যাদের গ্রহণ করবো ও বর্জন করবো

মোঃ সাইফুল্লাহ

প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২৩  

হনুষ সামাজিক জীব। আর মানুষ হিসেবে আমাদের জীবনে বন্ধু থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই বন্ধু হিসেবে আমরা কাকে গ্রহণ করছি সেই দিক অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, বন্ধুত্ব আপনাকে খারাপ অবস্থান থেকে অনেক ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। আবার, বন্ধুত্ব আপনাকে ভালো অবস্থান থেকে অনেক খারাপ অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। তাই আমরা যখন বন্ধু নির্বাচন করবো, অবশ্যই যাচাই করে সৎ ও ভালো বন্ধু নির্বাচন করবো। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ তার বন্ধুর রীতি নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।(সুনান আবু দাউদ: ৪৯৩৩, আত-তিরমিযী:২৩৭৮)

 বন্ধুবান্ধব ও যাদের সাথে চলাফেরা করা হয় তারা যদি অসৎ হয় এবং নৈতিকতা সম্পন্ন না হয়, তাহলে ধীরে ধীরে ভালো লোকটি ও খারাপের দিকে চলে যায়। তাই যখন আমরা চলাফেরা করবো কিংবা বন্ধু নির্বাচন করব তখন অবশ্যই আমরা ভালো ও নৈতিকতা সম্পন্ন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করব।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পিতৃবর্গ ও ভাতৃবৃন্দ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে পছন্দ করে, তবে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই যালিম।(সূরা তাওবা:২৩)

যাদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে: আমরা যদি আমাদের জীবনকে সফলতার ধারপ্রান্তে নিতে চাই এবং সম্মানিত হতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে নৈতিকতা সম্পন্ন ও ভালো বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করতে হবে। যে আমাকে সব সময় উত্তম পরামর্শ দিবে, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ ও আল্লাহর দয়ার পথ দেখাবে, রাসুলের আদর্শকে জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলবে, সব সময় সৎ পথে থাকার আহ্বান করবে, অসৎ কাজ থেকে বেঁচে থাকার থাকার জন্য বলবে, নৈতিকতার দিকগুলো মেনে চলার জন্য বলবে, একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সবার সাথে সৎ ব্যবহার করার জন্য বলবে, সেই একমাত্র হতে পারে প্রকৃত বন্ধু। আল্লাহ তায়ালা বলেন: আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তারাই, যাদেরকে আল্লাহ্‌ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।(সূরা তাওবা-৭১)। ইমাম গাজ্জালী (রাহে:) বলেন: যার মধ্যে তিনটি গুণ পাওয়া যায়, তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে পারো। ১.জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যাক্তি। ২.চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়। ৩.নেককার ও পূর্ণবান ব্যাক্তি। 

যাদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে নাঃ যাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না তাদের সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদিক (রা:) বলেন: পাঁচ ব্যাক্তিকে কখনো বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না।১.মিথ্যাবাদী ২.নির্বোধ ৩.কৃপণ ৪.কাপুরুষ ৫.ফাসেক।

যে সকল বন্ধু সব সময় অনৈতিক মন-মানসিকতা নিয়ে চলাফেরা করে এবং কথা বলার সময় অনৈতিক কথা বলে, বিভিন্ন অশ্লীল ধরনের আচরণ করে, যার ভিতরে মনুষত্ববোধ নেই, মানুষদের পেছনে গীবত করে, সমালোচনা করে, একজনের কথা অন্য জনের নিকট বলে মানুষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে ওই সকল ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করা ঠিক নয়। ছেলেরা মেয়েদের সাথে এবং মেয়েরা ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করা হারাম। যখন একজন ছেলে ও মেয়ে বন্ধুত্ব করে, ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক যত গভীর হয়, শয়তান তত তাদের মধ্যে অশ্লীলতার চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সঙ্গে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয় (তিরমিজি)। তাই ছেলে ও মেয়েদের বন্ধুত্ব করা যাবে না। কাফেরদের সাথেও ঘণিষ্ঠ বন্ধুত্ব করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন: মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না (সূরা আল ইমরান, আয়াত: ২৮) শুধুমাত্র অন্য ধর্মালম্বীদের সাথে তখনই বন্ধুত্ব করা যাবে, যখন তাদেরকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করার জন্য দাওয়াতি কাজ করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ওই সকল ব্যাক্তিদের পরিত্যাগ করুন, যারা নিজেদের ধর্মকে খেলা ও কৌতুক রূপে গ্রহণ করেছে এবং প্রার্থীব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে (সূরা আল আনআম: ৭০)।

অতএব, আমরা বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক হব। যে কোন লোকের সাথেই বন্ধুত্ব করব না। যাদের মধ্যে উল্লেখিত ভালো গুনাগুন গুলো রয়েছে তাদের সাথে আমরা বন্ধুত্ব করব। আর যাদের মধ্যে ভালো গুনাগুন নেই, নৈতিকতা নেই, তাদের সাথে আমরা বন্ধুত্ব করব না। তবে ওই সকল অনৈতিকতা সম্পন্ন লোকদেরকে আমরা বুঝাবো। বুঝানোর মাধ্যমে তাদেরকে আমরা সঠিক পথে আনবো। তারা যদি সঠিক পথে আসে তখন আমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করব। যেমন একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে: সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। ভালো ও খারাপ বন্ধুর সবচেয়ে সুন্দর একটি উদাহরণ হল:  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সৎ ও অসৎ বন্ধুর উদাহরণ আতর বিক্রেতা ও কামারের ন্যায়। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে একটু আদর লাগিয়ে দিবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে আতর ক্রয় করবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে আতরের ঘ্রাণ পাবে। আর কামার হয়তো তোমার দেহ বা কাপড় পুড়িয়ে দেবে, নয়তো তার কাছ থেকে খারাপ গন্ধ পাবে ।(বুখারী:২১০১, মুসলিম:২৬২৮)। আমরা উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ভালো ও সৎ বন্ধুদের গ্রহণ করব এবং যারা অসৎ পথে রয়েছে তাদেরকে আমরা সৎপথে নিয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

এই বিভাগের আরো খবর