বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪২০৩

পুরান ঢাকার সেরা পাঁচ বিরিয়ানির লিস্ট

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০১৯  

 

পুরান ঢাকার প্রতিটি পরতে পরতে লেগে আছে ইতিহাস-ঐতিহ্যের চিহ্ন। স্থাপত্য, সংস্কৃতির সঙ্গে খাবারেরও রয়েছে আলাদা সুনাম। এই জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে গেছে দেশের গণ্ডিও। পুরান ঢাকার পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী খাবারের বিশাল সম্ভার। আর খাবারের কথা বললেই প্রথমে আসে বিরিয়ানির নাম। না খেলেই নয়, পুরান ঢাকার এমন পাঁচটি বিরিয়ানির খোঁজ রইলো এই আয়োজনে-

ঝুনুর মোরগ পোলাও

দেশি মোরগ দিয়ে রান্না হয় ঝুনুর পোলাও। হাফ প্লেট মোরগ পোলাওয়ের দাম ১২০ টাকা। এই পরিবেশনায় থাকে এক টুকরো মাংস, একটা ডিম, কিছু গিলা-কলিজা-মাথা আর একটা আলাদা ছোট প্লেটে পেঁয়াজ, লেবু, মরিচের সালাদ। ব্যস! হাত ডুবিয়ে রসনা পরিতৃপ্ত করতে কতক্ষণ?

ঝুনুর বিরিয়ানীর জন্ম ১৯৭০ সালে নুর মোহাম্মদের হাত ধরে। ওই বছর থেকে নারিন্দায় স্বল্প পরিসরে তিনি মোরগ পোলাও বিক্রি করতে শুরু করেন। তার মেয়ে ঝুনুর নামেই তিনি দোকানের নাম রাখেন। ১৯৮৮ সালে নূর মোহাম্মদ মারা গেলে তার ভাই এটির দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তার ভাইয়ের ছেলে দোকানটি পরিচালনা করছেন। নারিন্দা পুলিশ ফাড়িঁর পশ্চিম পাশে ঝুনুর পোলাও ঘরের অবস্থান। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে।

নান্না বিরিয়ানি

রসনাবিলাসী ঢাকার জনগোষ্ঠীর জন্য বিরিয়ানির অপর নাম হলো হাজী নান্না বিরিয়ানি। তারা মসজিদের সামনের এই দোকানটির মতো মোরগ পোলাও দেশের অন্য কোনো দোকান রান্না করতে পারে কি-না তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে! এই দোকানের মোরগ পোলাওয়ের স্বাদ ঢাকার আর যেকোনো মোরগ পোলাওয়ের চেয়ে আলাদা।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা নান্না মিয়া ১৯৬২-৬৩ সালের দিকে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। মানুষের কাছে তার বিরিয়ানি ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর ১৯৭৩-৭৪ সালে মৌলভীবাজারের বেচারাম দেউরিতে এর প্রধান শাখা খুলে ব্যবসাকে একটু বড় রূপ দেন এই ঝানু বাবুর্চি। হাজী নান্না মিয়ার মৃত্যুর পর আজ অব্দি তার পরিবারে সদস্যরা এ ব্যবসার হাল ধরে আছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রি হয় নান্নার মোরগ-পোলাও; দাম ১১০ টাকা।
 
হাজী বিরিয়ানি
 
পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডের ৭০ নম্বর দোকানটি ঐতিহ্যবাহী হাজীর বিরিয়ানি নামে কম-বেশি সবাই চেনে। এজন্য কর্তৃপক্ষ হয়তো দোকানে বড় কোনো সাইনবোর্ড দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি! তারপরও বেচাবিক্রির কমতি নেই।  ১৯৩৯ সালে বর্তমান দোকানটিতে মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বিরিয়ানির ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেই থেকে পথচলা। কালক্রমে বংশ পরম্পরায় হাজীর বিরিয়ানির মালিকানার দায়িত্বে আছেন মোহাম্মদ হোসেনের নাতি শাহেদ হোসা।

সকাল ৭ টা থেকে থেকে রাত ৯ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিক্রি হয় হাজীর বিরিয়ানি। তবে যত চাহিদাই থাকুক সকালে দুই ডেকচি ও বিকেলে তিন ডেকচির বেশি বিক্রি করা হয় না। হাজীর বিরিয়ানি প্রতি প্লেটের দাম ১৬০ টাকা।

শমসের আলীর ভুনা খিচুড়ি

হাজির বিরিয়ানি, নান্নার বিরিয়ানির মতো যুগের পরিবর্তনে খিচুড়িও নতুন নামে পরিচিত হয়েছে। শমশের আলীর ভুনা খিচুড়ি তার একটি। পুরান ঢাকার বংশালে অবস্থিত শমশের আলীর ভুনা খিচুড়ি। ভোজন রসিকদের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। পুরান ঢাকার জনপ্রিয় ও সুস্বাদু খিচুড়ির স্বাদ যদি কেউ নিতে চান তাহলে অবশ্যই একবার শমশের আলীর ভুনা খিচুড়ি রেস্তোরাঁ থেকে ঘুরে আসা উচিত।

ঝুম বর্ষা কিংবা হিমশীতল আবহাওয়ায় খিচুড়িই সেরা। তবে তা যদি হয় পুরান ঢাকার শমশের আলীর ভুনা খিচুড়ি আর সঙ্গে খাসির লেগ রোস্ট, তাহলে তো কথাই নেই! শমসের আলী প্রতিদিন নিজের হাতে এই খিচুড়ি রান্না করেন। সপ্তাহের সাতদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিক্রি হয় শমসের আলীর ভুনা খিচুড়ি।

হানিফের বিরিয়ানি

পুরান ঢাকার ৩০ নং কাজী আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত হানিফ বিরিয়ানি হাউস। যা গত তিন যুগ ধরে সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। প্রথম দিকে হাজী মোহাম্মদ হানিফ পরোটা, ভাজি, ভুনা মাংস, ডাল, সবজি, নেহারি ও চা বিক্রি করতেন। হানিফ বিরিয়ানির সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ভোজনবিলাসী ক্রেতাদের ভিড় জমতে থাকে সেই দোকানে। বর্তমানে আরো চারটি দোকান গড়ে তুলেছেন।

হানিফ বিরিয়ানির যাত্রা শুরু ১৯৭৫ সালে। হাজী মোহাম্মদ হানিফ এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। ২০০৫ সালে হাজী হানিফের মৃত্যুর পর তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম রনি ব্যবসার হাল ধরেন। মূলত কাচ্চি বিরিয়ানি হানিফের প্রধান আকর্ষণ। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।