শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১   ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৯০

পরকালে দরিদ্রদের যে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারি ২০২৩  

আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে বৈচিত্রময় করে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবী সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য তিনি কিছু মানুষকে ধনী বানিয়েছেন, আবার কিছু মানুষকে দরিদ্র। সমাজে উচ্চ ও নিম্নবিত্ত্বের এই পার্থক্য তৈরির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মূলত পরীক্ষা করতে চান কে সম্পদ পেয়ে রবের কৃতজ্ঞতা করে এবং কে দরিদ্রতায় ধৈর্য্য ধারণ করে।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য-স্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি কখনো আপনি দৃষ্টি প্রসারিত করবেন না। আপনার পালনকর্তার দেওয়া জীবিকাই উৎকৃষ্টতর ও স্থায়ী। (সুরা : তহা, আয়াত : ১৩১)

সবাইকে ধন-ঐশ্বর্যের মালিক বানানো সৃষ্টির রীতি-বিরুদ্ধ। কারণ এতে মানুষ অহংকার-ঔদ্ধত্যে সীমালঙ্ঘন করত এবং পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তার সব বান্দাকে জীবনোপকরণে প্রাচুর্য দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি তার ইচ্ছামতো যথাযথ পরিমাণে রিজিক অবতীর্ণ করেন। তিনি তার বান্দাদের ভালোভাবেই জানেন ও দেখেন।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২৭)

তাই যারা অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করে, সমাজের অভিজাত শ্রেণির কাছে অবহেলিত ও উপেক্ষিত থেকে ধৈর্যধারণ করে তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের পক্ষ থেকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে, মোটামুটি প্রয়োজন মতো রিজিক পায় এবং আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকে, সে সফল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৫৪)


পৃথিবীতে দারিদ্র্য আল্লাহর বড় নেয়ামত। আল্লাহভীরু গরিব ও দুর্বল-অসহায়দের কারণেই আল্লাহ পৃথিবীতে রিজিক নাজিল করেন। তাই তাদের অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। সাহাবি সাদ (রা.) দরিদ্র সাহাবিদের চেয়ে নিজেকে অভিজাত মনে করলে রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুর্বল লোকদের দোয়ার কারণেই তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক দেওয়া হয়।’ (বুখারি, মিশকাত, হাদিস : ৫২৩২)

দরিদ্রদের জন্য প্রিয়নবী (সা.) বিরাট সুসংবাদ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা হলো প্রত্যেকে দুর্বল, অসহায় ও অবহেলিত ব্যক্তি। সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে, তাহলে তা তিনি পূর্ণ করে দেন। (তিনি আরও বলেন) আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা হলো প্রত্যেকে রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় ও দাম্ভিক ব্যক্তি।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৫১০৬)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম এর বেশির ভাগ বাসিন্দা গরিব-মিসকিন।...।’ (মুসলিম ও মিশকাত, হাদিস : ৫২৩৪)

দুনিয়াবঞ্চিত গরিব অসহায়দের জন্য সুখের বিষয় হলো, ধনীদের আগেই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে মূল্যহীন থাকলেও আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনে সবার আগে জান্নাতে প্রবেশের মহাসম্মানে ভূষিত হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা তাদের ধনীদের চেয়ে ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।...’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৫৩)

এক হাদিসে হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এক দিন এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি দরিদ্রদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে একটি কথা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এসেছি। 

দরিদ্ররা বলে যে, সম্পদশালী ব্যক্তিরা তাদের ধন-দৌলতের দ্বারা আমাদের থেকে অনেক অগ্রগামী। কারণ তাদের ধন-দৌলত থাকার কারণে তারা হজ, দান প্রভৃতি ইবাদত করে আল্লাহর দরবারে অনেক উচ্চ মর্যাদা অর্জন করেছে। আর আমরা তো এসব থেকে একেবারেই বঞ্চিত।’

রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি দরিদ্রদের কাছে আমার এই উপদেশবাণী পৌঁছে দিও-যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে এই অবস্থার বিনিময়ে সওয়াবের আশা রাখো, তাহলে তোমাদের জন্য বিশেষ পুরস্কার রয়েছে, যাতে সম্পদশালীদের কোনো অংশ নেই। আর সেই পুরস্কার হচ্ছে-এক. জান্নাতে লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি অট্টালিকা হবে। একমাত্র দরিদ্র নবী, দরিদ্র শহিদ এবং দরিদ্র মুমিন ব্যতীত অন্য কেউ এতে প্রবেশ করতে পারবে না। দুই. দরিদ্র মুমিন ব্যক্তিরা, সম্পদশালী ব্যক্তিদের থেকে পাঁচশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’