সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৭ ১৪৩২   ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৬৭

নিমিশেই নদীগর্ভে বিলীন হলো বসতঘর "মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই হারুন মিয়ার

মো: আব্দুল্লাহ, জৈন্তাপুর ( সিলেট) প্রতিনিধি: 

প্রকাশিত: ৫ জুন ২০২৪  

ভিটায় এখন ঘর নাই। আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে নদী ভাঙ্গনের  কবলে পড়ে বন্যায়  সব শেষ করে গেছে। মাথাগোঁজার মতো নেই কোনো ঠাঁই। মুহূর্তেই আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল।  আমার  ঘর, ধান, চাল ও আসবাবপত্র সবকিছু পানিতে ভেসে গেছে। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবো! কি খাবো! কীভাবে আবার ঘর তুলবো! সেই চিন্তায় ঘুমাতে পারছি না। এমনই কথা বলেন বন্যার পানিতে  সর্বহারা মটর সাইকেল মেকানিক হারুন মিয়া। 

 

সিলেটের জৈন্তাপুরে আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বন্যায়  সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে  আশ্রয় নিয়ে আছেন  মটর সাইকেল মেকানিক হারুণ মিয়া (৩৮)। হারুণ মিয়া উপজেলার ১ নং লক্ষিপুর গ্রামের কালাই মিয়ার পুত্র।

 

এ ঘটনায় পাহাড়ী ঢলে নদীর পাড় ভেঙে সরাসরি হারুণ মিয়ার বসতভিটা সহ আসবাবপত্র সব নদীর স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বর্তমানে জৈন্তাপুরের বিভিন্ন  এলাকায় পানি কিছুটা কমলেও অনেকে নিজ নিজ বসত ভিটায় ফিরতে শুরু করেছে ।  

 

এদিকে বন্যায় বিপর্যস্ত বসতঘর "মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই,   পরিবারপরিজন নিয়ে  এখনও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকছেন হারুন মিয়া।

 

হারুণ মিয়ার স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার শিরিন কান্নাজড়িত কন্ঠ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন,গত বুধবার (২৯শে মে) সন্ধ্যা থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। এ সময় অতিবৃষ্টির কারণে তাদের বাড়ীর বিপরীতে রাংপানী নাপিতখাল নদীতে পানি বাড়তে থাকে। ওইদিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তার স্বামী হারুণ মিয়া সন্ধ্যায় ওয়ার্কশপ বন্ধ করে বাড়ীতে চলে আসেন। 

 

ওইরাতে সাড়ে নয় ঘটিকায় নদীর পানি হঠাৎ সড়কের উপর দিয়ে তাদের উঠানে প্রবেশ করতে শুরু করলে তারা ঘরে পানি উঠবে এই ভেবে আসবাবপত্র গোছানো শুরু করেন। কিন্তু মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে হঠাৎ মাটির রাস্তা ভেঙ্গে নদীর পানি দ্রূত গতিতে আঘাত হানে তাদের টিনের তৈরী ঘরে। মূহুর্তের ভিতরে সব লন্ডভন্ড করে ঘর সহ ঘরে থাকা সকল আসবাবপত্র ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় হারুণ ও তার স্ত্রী শিরিন রাস্তার পাশে পড়ে যাওয়া একটি গাছ ধরে নিরাপদে উঠে আসেন। শিরিন বলেন ঘরের ভিতরে একটি মোটরসাইকেল, ফ্রিজ সহ সবকিছু মূহুর্তের মধ্য ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সেই সাথে গরু বিক্রির নগত ৯০ হাজার ছিলো সেটাও উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি।আমরা এখন সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। এ পাশাপাশি হারুণের পিডিবি থেকে প্রাপ্ত একটি সেচ পাম্প ও মিটারও ভেসে গেছে, এখন অত্র এলাকায় সবদিকে  পানি কমছে সবাই বাড়িতে ফিরতেছে কিন্তু আমাদের আর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না আমরা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারতেছি না চিন্তায় চিন্তায় দিনপার করতেছি  সব হারিয়ে আমরা  নিঃস্ব আমাদের কি আর বাড়ি ফেরা হবে না, আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই,  তাই সকলের সহযোগিতা কামনা করছি  ।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম বলেন, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে নদী ভাঙ্গনে ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজ খবর নিতে আমার ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ড ইউ/পি সদস্য- সদস্যাদের কে নিয়ে যাচ্ছি তারপাশাপাশি   হারুণের বাড়ীতে যাই  দেখি তার বসতঘর একবারের ছিন্নভিন্ন কোন অংশই নেই, বসতঘরের ভিটা-মাটি ও ভেঙ্গে ছিন্নভিন্ন  হয়ে আছে। 

পানিতে ভাসিয়ে গেছে  ঘরের টিনের চালা ও ঘরের অন্যান্য অংশ । আমার ব্যক্তিগতভাবে তাকে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা করেছি। হতদরিদ্র  হারুন মিয়ার পূর্ণবাসনের  জন্য  মাননীয় এমপি মহোদয়   (সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী)  ইমরান আহমেদ ও জৈন্তাপুর উপজেলা  প্রসাশনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি ।

 

এই বিভাগের আরো খবর