বুধবার   ১৫ জানুয়ারি ২০২৫   মাঘ ২ ১৪৩১   ১৫ রজব ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৮০

ঢাবি কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ৪ লাখ টাকা জরিমানার মুখে শিক্ষার্থীরা

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৩  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রেজিস্টার ভবন এবং বিভাগের গাফিলতির শিকার হয়ে প্রায় চার লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের প্রায় ৩৯০ জন শিক্ষার্থীকে। ভর্তি ফি জমা দিতে বিলম্বকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এই জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। 

তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, ভর্তির নির্ধারিত তারিখ সম্পর্কে কোনো নোটিশ দেয়নি বিভাগ কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে বিভাগের দাবি, রেজিস্ট্রার ভবন থেকে এ ধরনের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। আবার ভর্তির তারিখ সম্পর্কে ২০১৭ সালের একটি নোটিশ বাদে কোনো নোটিশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই দ্বিমুখী দোষ চাপাচাপির শিকার বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বাংলা বিভাগের প্রায় সব শিক্ষার্থীকে জরিমানা করায় এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। 

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ঢাবি অপারাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধন পালন করে বাংলা বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন কর্মসূচির পরে শিক্ষার্থীরা জরিমানা মওকুফের লিখিত আবেদন করলেও সেটি নাকচ করেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত একা পরিবর্তন করতে পারবেন না বলে জানান তিনি। 

অন্যদিকে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তির শেষ সময় ১৭ অক্টোবর হলেও কোনো শিক্ষার্থী বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। এমনকি বিভাগ থেকেও কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে ১ নভেম্বর তাদের দ্রুত ভর্তি হতে হবে বলে জানানো হয়। তবে তখনও জানানো হয়নি ভর্তি বিলম্বে তাদের জরিমানা গুনতে হবে।

পরবর্তী সময়ে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বেশ কিছু শিক্ষার্থী জরিমানা না দিয়েই ভর্তি হন। পরে ৪-৭ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার বন্ধ থাকায় কেউ ভর্তি হতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে যোগাযোগ করেন। পরে ৭ তারিখ থেকে যারা ভর্তির চেষ্টা করেছেন তাদেরকে মূল ভর্তি ফি-র সঙ্গে এক হাজার টাকা জরিমানা যোগ করা হয়।

বাংলা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাংলা বিভাগের প্রায় চারশ শিক্ষার্থী সঠিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সেশনের ভর্তি ফি জমা দিতে বিলম্ব করেছেন। ফলে নির্দিষ্ট তারিখ অতিবাহিত হওয়ায় তাদের প্রত্যেকে মূল ভর্তি ফির সঙ্গে আরও এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে কবে ভর্তি শুরু বা কবে ভর্তির শেষ তারিখ এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো নোটিশ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা বিভাগ কর্তৃপক্ষ। 

ইতঃপূর্বে জরিমানা মওকুফের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র জমা দিলে, প্রশাসন সেটিকে নাকচ করে দেয়। এছাড়া, বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীদের জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বিভাগের চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীরা সময়মতো ভর্তি হতে পারেনি বলে তাদের দোষ দিয়ে জরিমানা দিয়েই ভর্তি হতে নির্দেশ দেন। 

বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সি আর (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) মোসাদ্দেক হাসান বলেন, প্রথমত আমরা ভর্তি ফি জমা দেওয়ার নির্ধারিত তারিখের ব্যাপারে জানতাম না। কেননা, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিভাগ থেকে এ ধরনের কোনো নোটিশ পাইনি। পরে যখন এ সম্পর্কে জানতে পারি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি প্রদান পূর্বক বিভাগের ফরম ফিলআপ করতে হবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখি সার্ভার ডাউন। পরে নির্দিষ্ট তারিখটি পেরিয়ে যায় এবং আমাদের সবাইকে এক হাজার টাকা হারে জরিমানা করা হয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা নেই, ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনার খরচও আমাকেই বহন করতে হয়। খুব টানাপোড়েনে কাটে প্রতিটি মুহূর্ত। এর মাঝে অযাচিত জরিমানা আমাকে খুব চাপে ফেলবে৷ বিভাগ আর রেজিস্ট্রার ভবন একে অপরকে দোষারোপ করে আমাদের ভর্তির তারিখের নোটিশ দেয়নি। এতে জরিমানা গুনতে হচ্ছে আমাদেরকে। যদি তারা আমাদের সতর্ক করে বলত বিষয়টি তবে আমাদের কোনো অভিযোগ থাকত না। কিন্তু এভাবে বিষয়টি সহজে মেনে নেওয়ার না।

এই বিষয়ে অনলাইন ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বাভাবিকভাবেই কাউকে জরিমানার নিয়ম হলো সে বিষয়ে তাকে অবহিত করা। যেহেতু বিভাগ বা প্রশাসনিক ভবন থেকে বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি, সেহেতু তাদের জরিমানা করা যুক্তিযুক্ত নয়। 

সার্বিক বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাতেমা কাউছার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ  এস এম মাকসুদ কামালকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের আদেশ অনুযায়ী কোনো বছরের রেজাল্ট প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে হবে। অন্যথায় তাদেরকে এক হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। তবে করোনাকালীন অবস্থার জন্য বিষয়টি ২০১৯-২০, ২০-২১ এবং ২১-২২ সেশনে ভর্তি বিলম্বে জরিমানা মুক্ত রাখা হয়। পরে চলতি বছর শুরুর পর থেকেই ভর্তি বিলম্বে এক হাজার টাকা জরিমানা পুনরায় চালু করা হয়। তবে বিষয়টি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানেন না।

এই বিভাগের আরো খবর