মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ১ ১৪৩১   ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২১৯৪

জোয়ার-ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ নিম্নস্তরের এলাকা বাসিন্দাদের

রিয়াদ হোসাইন স্টাফ রিপোর্টার :

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৪  

কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার দক্ষিণ বরইমুড়ি, নাড়িদিয়া, শেরপুর, দিঘধাইর, মেলা, পাঁচপুকুরিয়া সহ আসে পাশের এলাকায় গাগোরিয়া খাল সংলগ্ন নিম্নস্তর এলাকার বাসিন্দা বরইমুড়ির মোহাম্মদ উল্লাহ, আব্দুল জলিল, আব্দুর রশিদ, তৌহিদুর রহমান, কামাল হোসেন, আব্দুল খালেক, খলিল, ফিরোজ এবং শেরপুর, নাড়িদিয়া সহ সকলের বাড়িটি নদীর খুব কাছেই। নদীতে জোয়ার এবং অতি বৃষ্টি হলে বাড়িটি তলিয়ে যায়। প্রতি বছর জোয়ার-ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় এই সমাজের ব্যক্তিদের।

রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার (১৮ থেকে ২১ আগস্ট) সকাল থেকে গাগোরিয়া খাল অতিরিক্ত জোয়ারের পানি এবং অতিবৃষ্টি ডুকে পড়ে নিম্নস্তরের এলাকা, এতে তলিয়ে যায় লোকালয়ের বসতবাড়িসহ উদ্ধান ফসলি জমি। এর আগে সোমবার একই সময়ে জোয়ারে পানি বাড়িতে উঠে। রাতেও একবার পানিতে প্লাবিত হয় তাদের এলাকা। প্রতিদিন দিনে-রাতে দুইবার জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে। মোহাম্মদ উল্লাহ তরুণ কন্ঠকে জানান, প্রতি বর্ষা মৌসুমের এ সময়টাতে জোয়ার-ভাটার এবং অতি বৃষ্টিতে তাদের যুদ্ধ করতে হয়। প্রতি বছর বর্ষার সময়ে নদীতে যখন পানির উচ্চতা বাড়ে, তখন পানিতে তলিয়ে যায় তাদের রাস্তাসহ এলাকার প্রায় সকলের ঘর বাড়ি। এসময় পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটে এলাকাবাসির। রান্নাঘরের চুলাতে পানি উঠে যায়। ফলে প্রতিদিনের খাবার তৈরিতে এলাকাবাড়ি সমস্যা হয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা গ্যাসের সিলিন্ডারের মাধ্যমে রান্না করছে কিন্তু তাদের প্রশ্ন কত দিন।

তিনি আরও জানান, অতি বৃষ্টি কারণে বাড়িতে গবাদিপশু পালন করতে পারি না। বৃষ্টির পানি নামার জন্য যে পরিমান খাল খনন প্রয়োজন তা করা হয় নি গত ২০ বছরও ।

মোহাম্মদ উল্লাহ পিতাঃ আবুল খায়ের বলেন, অতি বৃষ্টির পানি নামার সময় এলাকার মানুষের ঘরের ভিটা ভেঙে দিয়ে যায়। তখন বসতঘর ঝুঁকিতে পড়ে। বার বার মেরামত করেও কাজ হয় না। যতবার জোয়ারের ও বৃষ্টির পানি উঠবে, ততবারই এমন পরিস্থিতি হয়।
জায়ারের পানির কারণে ঝুঁকি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া করার জন্য স্কুল-মাদরাসায় পাঠাতে পারেন না এলাকাবাসী। 

একই এলাকার ইলিয়াছ হোসেন, পিতা: খলিলুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। তরুণ কন্ঠকে এ ব্যক্তি বলেন, জোয়ারের পানি বাড়ি-ঘরে উঠে গেছে। চুলোয় পানি ঢুকে পড়েছে। গত কয়েকদিন থেকে রান্না করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এলাকার কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের খবর নেয় না। শুধু ভোটের সময় ভোট চাইতে আসে। দুর্যোগের সময় কাউকে কাছে পাই না।


স্থানীয় একটি মাদরাসার জামাতের শিশু শিক্ষার্থী জোনায়েত, সাজ্জাদ হোসেন ও জামাতের শিক্ষার্থী সাব্বির বলেন, জোয়ারের পানি আমাদের বাড়িঘরে উঠে যায়। এতে আমাদের চলাফেরায় কষ্ট হচ্ছে। পানি পার হয়ে নিয়মিত মাদরাসায়ও যেতে পারছি না। অতি পানির ফলে শিশুদের পানি বাহী রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

আজিজুল এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম, নরুল ইসলাম ও অটোরিকশা চালক বাবুল, সেলিম, মনির বলেন, গাগোরিয়া খাল তীরবর্তী বেড়িবাঁধ না থাকায় আমরা অরক্ষিত। ফলে জোয়ারের পানি বাড়লে লোকালয় তলিয়ে যায়। বাঁধের কাজ করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্শন করছি। কিন্তু এরই মধ্যে জোয়ারের তোড়ে উপক‚ল জুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
তারা জানান, পানি তোড়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে জোয়ারের পানি ঢুকলে নামার পথ এবং খাল খনন না থাকায় জমে থাকে পানি। পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কালভার্ট নেই। জনপ্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আমরা জোয়ারের এবং অতি বৃষ্টির পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। তাই দ্রæত বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে জোয়ারের পানির কবল থেকে নিম্নস্তরএলাকা রক্ষা পাবে।

এই বিভাগের আরো খবর