বুধবার   ২৩ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৮ ১৪৩১   ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৬৬

চাঞ্চল্যকর যত হত্যাকান্ড

নাসীব উর রহমান

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮  

মাহমুদ আল-মাবুহ্ রাত সাড়ে ৮টার কিছু পূর্বে দুবাইয়ের আল বুস্তান রোটানা হোটেলের লবিতে প্রবেশ করেন। অনেক অতিথি আসছে এবং যাচ্ছে। অন্য সকলের মতই, প্রবেশদ্বারের উপরে থাকা ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরায় মাহমুদের চেহারা ধরা পড়লো। কালো চুল, সামান্য বাঁকা করে কাটা চিক, এবং পুরু কালো গোঁফের আড়ালে ধরা পড়লো মাহমুদের সুন্দর পুরুষালী চেহারা। ছয় ঘণ্টারও কম সময় মাহমুদ দুবাইয়ে নেমেছিলেন, কিন্তু ইতিমধ্যেই তিনি একজন ব্যাংকারের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। উপলক্ষ ছিলো গাজায় হামাসের জন্য সার্ভেইল্যান্স (নজরদারীর সরঞ্জাম) ইক্যুইপমেন্ট কেনার প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে তিনি ইরানী আল-কুদ বাহিনীর এক অজ্ঞাত সদস্যের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছিলেন। অজ্ঞাত ব্যাক্তিটি কোনো এক সংগঠনের হয়ে অস্ত্রের দুটি বড় চালানের সমন্বয়ের ব্যাপারে সহায়তা করছিলো।

ইতোপূর্বে, আল-মাবুহ দুবাইতে অনেক ধরনের ব্যবসা করেন। ১৯ জানুয়ারি ২০১০-এ যখন তিনি দুবাইতে অবস্থান করছিলেন, তা ছিলো বিগত ১ বছরের মধ্যে তার ৫ম বারের দুবাইয়ে আসা। শেষবার তিনি ফিলিস্তিনি জাল পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই ভ্রমণ করেন যেখানে তার নাম ও তালিকাভুক্ত ব্যবসা সবই নকল ছিল। প্রকৃতপক্ষে, তিনি হামাসের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন এবং কয়েক দশক ধরে হামাসের নেতৃস্থানে অবস্থান করছিলেন। মৃত্যুর ২০ বছর পূর্বে আল-মাবুহু’র বিরুদ্ধে দুই ইসরায়েলি সৈন্যকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ উঠেছিলো। আল-মাবুহু এর পূর্বসুরী ইয়াজ আ-দ্বীন আল-শেখ খলিল, দামাস্কাসে হত্যার শিকার হবার পর, আল-মাবুহ হামাস অস্ত্রাগারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান।

 

1.চাঞ্চল্যকর যত হত্যাকান্ড

চিত্র: সিসি টিভি ফুটেজে লিফটে টেনিস খেলোয়াড়ের ছদ্মবেশে আল মাবুহকে অনুসরণরত সন্দেহভাজন ব্যক্তি।

আল-মাবুহ এর ঠিক এক কদম পিছনে, মোবাইল ফোন হাতে একজন লোক ছিল। যে তাকে লিফটে উঠার পূর্বে অনুসরণ করছিলো। "এখন আসছে," অনুসরণরত লোকটি ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা লোকটিকে বললো। আল মাবুহ এই কথোপকথন শুনে থাকতে পারে্ন, কিন্তু তা তিনি খুব একটা পাত্তা দিয়েছিলেন বলে মনে হয় না। আল-মাবুহ মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। তিনি জানতেন ইসরায়েলীরা তাকে হত্যা করতে সচেষ্ট ছিলো। "আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে," মৃত্যুর পূর্বে শেষ বসন্ত উদযাপনকালে তিনি আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাত্কার এমনটিই বলেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন "সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে এতোটাই সতর্ক ও সচেতন করেছে যে, তারা আমাকে 'শিয়াল' বলে ডাকে। কারণ আমি আমার পিছনে যা ঘটে তা অনুভব করতে পারি, এমনকি কোনো প্রাচীরের সামনে ও পিছনেও কি চলছে আমি পূর্বেই ধারণা করতে পারি। সেই স্রষ্টার প্রশংসা, যে আমাকে তিনি নিরাপত্তা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান দান করেছেন। কিন্তু আমি জানি, যে পথ আমি বেছে নিয়েছি সে পথের মূল্য জীবন দিয়ে পরিশোধ করতে হবে, আর তাতে আমার বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই। আশা করি আমার মৃত্যু হবে শহীদের মৃত্যু। "

লিফট এসে দ্বিতীয় তলায় থেমে গেলো। আল-মাবুহ লিফটের বাহিরে পা রাখলেন। স্বভাব সুলভ পিছনে দৃষ্টি ফিরিয়ে তিনি লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যেতে দেখলেন। লিফটের ভিতর ফোনে কথা বলতে থাকা লোকটি উপরের তলায় চলে গেল। আল মাবুহ ভাবলেন অবশ্যই সে কোনো পর্যটক। আল-মাবুহ্ বাম দিকে চলে গেলেন এবং তার ঘরের দিকে হেঁটে গেলেন। হোটেলের ২৩০ নম্বর কক্ষে তিনি অবস্থান করছিলেন। হলে পায়ে চলার পথ সম্পূর্ণ খালি ছিল। অভ্যাসবশত, আল মাবুহ দ্রুত দরজার ফ্রেম এবং লকে চোখ বুলিয়ে নিলেন। তবে জোরপূর্বক কক্ষে প্রবেশের কোনো চিহ্ন তিনি খুঁজে পেলেন না। আল মাবুহ কক্ষের তালা খুলে কক্ষে প্রবেশ করলেন ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করার পর একটি চাপা শব্দে আল মাবুহ পিছন ফিরে চাইলেন। ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিলো।

[দৈনিক ইয়েদিওথ আহরনথের সিনিয়র রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক ,সাংবাদিক ও লেখক রনেন বার্গম্যান এর প্রকাশিত বই, “রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট” এর একটি অনুচ্ছেদের অংশবিশেষ যেখানে হামাস নেতা মাহমুদ আল মাবুহ’র অপহরণ ও হত্যাকান্ডের অপারেশনটির বর্ণনা দেয়া হয়েছে।]

১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে ইসরাইলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন-গুরিয়ান দেশের সীমান্তের বাইরে গোয়েন্দাগিরি ও গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এক নতুন সংস্থার জন্ম দেন: পরে তিনি এটির নাম রাখেন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস। আরো সাধারণভাবে এটাকে বলা হয়- "দ্য ইনস্টিটিউট" - যা পরিচিতি পায় মোসাদ নামে।

 

2.চাঞ্চল্যকর যত হত্যাকান্ড

চিত্র: ডেভিড বেন-গুরিয়ান; মোসাদের প্রতিষ্ঠাতা

মোসাদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নেয়, যা আজ পর্যন্ত একই ভাবে কাজ করে চলেছে যেন মস্তিস্ক, দেহ ও হৃৎপিণ্ড। এদের মধ্যে প্রথমে রয়েছে আমান, সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী যা ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে তথ্য সরবরাহ করে; শিন বেথ, অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দাগিরি, পাল্টা সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়; এবং মোসাদ, যা দেশের সীমানার বাইরে গোপন গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই গোপনীয়তার আবরণে মোড়া বাহিনীর সৃষ্টি ইসরায়েল রাষ্ট্রের নির্মাণে ছিলো বিজয় স্তম্ভ। ডেভিড বেন-গুরিয়ান যেন রাষ্ট্রের ভবিষ্যত দেখতে পেয়েছিলেন। তাই তিনি কূটনীতির চেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও গুপ্তচর সম্প্রদায় গড়ে তোলায় অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।

 

হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইমাদ মুঘিনিয়ের হত্যাকাণ্ড-

"না, আমাদের মধ্যে এই নামে কেও নেই।" ঠিক এমনটি বলেছিলেন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ যখন ১৯৯০ সালে টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে উপস্থাপক তাকে ইমাদ মুঘিনিয়ের এর পরিচয় এবং হিজবুল্লাহয় তার ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তেহরানে তার পৃষ্ঠপোষকদের মতো নাসরাল্লাহ ও হিজবুল্লাহর সামরিক ও নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মুঘিনিয়ের এর পরিচয় গোপন রাখেন এবং তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। ঠিক ১০ বছর আগে পর্যন্ত গোপনীয়তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল, যতক্ষণ না ২০০৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী মুঘিনিয়েরকে দামাস্কাসে হত্যা করা হয়েছিল। মৃত্যু পরবর্তী মুঘিনিয়ের অনেকের কাছে আদর্শবাদী চরিত্র হয়ে উঠেন। হিজবুল্লাহ ও ইরানের অধিবাসীদের অন্তরে মুঘিনিয়ের আজও শহীদ রূপে পরম শ্রদ্ধেয়।

ইমাদ মুঘিনিয়ের চিত্রায়ন কিন্তু ইজরায়েলের চোখে সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত কয়েক দশক ধরে ইমাদ মুঘিনিয়ের ছিলেন মোসাদ ও ইজরায়েলের শীর্ষ স্থানীয় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসবাদী। কথিত রয়েছে তিনি বিশ্বজুড়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলা, বিশেষত গাড়ী বোমা হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জীবদ্দশায় তিনি হিজবুল্লাহর একজন নেতৃস্থানীয় সেনা কমান্ডার ছিলেন এবং ইরানকে, লেবাননের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করেছিলেন। অজ্ঞাত কূটনীতিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে মোসাদ বহুবার মুঘিনিয়েরকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও অবশেষে ২০০৮ সালে ফেব্রুয়ারীর ১২ তারিখে তিনি সফল হন। মুঘিনিয়ের অসতর্ক অবস্থায় দামাস্কাসের একটি সেফ হাউস পরিদর্শনরত অবস্থায় হত্যার শিকার হন।

 

3.চাঞ্চল্যকর যত হত্যাকান্ড

চিত্র: ইমাদ মুঘিনিয়ের, ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনীর সঙ্গে

মোসাদের কিডন ইউনিটের গুপ্তহত্যায় পারদর্শী এজেন্টরা এবং আইডিএফ গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০ এর সদস্যরা মুঘনিয়েরের উপর নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে আসছিলো এবং সেফ হাউস ও সংশ্লিষ্ট পার্কিং লটে ঢুকে মুঘিনিয়ের প্রবেশ করা মাত্র তাকে ঘিরে ফেলে। রিপোর্ট অনুসারে, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে মুঘনিয়েরকে তার গাড়িতে বা গাড়িটি সেফ হাউস বলে স্বীকৃত অ্যাপার্টমেন্টের কাছাকাছি পার্ক করা মাত্রই তাতে বোমা হামলা করা হবে। মুঘিনিয়ের হত্যাকান্ডের সময় মোসাদ ও আইডিএফ গোয়েন্দা প্রযুক্তিবিদদের বিরুদ্ধে বিশেষ বোমার ডিজাইন করা, এবং বোমা হামলার পূর্বে বোমার কার্যকারিতার উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর গুরুতর অভিযোগ আরোপ করা হয় যা প্রশাসন সম্পূর্ণ রূপে অস্বীকার করে।

মুঘিনিয়ের কখন তার অ্যাপার্টমেন্টে পরিদর্শন করবে তা পূর্বে অনুমান করা এবং তার গাড়িতে বোমার প্রতিস্থাপন বা তার গাড়ির পাশে বোমা বহনকারি গাড়ি রেখে নিরাপদ দূরত্বে অপেক্ষা করা মোটেও সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু মোসাদ এই অসম্ভব পরিকল্পনাকেও সম্ভব করে দেখায়। সূত্র অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ সালে মুঘিনিয়ের সেফ হাউসের পার্কিং লটটিতে প্রথম যখন প্রবেশ করে তখন তার সঙ্গে হিজবুল্লাহর অন্যান্য কর্মকর্তা ছিলেন, যাদের সকলকে একেবারে হত্যা করার প্রস্তুতি মোসাদ এজেন্টদের ছিলো না। একই রাতে মুঘিনিয়ের একা তার গাড়ী নিয়ে সেফ হাউসে ফিরে আসে। এবার মোসাদ এজেন্টরা আর মিস করেনি। বোমার আঘাতে হত্যা করার মাধ্যমে মুঘিনিয়েরকে ইরান-হিজবুল্লাহ-ইজরায়েল বিপ্লব থেকে "মুছে ফেলা" হয়।

২০১০ সাল এর পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে সাইবার অ্যাটাক, হত্যাকান্ড, বোমা হামলার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে আঘাত হানা-

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপর সরাসরি সামরিক হামলা এড়াতে মোসাদ ২০১০ সাল ও তার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু ইরানী বিজ্ঞানীকে হত্যা করে পারমানবিক প্রকল্পটি বন্ধ করা বা কাজের গতি হ্রাস করার প্রচেষ্টা চালায়। যদিও এই অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। গুজব রয়েছে অন্যান্য বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি বন্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ তথা স্যাবোটেজিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সিমেন্সের মত আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ইরানকে ত্রূটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত করা হয় যা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ।কিন্তু ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরতর আঘাত হানে মোসাদ এবং সিআইএ এর যৌথ সাইবার অ্যাটাক যেখানে ব্যবহৃত হয়েছিলো সাইবার ভাইরাস স্টূক্সনেট।

 

4.চাঞ্চল্যকর যত হত্যাকান্ড

চিত্র: অজ্ঞাত মোটরসাইকেল আরোহী কর্তৃক গুলিবিদ্ধে মৃত ইরানি বিজ্ঞানী দারুশ রেজির শবযাত্রা। অভিযোগের আঙুল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের দিকে।

২০০৯ এবং ২০১০ সালে এই কম্পিউটার ভাইরাসটি ইরানী পারমাণবিক কেন্দ্রের ব্যপক ক্ষতি করে যা আজও ইতিহাসের পাতায় সর্বাধিক নাটকীয় সাইবার আক্রমণ হিসেবে স্বীকৃত। নাতাজসহ পনেরোটি ইরানী পারমানবিক সুবিধা সম্বলিত কেন্দ্রস্থলে এই স্টূক্সনেট ভাইরাসটি অনুপ্রবেশ করে। আনুমানিক প্রায় এক হাজার বা তারও অধিক পারমানবিক সুবিধা সম্বলিত কেন্দ্র যা ইরানের পারমানবিক প্রকল্পের এক পঞ্চমাংশেরও বেশি, এই ভাইরাস এর আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায়।

প্রাক্তন মোসাদ উপপরিচালক রাম বেন বারাককে যখন স্টূক্সনেট অপারেশন পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কে পালন করেছে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, "ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের জন্য বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করে আসছে, এবং এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে সফল হতে পারে নি। কারণ এটা নয় যে তাদের প্রচেষ্টায় কমতি রয়েছে, কারণ আমরা তাদের কখনো সফল হতে দিইনি এবং ভবিষ্যতেও দিবো না।”

তিউনিশিয়ায় হামাস-হিজবুল্লাহ অস্ত্র বিশেষজ্ঞের উপর হামলা-

১৫ ডিসেম্বর, ২০১২ তারিখে মুহাম্মদ আল-জাওয়ারিকে তার বাসভবন,স্ফাক্সের কাছে তিউনিসিয়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়। পেশায় জাওয়ারি অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ধারণা করা হয়, তিনি হামাসের জন্য ড্রোন নির্মাণ করতেন এবং সম্ভবত হিজবুল্লাহরও সহযোগী ছিলেন। তিউনিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানা যায়, তিনি নৌবহর ও নৌবাহিনীর জন্য এক অজ্ঞাত ডুবোজাহাজ ডিজাইন করেছিলেন যা পানির নীচ থেকে প্রতিপক্ষ যুদ্ধজাহাজকে আক্রমণ করতে সক্ষম।

হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার কোনো প্রমাণ ছিল না। অনেকেই সন্দেহ করেন হত্যাকান্ডটি মোসাদ এজেন্টদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিলো। খুনীদের সন্ধান পাওয়া না গেলেও যা পাওয়া যায় তা হল মোবাইল ফোন, সাইলেন্সার এবং ভাড়া গাড়ি। এমনকি যে গাড়ি ভাড়া নেয়া হয়েছিল তাও তৃতীয় পক্ষের সহযোগিতায়। যারাই মোসাদ এজেন্টদের সহায়তা করেছিলো তারা নিজেদের অজান্তেই করেছিলো। কারণ মোসাদ এজেন্টরা সাংবাদিকের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলো।

 

5.চাঞ্চল্যকর যত হত্যাকান্ড

চিত্র: ২০ ডিসেম্বর, ২0১৬ তারিখে তিউনিসিয়ায় হামাস গ্রূপের ড্রোন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আল-জাওয়ারির হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে তিউনিশিয়ার মিউনিসিপ্যাল ​​থিয়েটারের সামনে জমায়েত চিত্র।

হামাসের প্রযুক্তি ও অস্ত্র বিশেষজ্ঞের উপর হামলার ঘটনা প্রথমবারের মত ঘটে। পূর্ববর্তী হত্যাকাণ্ডগুলোর লক্ষ্যবস্তু ছিলো হামাস বা অন্যান্য গোষ্ঠীর সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক, প্রধান অর্থদাতারা যাদের ইজারায়েলের বিরোধী পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে ধারণা করা হতো। বিশেষজ্ঞরা হামাস প্রকৌশলীদের উপর আক্রমণের একটি প্যাটার্ন দেখতে পায়। যা থেকে ধারণা করা হয় মোসাদ এজেন্টরা সামরিক বিশেষজ্ঞদের চেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করছে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের। মোসাদের তৎকালীন প্রধান মোসি কোহেন ও হাই-টেক প্রযুক্তিতে সবার মনোযোগ আকৃষ্ট রয়েছে বুঝতে প্রথমবারের মতো প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনিয়োগের জন্য একটি তহবিল খোলেন।

কোহেনের অধীনে পরিচালিত মোসাদের এই অভিযান স্মরণ করায় গুপ্ত হত্যায় ও লুকিয়ে পড়ায় মোসাদ এজেন্টরা কতটা পারদর্শিতা লাভ করেছে তা মোসাদের খাতায় যে শুধু সাফল্যের উদাহরণ মিলবে তা কিন্তু নয় ব্যর্থতারও নজির রয়েছে। ২০১০ সালে দুবাইয়ে হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা মাহমুদ আল-মাবুহহকে হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এজেন্টের পরিচয় ভিডিও ফুটেজে প্রকাশ পায় যা মোসাদের গোপনীয়তায় বিঘ্ন ঘটিয়েছিলো।

মালয়েশিয়ায় হামাস অস্ত্র বিশেষজ্ঞকে হত্যা-

২২ এপ্রিল, ২০১৮ শনিবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মসজিদে যাওয়ার পথে প্রকৌশলী ফাদি মুহাম্মদ আল-বাতাশকে কতিপয় মোটরসাইকেল আরোহী গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের প্যাটার্নের সঙ্গে পূর্বে তিউনিশিয়ায় ঘটে যাওয়া বিজ্ঞানীর হত্যাকান্ডের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মৃত্যুকালে ফাদির বয়স ছিলো ৩৫ বছর। সে ১০ বছর যাবত মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা ও গবেষণায় লিপ্ত ছিলো। দুই মটরসাইকেল আরোহীর ক্রমাগত গুলিবর্ষণে ফাদি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার মৃতদেহ হতে ১০টি গুলি উদ্ধার করা হয়। তিনি আল-বাতাশ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং কথিত রয়েছে তিনি হামাসের হয়ে ড্রোন এবং রকেট ডিজাইনের কাজ করছিলেন।

 

6.চাঞ্চল্যকর যত হত্যাকান্ড

চিত্র: মালয়েশিয়ার পুলিশ কর্তৃক প্রকাশিত দুই সন্দেহভাজন হত্যাকারী, যারা হামাস প্রকৌশলী আল-বাতাশ’কে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হয়।

মালয়েশিয়ান সরকার সন্দেহভাজনদের পরিচয় বা নাম সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে সাক্ষীদের দ্বারা বর্ণিত বর্ণনার উপর ভিত্তি করে উভয় হত্যাকারীর কম্পিউটার-জেনারেটেড ছবি প্রকাশ করেছিল। তবে মালয়েশিয় সরকার রিপোর্ট করে, তারা ২০মিনিটের ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করেছে যেখানে হত্যাকারীরা বাতাশে’র জন্য অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু হত্যাকারীরা তাদের চেহারা পরিপূর্ণভাবে লুকাতে সক্ষম হয়েছিলো।

কম্পিউটার ইমেজে যে চেহারা খুঁজে পাওয়া যায় তাতে হত্যাকারীদের দেখে মনে হয় তারা মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপীয় নাগরিক। কিন্তু হত্যাকারীরা ছদ্মবেশ ধারন করেছিলো যেন তাদের চেহারা শনাক্ত করা সম্ভবপর না হয়। অতঃপর ফলাফল যা দাঁড়ায় হত্যাকারীরা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে তাদের মিশন শেষ করে হারিয়ে যায়। পরে থাকে আল-বাতাশ এর লাশ ও প্রমাণ করতে না পারা অভিযোগের পাহাড়।

এই বিভাগের আরো খবর