মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৯ ১৪৩২   ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৮৩

আওয়ামী লীগ সভাপতির দিকে তাকিয়ে একঝাঁক ছাত্রনেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২  

রাত পোহালেই দেশের প্রাচীন ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সম্মেলন। প্রতিবারই আওয়ামী লীগের সম্মেলন এলে আশায় বুক বাঁধেন একঝাঁক ছাত্রনেতা। এবার বুঝি তার কোনো গতি হবে। পরিচয় দেওয়ার মতো একটা জায়গা হয়ত দলে হবে। দুর্দিনের ত্যাগ ও শ্রম নিশ্চয়ই বৃথা যাবে না। এ আশায় দৌঁড়ঝাপও বাড়ে নেতাদের দ্বারে দ্বারে। সক্রিয় হন পদ প্রত্যাশী অনেকেই। কেউ প্রকাশ্যে বলেন, কেউ হয়ত বলতেও পারেন না। কারণ, অনেকের জুনিয়র কর্মীরাও আওয়ামী লীগের বড় নেতা!

প্রতি সম্মেলনেই আওয়ামী লীগে এমন চিত্র চোখে পড়ে। সুদিনের ‘কাউয়াদের’ ভিড়ে বুক পকেটে বিরহ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো দুর্দিনের কিছু নেতা-কর্মীর আনা গোনাও থাকে। তবে কথা বললে বিষয়টিকে সহজভাবেই নেন তারা। রাগ ক্ষোভ বা মান অভিমান প্রকাশ পায় না কথায়। তারা মনে করেন, তাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) যখন যাকে যেখানে যোগ্য মনে করেন, তাকে সেখানেই জায়গা দেন বা কাজে লাগান। তিনি সবার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তার ওপর তাদের সেই আস্থা-বিশ্বাস আছে।

আওয়ামী লীগের কমিটি বিশ্লেষণেও দেখা যায়, প্রতিবারেই বেশ ভালো সংখ্যক নতুন মুখ আসে নেতৃত্বে। যার অধিকাংশই সাবেক ছাত্রনেতা। গেল চার সম্মেলনে ৭৭ জন নতুন মুখ পেয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটি ছিল ৭৫ সদস্যের, নতুন নেতা হয়েছেন ২০ জন। ২০১২ সালের সম্মেলনে ৭৫ সদস্যের কমিটিতে নতুন নেতা হয়েছেন ১২ জন। ২০১৬ সালের সম্মেলনে ৮১ সদস্যের কমিটিতে নতুন মুখ এসেছে ২৮। ২০১৯ সালের সম্মেলনেও ৮১ সদস্যের কমিটিতে নতুন মুখ ছিল ১৭ জন।

আসন্ন ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে শোনা যাচ্ছে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সিংহভাগ পদে থাকছে না পরিবর্তন। মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হওয়া পদ পূরণ করা বা দায়িত্ব পুনর্বণ্টন ছাড়া, নেতৃত্বে তেমন পরিবর্তন আসবে না বলেই শোনা যাচ্ছে। তবে স্বল্পসংখ্যক নতুন মুখ আসবে এমটাই আলোচনায় আছে।

এরই মধ্যেও প্রত্যাশা কমেনি সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- অনেক সাবেক ছাত্রনেতা নিষ্ক্রিয়, আবার অনেকে সক্রিয় থাকলেও দীর্ঘদিন পদ পদবী না থাকায় পেরে উঠছেন না। তবে নেত্রীর ডাক পেলে বা দায়িত্ব দিলেই যে কেউ যেকোনো সময় হাজির হবেন ত্যাগের মনোভাবে পুরনো রূপে।

সাবেক ছাত্রনেতাদের আড্ডা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের আলোচানায় সব সময় অর্ধশত ছাত্রনেতাদের নাম উঠে আসে, যাদের পদায়ন চায় সবাই। দুর্দিনের এসব ছাত্রনেতারা আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য মনে করেন অনেকে।

তাদের মধ্যে বেশি চাওর হয়-ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রহিম ও ইসহাক আলী খান পান্না, সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, সাবেক সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান শেখর, সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন ও সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলুর নাম।

এছাড়াও সাবেক ছাত্র নেতা শাহিনুর রহমান টুটুল, সুজাদুর রহমান, আবুল কালাম, রফিকুল আলম গাফ্ফারি রাসেল, রিপন পোদ্দার, আশরাফুর রহমান, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আবু আব্বাস ভূইয়া, মফিজুল ইসলাম ঢালী, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ওমর শরীফ, ইশতাক আহমেদ শিমুল, রোজিনা ইসলাম, শারমিন জাহান, খলিলুর রহমানসহ বেশ কয়েক জনের নামও আলোচনায় আসে।

তাদের অনেকে সম্মেলন এবং অন্যান্য আন্দোলন সংগ্রামে বেশ সক্রিয়। আবার অনেকে যোগাযোগ রাখেন। কিন্তু নানা সংকটে প্রকাশ্যে আসেন না। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, আমাদের মূল পরিচয় আমরা কর্মী। নেত্রী যখন যাকে যেখানে যোগ্য মনে করবেন, কাজে লাগাবেন। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

এ বিষয়ে কথা হয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রহিমের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রত্যাশা তো সবারই থাকতে পারে। নেত্রী যদি মনে করেন যে, প্রয়োজন আছে, কাজে লাগাবেন। তাহলে লাগাবেন। আর যদি মনে করেন যে, সাবেক ছাত্রনেতাদের চেয়ে আরও ভালো যোগ্য লোক আছে-তারা আসবে নেতৃত্বে, কোনো অসুবিধে নেই। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল শক্তিশালি হোক।

সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী বলেন, প্রত্যাশা আর প্রসেসে থাকা ভিন্ন জিনিস। আমরা যদি কোনো ট্রেনে উঠে থাকি, ট্রেন তো তার গন্তব্যে পৌঁছবেই। সাবেক ছাত্রনেতারা ছাত্র রাজনীতি করার মধ্য দিয়ে একটি চলন্ত ট্রেনে অবস্থান করে। সেই ট্রেন তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ গন্তব্যে যেকোনো এক সময় পৌঁছবেই। আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রতি তিন বছর পর পর হয়, এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়া ধরে নেন একেক সময়ের একেক স্টেশনে ট্রেন অবস্থান করে। সেই জায়গায় সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রত্যাশা নয়, তারা বাঙলা বাঙালির এ কর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ একটি তারুণ্যনির্ভর সংগঠন, বাংলাদেশও। বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগ পাশাপাশি চলে। সেই চলায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সব সময় তারুণ্য নির্ভর থাকে, এবারও থাকবে। যারাই আসবে নেতৃত্বে তারা তারুণ্যকে ধারণ করেই স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা পালন করবেন।

ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শেখর বলেন, আমরাও নেত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। আমরাও কাজ করতে চাই। প্রকৃতপক্ষে ভালো মন্দ তো জানেন নেত্রী। আমরা যারা কেন্দ্রে ছাত্রলীগ করেছি, দুঃসময়ে ছিলাম। আমাদের তো প্রত্যাশা থাকবেই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার। কিন্তু আমাদের সব কিছু নেত্রীর হাতে, তিনি যাকে যেখানে প্রয়োজন মনে করবেন, কাজে লাগাবেন।

ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক যুবনেতা ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলেন, নেত্রী এরই মধ্যে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। সেজন্য প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতাদের পাশাপাশি দলে প্রযুক্তি জ্ঞানসমৃদ্ধ আধুনিক তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রনেতা অনেকেই উপযুক্ত। নিশ্চয়ই নেত্রী বরাবরের মতোই তাদের কাজে লাগাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, সাবেক ছাত্রনেতারা শুধুমাত্র সম্মেলন আসলে নেত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে না, সারা বছরই তারা নেত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকেন। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন বা নেবেন, সেটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। আওয়ামী লীগের সম্মেলন সব সময় নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি হয়। নেত্রী সবদিক বিবেচনা করে যুগোপযোগী কমিটি নির্বাচন করেন, আমাদের নেত্রীর প্রতি সেই আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। এবারও তিনি যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

শনিবার সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন। সকালের উদ্বোধনী সেশন শেষ করে বিকেলে বসবে কাউন্সিল অধিবেশন। দলটির নেতৃত্ব নির্বাচনের রেওয়াজ অনুযায়ী, সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রথমে সভাপতির নাম প্রস্তাব করেন একজন নেতা। পরে আরেকজন নেতা তা সমর্থন করেন। সবার কণ্ঠভোটে সেটি পাস (অনুমোদন) হয়। একই প্রক্রিয়ায় সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচন করা হয়। পরে বাকি পদগুলোতে নেতাদের নাম ঘোষণা করেন দলের নব-নির্বাচিত সভাপতি। বেশিরভাগ সময় ৮১ সদস্যের কমিটিতে কিছু পদ খালি রাখা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে শূন্য পদগুলো পূরণ করা হয়। 

এই বিভাগের আরো খবর