সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৮ ১৪৩২   ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৬৫

অচল পায়েই সচল নূর আলম

প্রকাশিত: ১ জুন ২০১৯  

 

অন্য সবার মতো দুটি পা আছে নূর আলমের। তবে সেই পা দিয়ে হাঁটা তো দূরের কথা, সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেন না তিনি। যে পা শরীরের ভার বহন করার কথা, সেগুলোই আলমের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

তারপরও এমন প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি নূর আলমকে। সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের জন্য যে কাজ কষ্টের, সেটিই গত ছয় বছর ধরে অনায়াসে করে যাচ্ছেন তিনি। দায়িত্ব পালন করছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে খিলগাঁও রুটে চলাচলকারী মিডলাইন পরিবহন বাসের হেলপার-সুপারভাইজারের।

৩০ বছর বয়সী আলমের বাবার নাম মো. ইসমাইল। বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদী উপজেলার  আন্ডারচর গ্রামে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ তিনি। বর্তমানে স্ত্রী ও এক বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বোর্ডঘাট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকছেন।

আলম জানান, জন্মের পর থেকেই তার পায়ে কোনো শক্তি পান না। ছোট থাকতে বাবা-মা অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন; কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তিনি বলেন, অভাবের কারণে তৃতীয় শ্রেণির পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। এতগুলো ভাই-বোনের জন্য ঠিকমতো খাবারও জোগাড় করতে পারতেন না বাবা। এর পরও মানুষের কাছে হাত পাতিনি। পরে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে আসি। ঢাকায় আসার পর কাজ খুঁজতে খুঁজতে সিটি পরিবহন বাসের মালিক খোকনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিই আমাকে বাসে কাজ করার সুযোগ করে দেন। 

দীর্ঘদিন থেকেই আলমকে চেনেন মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, শরীর নয়, মনের শক্তিই সবচেয়ে বড়। এ কথা প্রমাণ করেছেন আলম। অনেকেই শারীরিক কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও মানুষের কাছে অনাসায়ে হাত পাতেন। কিন্তু আলম একেবারেই আলাদা। কারও কোনো অনুগ্রহ নেন না। নিজেই পরিশ্রম করে জীবন চালান। সিনেমার নয়, নূর আলম বাস্তবের নায়ক।

মিডলাইন পরিবহনের বাসচালক ফয়েজ বলেন, সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেন আলম। তাছাড়া তার সততা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। তাই এই বাসস্ট্যান্ডের সবাই তাকে খুবই ভালোবাসেন। সবাই তাকে কাছে পেতে চান। 

হেলপার অপু জানান, আলম কাজে ফাঁকি দেন না। এ ছাড়া যাত্রীদের সঙ্গেও কখনও খারাপ ব্যবহার কিংবা তাদের ঠকান না তিনি। সিটি পরিবহনের মালিক খোকন বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের অনেকেই মাদকাসক্ত। অনেকেই যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করে বাস মালিককে কম দেন। কিন্তু আলম তাদের থেকে একেবারেই আলাদা। মাদক তো দূরে থাক, আলম ধূমপানও করেন না। কখনও কাউকে ঠকান না।