শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পত্রিকা ও অনলাইনের কার্ড কিনে মাঠ চষছে শতাধিক ভূয়া সাংবাদিক

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত : ০২:০৮ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার

এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় সাংবাদিক কার্ড কিনে যশোর জেলা চষে বেড়াচ্ছে শতাধিক ভূয়া সাংবাদিক । অসাধু চক্রের কাছ থেকে অখ্যাত পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা ও অনলাইন টিভির কার্ড নিয়ে যথেচ্ছা করে বেড়াচ্ছেন এসব ব্যক্তিরা। তারা সাংবাদিক সেজে মোটরসাইকেলে প্রেস ও সাংবাদিক লিখে বোকা বানাচ্ছেন বিভিন্ন মহলকে। অনেকে রীতিমত মাদক বহনের কাজও করছে।

সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরাধ সংক্রান্ত সংবাদ পড়ে ছুটে যান অভিযুক্তদের কাছে। নানা উছিলায় তারা এসব মানুষের কাছ থেকে আদায় করে মোটা অংকের টাকা।

সম্প্রতি যশোর শহর ও শহরতলীতে প্রেস ও সাংবাদিক লেখা মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। গলা ও কোমরে বাহারি রঙের পরিচয়পত্রও ঝুলছে তাদের। তাদের বেশিরভাগই নতুন মোটরসাইকেল চালান। বেশ-ভুষা দেখে দাপুটে সাংবাদিক মনে হলেও পরিচয়পত্র চেক করলে চোখ ছানাবড়া হওয়ার অবস্থা।
 
ট্রাফিক পুলিশ কিংবা চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরা পুরো জেলা চষে বেড়াচ্ছে। পুলিশ এদের গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না, গাড়ি চোরাই কিংবা টানা কিনা চেক করতে পারছেন না সাংবাদিক ভেবে। নানা অপরাধে জড়িত তারা, একাধিক মামলার আসামি এমন অনেকে অখ্যাত অনলাইন ও অখ্যাত দৈনিক বা অনলাইন টিভির নাম ভাঙিয়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

জানা যায়, যশোরাঞ্চলের শতাধিক সাংবাদিকদের কার্ড পকেটে রয়েছে নামসর্বস্ব অনলাইন নিউজপোর্টাল, পত্রিকা ও টিভির কার্ড। একটি অসাধু চক্র এক থেকে দশ হাজার টাকায় এসব কার্ড বিক্রি করছে। এদের অর্থলিপ্সতায় যশোর শহরেও বেড়ে চলেছে ভুয়া সাংবাদিকের সংখ্যা। সাংবাদিক সেজে শহর দাপিয়ে বেড়ানো চক্রের মধ্যে এক সময়ের অনেক সন্ত্রাসীও রয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে এসব ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয়ে অভিযুক্তদের কাছে ছুটে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পত্রিকা অফিস না জানলেও সংবাদ বন্ধ করার কথা বলে অর্থ হাতাচ্ছেন। এমনকী তাদের অখ্যাত অনলাইন ও পত্রিকায় সংবাদ ছেপে দেয়ার হুমকি দিয়েও ব্লাকমেইল করছেন।

সাংবাদিক পরিচয়দানকারী অনেক ধুরন্ধরের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও হাতে গেছে। সম্প্রতি অনলাইন পত্রিকার কার্ড নিয়ে দু’টি ব্লাকমেইলের ঘটনা ঘটিয়েছে চক্রের দুই সদস্য। অনলাইন টিভির সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে লাইভ দেওয়ার কথা বলে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা এক প্রতারক। আবার এক প্রতারক নিজেকে ১টি পত্রিকার ব্যুরোচিফ পরিচয় দিয়ে যশোরে অপর একজনকে নিয়োগ দিয়েছে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে। ভুইফোঁড় পত্রিকার প্যাডে ভুয়া নিয়োগ পাওয়া ওই যুবক পরে জানতে পারেন মূলত বাংলাদেশে ওই নামে কোনো পত্রিকা নেই।

ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন অফিসারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এসব চক্রের অপতৎপরতা।

এদের অনেকের পকেটেই কেনা পরিচয়পত্র। মোটরসাইকেল এমনকী প্রাইভেটকারে সাংবাদিক ও প্রেস লিখে হম্বিতম্বি করে পথ চলছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক সময় অবৈধ মালামাল বহন করছে। সাংবাদিকতার কার্ড বিক্রি করা চক্র ও ওই কার্ড কেনা চক্রকে খুঁজছে একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

এই ব্যাপোরে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি সৌমেন দাশ, কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান এবং ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সাথাওয়াত হোসেন গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে তথ্য মিলছে অনেক প্রতারক ও লেবাসধারী সাংবাদিক সেজে মাঠ চষছে।

সাংবাদিক না হয়েও মনগড়া অনলাইনের কার্ড বানিয়ে শহরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরছে। আর সংবাদের নামে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে স্মার্টফোন পুঁজি করে। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নামেও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে এরকম একটি চক্র।

এছাড়া, প্রতিনিয়ত শহরের নানা ভার্সনের মোটরসাইকেলে প্রেস বা সাংবদিক লিখে দাপটে পথ চলছে তারা। প্রথমে দেখে বোঝার উপায় থাকেনা। এদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। চক্রের কেউ কেউ সম্পাদক কিংবা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেজে সাংবাদিকতার কার্ড বিক্রি করছে। এই সব বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত প্রতারক চক্রকে আটক করা হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করে।