ওয়ারী তালাবদ্ধ এবং বাস্তবতা
প্রকাশিত : ০৪:৪০ পিএম, ১৫ জুলাই ২০২০ বুধবার
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এলাকা ওয়ারী। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা আদি ঢাকা শহরের প্রথম পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা ওয়ারী। ঐতিহ্য বহনকারী ঢাকার বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান বলধা গার্ডেন ওয়ারীতে অবস্থিত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে অর্থাৎ উনিশ শতকের শেষভাগে সরকারি খাস জমিতে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসস্থলের জন্য একটি পরিকল্পিত এলাকা হিসেবে ওয়ারীকে বেছে নেওয়া হয়।১৮৮৪ সালে ঢাকার রাজস্ব প্রশাসন বা ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর ফ্রেডারিক ওয়্যার আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ওয়ারীকে একটি পরিকল্পিত এলাকা হিসেবে গোড়াপত্তন করেন। অনেকে মনে করেন তারই নামানুসারে “ওয়ারী”নামকরণ করা হয়।
গত শনিবার ৪.৭.২০২০ থেকে বৈশ্বিক সমস্যা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ওয়ারীতে লকডাউন চলছে। লকডাউন বা তালাবদ্ধ বলতে আমরা বুঝি জরুরি অবস্থায় নেওয়া একটি সুরক্ষিত পদ্ধতি, প্রয়োজনে কোন নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করতে বা ছেড়ে যেতে না দেওয়া।এই লকডাউন পদ্ধতি কতটা কার্যকর বা বসবাসরত জনগোষ্ঠী কি ভাবে এই লকডাউন কে সফল করছে?
ওয়ারীতে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষ ব্যবসায়ী। ইসলামপুর,সদরঘাট, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, পুরনো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাদের ব্যবসা সংক্রান্ত কার্য সম্পন্ন করে থাকে। এই সকল ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষ। যারা ব্যবসায়ীক সুবিধার্থে ওয়ারীতে বসবাস করে। এমন অনেক পরিবার আছে যারা সকালের নাস্তা করে ওয়ারীতে,দুপুরে খাবার খায় বিক্রমপুরে আবার রাতের খাবার ওয়ারীতে এসে খায়। কেরানীগঞ্জ,সিরাজদিখান, সিদ্ধিরগঞ্জ,সোনারগাঁ,কাচপুর,আড়াইহাজারের লোকদের ক্ষেত্রেও একই। সুতরাং ঘণ্টা খানিক সময়ের ব্যবধানে কতৃপক্ষের নোটিশে ওয়ারী এলাকা খালি করা সম্ভব।
যেখানে ১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষণায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৪ জুলাই লকডাউন বাস্তবায়ন শুরু করে। তাই ধরে নেওয়া যায় অধিকাংশ ওয়ারীর বাসিন্দারা ওয়ারী ছেড়ে নিজ এলাকায় অবস্থান করছে।
লকডাউন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনের সদস্যদের সাথে স্থানীয় একদল স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ওয়ারী একটি অভিজাত এলাকা এখানে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীদের বসবাস। যারা অসহায় দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষদের বিনামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিতরণ করছেন। স্থানীয় কমিশনারের সার্বিক সহযোগিতা ও নির্দেশনায় লকডাউন বাস্তবায়ন সহজ হচ্ছে।
আজ লকডাউনের অষ্টম দিন।আটকে পড়া মানুষদের করোনা টেস্টের জন্য অস্থায়ী বুথ করা হয়েছে।পরিসংখ্যানে দেখা যায় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রমতে, গত শনিবার থেকে গতকাল অর্থাৎ গত শুক্রবার ১০.৭.২০২০ পর্যন্ত ১৩৪ জনের করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন।গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে ৪৮ জনের করোনা পজিটিভ।গত বুধবার সর্বোচ্চ ২৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে, যার মধ্যে ১২ জন করোনা পজিটিভ।গত শুক্রবার এবং শনিবার যথাক্রমে ১৫ ও ১৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় যার ফলাফল আজ রবিবার (১২.৭.২০২০) আসবে।ধারণা করা হচ্ছে পজেটিভ এর পরিমাণ কম হতে পারে।
ওয়ারী একটি পরিকল্পিত এলাকা।এই এলাকায় যে ৮ টি রাস্তা লকডাউনের আওতায় পড়েছে সবকয়টি রাস্তা একই মাপের এবং সরু। রাস্তার মুখগুলো আটকে দিলে সম্পূর্ণ এলাকাই তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে যা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকদের বেগ পেতে হয় না।
পুরাতন ঢাকার অভিজাত এলাকা ওয়ারী।ওয়ারীর বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী শিক্ষিত এবং সচেতন।আমি মনে করি লকডাউন বা তালাবদ্ধ করে রাখলে যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণক থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তা ঠিক নয়।যদি না আমরা সচেতন হই।চলাফেরা এবং বসবাসের ক্ষেত্রে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অযথা রাস্তা ফাঁকা পাওয়ার সাপেক্ষে রাতে বা ভোরে সংঘবদ্ধ হয়ে আড্ডা বা জনসমাগম করা যাবেনা।আমরা সচেতন হলে ওয়ারী হবে করোনা সক্রামণ মুক্ত।আবারও আমরা সুন্দর পরিবেশে অতীতের ন্যায় মুক্ত আকাশে,মুক্ত বাতাশে,মুক্ত মনে পদচারণা করতে পারবো সেক্ষেত্রে লকডাউন বা তালাবদ্ধ তখনই কার্যকর হবে। ওয়ারী বাসী আমরা কি করতে পারলাম তার কার্যকরী ফল পেতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে ২৫ জুলাই পর্যন্ত।