দেশে করোনায় চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার ৩ শতাংশের বেশি
তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক,
প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ১৫ জুন ২০২০ সোমবার
করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বলে দাবি করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটি (এফডিএসআর)। তাদের দাবি, এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ চিকিৎসক মারা যাচ্ছেন।
এফডিএসআরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাস এবং এর সংক্রমণের লক্ষণগুলো নিয়ে ৩৬ জন চিকিৎসক মারা গেছেন, যার মধ্যে ছয়জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
এফডিএসআরের মহাসচিব ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুনের বরাত দিয়ে সংগঠনটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা. শাহেদ ইমরান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মইন উদ্দিন আহমেদ ১৫ এপ্রিল কোভিড-১৯-এ মারা যান। এ কারণে তিনিই দেশের প্রথম ‘শহীদ’ চিকিৎসক।
ডা. শাহেদ ইমরানের দাবি, সংক্রমণের কারণে ৫০ জন চিকিৎসক মারা গেছেন এবং একই রকম লক্ষণ রয়েছে, তাঁদের মধ্যে চারজন গত শুক্রবার এবং গত ১৩ দিনে ২০ জন ছিলেন। চিকিৎসকদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
'এই ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের মধ্যে সংক্রমণের সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে,' অভিযোগ করেন তিনি।
এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৭২ চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রয়েছেন বলেও জানান ডা. শাহেদ ইমরান। এর মধ্যে ৫৫০ জন সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন।
সংগঠনটির গবেষণামতে, এ পর্যন্ত মারা যাওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে ২৫ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এ ছাড়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রোগীদের ভেন্টিলেটর স্থাপনের সময় অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা সংক্রমিত হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি।
এফডিএসআরের মতে, চিকিৎসকরা ছাড়াও এক হাজার ১২০ জন নার্স ও ২০০ টেকনোলজিস্ট কোভিড-১৯ রোগে সংক্রামিত হয়েছেন এবং তিনজন নার্স মারা গেছেন।
আজ সোমবার পর্যন্ত বাংলাদেশে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৫২০ জন। এর মধ্যে মারা গেছে এক হাজার ১৭১ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এফডিএসআরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত অসংখ্য পুলিশ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১৯ জন মারা গেছে। সংক্রমণের সংখ্যার তুলনায়, পুলিশের মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
এফডিএসআরের মহাসচিব ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) বেশি না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা সংক্রমিত হচ্ছেন। তাঁদের জন্য যে পিপিই দেওয়া হয়েছে, তা মানসম্পন্ন নয়। তাঁর অভিযোগ, কীভাবে পিপিই লাগানো এবং বন্ধ করা যায়, পিপিই সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না করা, আইসিইউতে নেতিবাচক বায়ুচাপের অভাবের বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা এখন সংক্রমিত হয়ে মারা যাচ্ছেন।
ডা. মামুন বলেন, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের পিপিই কীভাবে ব্যবহার করবেন, সে সম্পর্কে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এর জন্য স্থান প্রয়োজন। বেশিরভাগ হাসপাতালে এসবের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, দেশে চিকিৎসকদের মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক। ইতালিসহ কয়েকটি দেশে আরো বেশি চিকিৎসক মারা যেতে পারেন, তবে তাঁদের মোট মৃত্যুর সংখ্যার তুলনায় এটি কম। তবে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশই রয়েছেন চিকিৎসকরা, যা অন্য কোনো দেশের চেয়ে বেশি। এই হার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও বেশি।
পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (পিএমএ) বরাত দিয়ে এফডিএসআর জানায়, সে দেশে করোনাভাইরাসজনিত মৃত্যুর মধ্যে ৩৩৭ জন চিকিৎসক। ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এফডিএসআর আরো জানায়, এক হাজার ২৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ আক্রান্ত রয়েছেন এবং এঁদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছেন।
আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ফেব্রুয়ারিতে নিশ্চিত করে যে, দেশজুড়ে কমপক্ষে ৩৩ হাজার ৮৩৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা সংক্রমিত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ৩৪ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া স্পেনে প্রায় ৫০ হাজার স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার সংক্রমিত হয়েছেন।
চিকিৎসকদের জন্য আলাদা হাসপাতালের দাবি জানান চিকিৎসকদের সংগঠন এফডিএসআরের নেতারা। কেননা, সময়মতো হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারায় এবং আইসিইউ না পাওয়ার কারণে চিকিৎসকরা মারা যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাঁদের।