কার্গো বিমানে আসছে পেঁয়াজ
প্রকাশিত : ০৮:১৬ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার
তুরস্ক, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আফগানিস্তান থেকে এবার কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রবিবার (১৭ নভেম্বর) থেকে জরুরি ভিত্তিতে এই পেঁয়াজ দেশে আনা শুরু হবে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে এবং এস আলম গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিসর, আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো বিমানযোগে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এর আগে আমদানি করা পেঁয়াজ নৌপথেই দেশে আনা হতো। বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন।
এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বকসী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে দেশের সব বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক না হবে, ততদিন কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানি চলবে।’ তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে পেঁয়াজ আমদানির জন্য একজন উপ-সচিবকে তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া, একজন উপ-সচিব মিসরে রয়েছেন।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ পরিবহনে কয়েক দিনের জন্য সমস্যা হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব কম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে। মূল্যও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। কেউ অবৈধভাবে পেঁয়াজ মজুত করলে, কারসাজি করে বেশি মুনাফার চেষ্টা করলে বা অন্য কোনও উপায়ে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টি করলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজারে অভিযান জোরদার করেছে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, মূল্য কম ও সহজ পরিবহনের কারণে এতদিন ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হতো। সম্প্রতি দেশটির মহারাষ্ট্রসহ কয়েকটি রাজ্যে বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে কিছু দিন আগে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ রফতানিতে মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস (এমইপি) নির্ধারণ করে দেয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এরপর মিয়ানমার থেকে এলসি ও বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। পাশাপাশি মিসর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। সম্প্রতি মিয়ানমারও পেঁয়াজের মূল্য বাড়িয়েছে। এর ফলে, দেশের বাজারেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে অনেকবার সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নিয়মিত আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানো ও নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ করা হয়েছে।
আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন ও সুদের হার কমানো হয়েছে। স্থল ও নৌবন্দরগুলোয় আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সে অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানি করা পেঁয়াজ খালাসও করা হচ্ছে।
দেশে পেঁয়াজের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি জোরদার করা হয়েছে। ৩৫টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিকেজি ৪৫ টাকা মূল্যে পেঁয়াজ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ কেনার সুযোগ পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। পেঁয়াজ দ্রুত পরিবহন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৪টি টিম প্রতিদিন ঢাকা শহরের বাজারগুলো মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও প্রতিটি জেলা প্রশাসন জেলার বাজারগুলোতে মনিটরিং জোরদার করেছে। ঢাকার শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো বড় বড় পাইকারি বাজারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।