শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এবারও আতিথিয়তায় ভাসবে নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুরা

নুরুল আফছারঃ

প্রকাশিত : ০৭:১৩ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের জন্য এবারও বিনা খরচে থাকা-খাওয়াসহ নানা সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার নোয়াখালী পৌরসভার উদ্যোগে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি সমন্বয় সভা হয়েছে।

আগামী ১ ও ২ নভেম্বর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। গত বছরও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য বিনা খরচে থাকা-খাওয়া, কেন্দ্রে যাতায়াত, প্রাথমিক চিকিৎসা ও নিরাপত্তাসহ নানা সেবার ব্যবস্থা হয়েছিল।

সমন্বয় সভায় পৌর মেয়র শহীদ উল্যাহ খাঁন সোহেল বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১ ও ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলেও মূলত ৩১ অক্টোবর রাত থেকেই ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা নোয়াখালীতে আসতে থাকবেন।
এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছে বলে তিনি জানান।

“ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিনা খরচে আবাসন, খাওয়া, কেন্দ্রে যাতায়াত, প্রাথমিক চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য, নোয়াখালী পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জেলা ক্রিয়া সংস্থা সহ সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, শুধু পৌরসভা থেকে ৪০০ জন সবুজ টি-শার্ট পরিহিত সেচ্ছাসেবক থাকবে পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতায়। রাখা হবে ৬টি বুথ, প্রতিটি বুথে থাকবে ৩০ জন করে সেচ্ছাসেবক। শহরের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, আবাসিক হোটেল ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে রাখা হবে শিক্ষার্থীদের। ১০০টি মোটরসাইকেল থাকবে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে।

এভাবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিও সর্বাত্মক সহযোগিতায় থাকবেন।

সভায় বক্তারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, সকল প্রকার সহযোগিতা করতে নোয়াখালীবাসী প্রস্তুত রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী পৌরসভার ওয়েবসাইটে সকল তথ্য দেওয়া হয়েছে।

পৌর মেয়র শহীদ উল্যাহ খাঁন সোহেলের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিদার উল আলম, জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস, পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন, সিভিল সার্জন মোমিনুর রহমান, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ সদস্য শিহাব উদ্দিন শাহীন, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম, নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, মসজিদের ইমাম ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কীভাবে কী করা হচ্ছেঃ 

পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সর্বাত্মক সহায়তার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি সর্বস্তরের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি।

নোয়াখালী পেরসভা মেয়র শহীদ উল্যাহ খাঁন সোহেল জানান, পৌর ভবন, পৌর সুপার মার্কেট, মেয়রের বাসা, বিআরডিবি ভবন, ক্রিসেন্ট গেস্ট হাউজ সহ পৌর এলাকার সবগুলো সমজিদে শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রী, ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যে আলাদা আলাদাভাবে থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হয়েছে।

সবার জন্য সকালের নাস্তা এবং রাতের খাবারের পাশাপাশি পৌরসভার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা নেওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা থাকছে বলে জানান তিনি।
মেয়র বলেন, এসব কাজ তদারিক জন্য এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সড়কে যানজট নিরসন এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবে।

“৩১ অক্টোবর সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিশেষ বুথ খোলা থাকবে। অনলাইনেও তথ্য সহায়তা করা হবে।”

সমন্বয় সভায় রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ সদস্য শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নোয়াখালী ইউনিট ভবন, এফপিএবি ভবন, জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন, মহামেডান স্পোটিং ক্লাব এবং শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে নোয়াখালী সরকারি কলেজের পুরাতন হোস্টেল এবং মাইজদী গালর্স একাডেমি ভবনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রেডক্রিসেন্ট ভবন এবং এফপিএবি ভবনে ছাত্রীদের থাকা-খাওয়া এবং বাকিগুলোতে ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

“এসব কাজ তদারকির জন্য যুব রেডক্রিসেন্টে স্বেচ্ছাসেবক দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা আবাসন, খাওয়া, চিকিৎসার পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলার কাজে সহায়তা করবে।”

পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ৩১ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এসব কাজে চার শতাধিক নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে থাকবে। সড়ক, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, পরীক্ষা কেন্দ্র সব সর্বত্র শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার বিষেশ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও মাঠে থাকবে।

জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, “একজন পরীক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক নোয়াখালী সীমানায় পৌঁছার সাথে সাথে তাদের দায়িত্ব আমারা নিয়ে নিচ্ছি। এ দায়িত্বের মধ্যে তার যাতায়াত, আবাসন, খাওয়া, নিরাপত্তা এবং জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেটা আমরা যথাযথভাবে পালন করব।”

তিনি বলেন, ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবেন। কোথাও কোনো অনিয়ন, বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোন প্রকার গুজব বা বিভ্রান্তি যাতে না ছড়াতে পারে সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

“আমরা চাই শিক্ষার্থীরা নোয়াখালী থেকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে যেন আমাদের এ জেলার আতিথেয়তার চিরায়ত ঐতিহ্যের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়।’

নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর-সুবর্ণচর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা হলে আনানেয়ার জন্য ৬০টি বাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে বিশুদ্ধ পানির বোতল এবং কলম রাখা হবে পরীক্ষার্থীদের জন্য।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিদার উল আলম বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য নোয়াখালীবাসীর এমন আয়োজন গোটা বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ৪৯টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কেউ এমটা চিন্তাই করতে পারে না। আপনারা কীভাবে যে কী করছেন, এটা চিন্তাই করা যায় না। এটা সত্যিই বিষ্ময়কর, অভিভূত হওয়ার মতো ঘটনা।

“এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমি নিজে গৌরব এবং অহংকার অনুভব করি।’