বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নাসার সহায়তায় এবার জনসংখ্যা গণনা হবে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত : ০১:০০ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার

টেকসই উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনা নেওয়ার স্বার্থে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রকৃত ও সঠিক হিসাব প্রয়োজন। প্রায় ১০ বছর জনশুমারি না হওয়ায় বর্তমানে মোট জনসংখ্যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদমশুমারি বা জনশুমারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চলবে গৃহগণনাও। ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে এবারের শুমারি। এ কাজে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) সহযোগিতা নেওয়া হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হবে আগামী বছর ১৭ মার্চ থেকে। এ দিন থেকেই জনশুমারি পরিচালনার কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি অনুমোদনও দিয়েছেন।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বিবেচনার জন্য জাতীয় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। আজ মঙ্গলবার এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। রাজধানীর শেরেবাংলা  নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকেরও চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

জনশুমারি ও গৃহগণনা নামের এই প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ। মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অনুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে এটি। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। জানা গেছে, প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ডিপিপিতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। পরে মন্ত্রীর দপ্তর এবং প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) পর্যালোচনায় ব্যয় কমিয়ে আনা হয়। ব্যয়ের বড় অংশ জোগান দেবে সরকার। এক হাজার ৫৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকাই সরকারের নিজস্ব। বাকি ১৮৩ কোটি টাকা যৌথভাবে জোগান দিচ্ছে ইউএনএফপিএ, ইউএসএইড, ইউনিসেফ ও ডিএফআইডি।

২০২৪ সালে গণনা শেষে শুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে শুমারি পরিচালনায় নাসার সহযোগিতা নেওয়া হবে। এ পদ্ধতিতে দশমিক ৫ মিটার এলাকাও চিহ্নিত করা যাবে সহজে। ফলে শুমারি সঠিক এবং নির্ভুল হবে। সাত দিনে মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু এর পেছনে থাকবে তিন বছরের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ। সব তথ্য সংগ্রহ করতে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ট্যাবসহ আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। তথ্যগুলোর সংরক্ষণও ব্যবহার সহায়ক হবে। যাতে যে কেউ চাইলে প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যান সেবা নিতে পারেন।

এবারের শুমারিতে বিস্তারিত আর্থসামাজিক তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। এতে ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও উন্নয়ন কর্মকা পরিচালনার উদ্দেশ্যে অন্যান্য তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণের জন্য তথ্য সরবরাহ করা হবে। সামাজিক বৈষম্য দূর করতে জাতীয় সম্পদের বণ্টন ও কোটা নির্ধারণে এ তথ্য কাজে লাগানো হবে। যাতে সঠিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সহজ হয়। এ ছাড়া শুমারির তথ্যের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণে একটি 'দারিদ্র্য মানচিত্র' করাসহ অন্যান্য উন্নয়ন পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে। এবারই প্রথমবারের মতো বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এই জনশুমারিতে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকরাও গণনার আওতায় থাকবেন। এতে প্রকৃত জনসংখ্যা এবং ভোগের আওতায় থাকা মোট মানুষের সংখ্যা জানা যাবে। শুমারির আওতায় প্রতিটি পরিবার ও সব মানুষকে আনতে একটি নির্দিষ্ট তারিখে গণনা শুরু করা হবে।

দেশে প্রতি ১০ বছর পরপর জনশুমারি হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে জনশুমারি হয়েছিল। সেই শুমারিতে জনসংখ্যা পাওয়া গেছে ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত জনশুমারিকে 'আদমশুমারি' বলা হতো। ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান আইনের মাধ্যমে আদমশুমারিকে জনশুমারি বলার বিধান করা হয়। ১৯৭৪ সালে দেশে প্রথমবারের মতো জনশুমারি হয়। ১৯৮১ সাল থেকে জনশুমারি ও গৃহগণনা শুরু হয় এক জরিপের মাধ্যমে।