রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৭ ১৪৩২   ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

তারুণ্যের ইবাদতে মুখর হোক মসজিদ

প্রকাশিত : ০২:১৬ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রোববার

অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার যুবসমাজই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। ঝড়-ঝাপটা ও বাতিলের কালো থাবা উপেক্ষা করে তারাই পারে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় বীরবিক্রমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। যুবকরাই পারে পরিবার, সমাজ ও দেশকে কুসংস্কারমুক্ত করে সোনালি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা ইসলামে যৌবনকালের গুরুত্ব সীমাহীন। এ সময়ের ইবাদত আল্লাহতায়ালার কাছে খুবই প্রিয়। এ সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ইরশাদ করেছেন- ‘সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার (আরশের নিচে) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ সে যুবক-যুবতী যে তার রবের ইবাদতের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি শরিফ)।

মসজিদ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন- ‘জনপদগুলোর মধ্যে মসজিদ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং বাজার তার কাছে সর্বাধিক অপছন্দনীয়।’ (সহিহ মুসলিম শরিফ)।

আল্লাহতায়ালা মসজিদকে জান্নাতের টুকরা বানিয়েছেন। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘মসজিদগুলো আসমানবাসীদের জন্য আলোকস্তম্ভ, যেমন নক্ষত্রগুলো পৃথিবীবাসীর জন্য আলোকমালা।’ এ কারণেই পৃথিবীর যে কোনো মসজিদ মুসলমানদের কাছে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন। সেখানে গেলে তাদের মনে এক আলাদাভাবের উদয় হয়। পাপমুক্ত হওয়ার বাসনা জাগে, পবিত্র জীবনযাপনে উৎসাহ বোধ করে এবং দ্বীন পালনে উজ্জীবিত হয়। মসজিদে যাওয়ার প্রতিদান সম্পর্কে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘কোনো ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় (নামাজ আদায় করার জন্য) যতবার মসজিদে যাতায়াত করবে, আল্লাহতায়ালা ততবারই তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির সামগ্রী তৈরি করে রাখবেন।’ (সহিহ বুখারি শরিফ)।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মুসলিম যুবক আজ মসজিদবিমুখ। আর এ কারণে তারা বিপথগামী হয়ে দেশ ও জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। আজ মুসলিম জাতির সামনে বিরাট প্রশ্ন- যুবসমাজ কেন মসজিদে যেতে আগ্রহী নয়? দু-এক কথার মাধ্যমে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া আদৌ সম্ভব নয়। মুসলিম যুবকদের এ অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। যে কোনো উপায়েই হোক না কেন, এ অবস্থা রোধ করতে না পারলে মুসলিম উম্মাহর বর্তমান সংকট দূর করা কখনই সম্ভব হবে না।

যেসব কারণে মুসলিম যুবসমাজ মসজিদে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে তার প্রধান কারণ বিজাতীয় অপসংস্কৃতির প্রভাব। বেলেল্লাপনা ও বেহায়াপনা যুবচরিত্রকে ধ্বংস করছে। বর্তমানে যুবসমাজ ধ্বংসে স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট, ফেসবুক প্রভৃতি প্রচার ও যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসবে আসক্ত মুসলিম যুবকরা মসজিদের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।

যুবসমাজের মসজিদবিমুখ হওয়ার পেছনে বন্ধুবান্ধবের প্রভাব ও ব্যাপক। বন্ধুবান্ধব ও সঙ্গী-সাথীর প্রভাব যুবসমাজের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে অনেক যুবক ধূমপান, মাদকাসক্তি, টিভি, সিনেমা, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি কুঅভ্যাসে জড়িয়ে পড়ে। এসব কারণে তারা মসজিদের প্রতি আগ্রহ হারায়। এ জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৎ বন্ধু ও সত্যবাদী সাথীদের সঙ্গে থাকার নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেছেন- ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।’ (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-১১৯)।

যুবসমাজের মসজিদের প্রতি অনীহার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী পারিবারিক কারণ। কেননা পরিবার হচ্ছে সন্তানের প্রথম পাঠশালা। বাবা-মার কারণে অনেক যুবক ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়। অনেক বাবা-মা আছেন যারা নিজেরা নামাজ আদায় করেন এমনকি তাহাজ্জুদ নামাজেও খুবই যত্নবান কিন্তু তাদের যুবক ছেলেমেয়ে নামাজ আদায় করে কিনা সে ব্যাপারে কোনো খোঁজখবর রাখেন না। সন্তানকে মসজিদমুখী করার ক্ষেত্রে বাবা-মা তথা পরিবারের ভূমিকা মুখ্য। এ সম্পর্কে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

‘তোমরা সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান করো। দশ বছর বয়সে নামাজ আদায় না করলে তাদের প্রহার করো এবং বিছানা পৃথক করে দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ শরিফ)।

পিতা যদি নিয়মিত সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদে গিয়ে জামায়তের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন, তাহলে সন্তানরাও যখন বড় হবে তখন তারাও মসজিদে যাতায়াত করবে।

যুবসমাজকে জামায়াতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও মসজিদে যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানানো জরুরি। যুবকদের মসজিদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে মসজিদের ইমাম ও মসজিদ কমিটিরও বিশেষ ভূমিকা থাকতে হবে। যুবকদের সঙ্গে উত্তম আচরণ এবং তাদের মসজিদের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া মসজিদ কমিটির অন্যতম দায়িত্ব। ইসলামের শত্রুরা যুবকদের ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্ত করতে চক্রান্ত করছে। কাজেই যুবকদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে।

যৌবনকাল জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের মোক্ষম সময় এটি। কিন্তু অনেক যুবক যৌবনের উচ্ছলতায় বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ভুল পথে পা বাড়ায়। চরিত্র গঠনের জন্য ইমানের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর যেসব প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন অন্যতম হল নামাজ কায়েম করা। তাই সমাজের যুবকদের মসজিদমুখী জীবনযাপন করার কর্মসূচি নেয়া জরুরি জীবনের পাথেয়। ইসলাম এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করেছে। হজরত লুকমান (আ.) তার ছেলেকে দেয়া উপদেশ অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজিদে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- ‘হে আমার প্রিয় বৎস! নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, সৎ কাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজে নিষেধ করো এবং তোমার ওপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয় এগুলো দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (সূরা লুকমান, আয়াত নং-১৭)।

আমাদের যুবসমাজকে মসজিদবিমুখতা থেকে রক্ষা করতে হবে। তাহলেই পথভ্রষ্ট যুবসমাজ আলোর পথে ফিরে আসবে।