সবাই তো সুখি হতে চায়
নিউজ ডেস্ক
কক্সবাজার সৈকত
প্রকাশিত : ০৪:১১ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার

‘সবাই তো সুখি হতে চায়’ মান্না দে'র গাওয়া শ্রোতা নন্দিত এই গান ব্যক্তি জীবনে সকলের একান্ত চাওয়া। চেষ্টা করে কেউ সুখি হয় কেউবা হেরে যায় জীবনের কাছে। জীবনের সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। কেউ দু’মুঠো খাবার পেলে সুখি, কেউবার কোটি টাকায়। মানুষ তার জীবনে সুখ, দুঃখ নিয়ণ্ত্রণ করতে পারে। কিভাবে? নিজ কর্ম দিয়ে। কথায় আছে না, ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’।
দেখুন, আপনি যদি একটা নিম গাছ রোপণ করেন তা থেকে তেতো ফল পাবেন। আর যদি আম গাছ লাগান তবে পাবেন সুমিষ্ট ফল। হিসেবটা খুব সহজ। কেউ যদি তার সময়ের গুরুত্ব বোঝে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সততার সাথে পরিশ্রম করে তবে সাফল্য তার ঘরে কড়া নাড়বেই। ট্রেন ধরতে হলে সময় মতো প্লাটফরমে অপেক্ষা করতে হবে। ট্রেন চলে যাবার পরে অপেক্ষা করে লাভ কী! কোনো কিছু অর্জন করতে হলে প্রথমে চাই আত্মবিশ্বাস ও পরিকল্পনা। আর তা হতে হবে বাস্তবভিত্তিক। পর্যাপ্ত গবেষণা করে স্থির করতে হবে সুপরিকল্পনা, যা অনুযায়ীল আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার লক্ষ্যে।
আমি বিশ্বাস করি, লেগে থাকলে, চেষ্টা থাকলে অসাধ্য সাধন সম্ভব। তবে সবার আগে চাই প্রকৃত শিক্ষা। যে শিক্ষা আপনাকে শুধু একটা সার্টিফিকেট দিবেনা, দিবে ইতিবাচক সকল গুণাবলী। স্কুল জীবনে পড়া কবিতার দুটো লাইন মনে পড়ছে ‘তরুলতা সহজেই তরুলতা,কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় মানুষ’। জন্ম নিলেই মানুষ হওয়া যায়না। মানুষ হতে হয়। যে মানুষের থাকবে বিবেক, সততা, সহমর্মিতা। যার কাছে অন্যরা নিরাপদ। সাফল্য অর্জন করতে প্রথমে নিজেকে চিনতে হবে, জানতে হবে। আমি কী পারি আর কী পারি না সেটা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। সাঁতার জানা না থাকলে নদীতে লাফ দেয়া বোকামি। সব মানুষ একই রকম মেধা নিয়ে জন্মায় না। আপনি যোগ্যতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন এবং নিজের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। আইনস্টাইন একজনই আবার অনেকে চেষ্টা করলেও আপনার মতো হতে পারবে না। আত্মবিশ্বাস মূল শক্তি গন্তব্যে পৌঁছাবার প্রতিযোগিতায়। প্রবল ইচ্ছা শক্তি ছাড়াও কোনো কিছু অর্জনের পথের কষ্টগুলো, ব্যর্থতাগুলো জয় করা যায় না। আমিই পারব আমাকে দিয়ে হবেই, এ মানসিকতা ভীষণ জরুরী।
পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি থাকলে পরীক্ষা ভালো হবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনি সাফল্য পেতে প্রস্তুতি নিতে হবে। তৈরি হতে হবে। বোকারা ভাগ্যের দোষ দেয় এবং সুযোগের অপেক্ষা করে আর বুদ্ধিমানেরা সুযোগ সৃষ্টি করে। আপনি কোন দলে? নিজের দুর্বলতাগুলো নির্দিষ্ট করুন এবং তা জয় করুন। যেমন ইংরেজি লিখতে ও বলতে পারা। কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষতা থাকা, এই সময়ের প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, লাইফ স্টাইল, ফ্যাশন, মুভি ইত্যাদি বিষয়ে সম্পৃক্ত থাকা ইত্যাদি। অন্যদের থেকে একটা আলাদা গুণ আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। ধৈর্য্য ধরে অধ্যাবসায় চালিয়ে যেতে হবে নিয়মানুবর্তিতা মেনে। মনে রাখবেন ভোরের বিশুদ্ধ বাতাস সেই পান করতে পারে যে আরামের ঘুম ছেড়ে ঘর ছেড়ে বাইরে আসে। জীবন একটাই এবং তা অসীম নয়। তাই সময় কাজে লাগাতে হয়। আপনার সাফল্যের পথে অনেক বাধা আসবে, সে বাধা অতিক্রম করতে হবে বুদ্ধি,সাহস,ধৈর্য্য এবং যোগ্যতা দিয়ে।
আমি হারবো বলে আসিনি। অন্যরা পারলে আমি কেন পারবো না? এরকম মানসিকতা আপনাকে পৌঁছে দেবে সাফল্যের শহরে। জিরো থেকে হিরো হওয়ার অনেক গল্প আছে এই পৃথিবীতে।এই গল্পগুলো যারা বাস্তবে মঞ্চস্থ করে দেন তারা কি অন্য গ্ হের মানুষ? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন অত্যন্ত গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি একসময় মুচির দোকানেও কাজ করেছেন।পাশের দেশ ভারতের প্রেসিডেন্ট এ পি জে আবুল কালাম ছোট বেলায় পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। দুর্বল ছাত্র এডিসন গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা,বৈদ্যুতিক বাতিসহ বহু যন্ত্র আবিষ্কার করে আমাদের ঋণী করে গেছেন। Harry Potter এর লেখক জে কে রাউলিংকে প্রকাশক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এই ভেবে যে এই বই ছাপালে আদৌ বিক্রি হবে কিনা সেই সন্দেহে। এই বই পরে তাকে কোটিপতি বানিয়েছে।
ছোটবেলায় ওয়াল্ট ডিজনি সম্পর্কে টিচার বলেছিল,তাকে দিয়ে কিছু হবে না। পরবর্তীতে জনপ্রিয় কার্টুন মিকি মাউস এর স্রষ্টা হন তিনি। চায়ের দোকানে কাজ করা ছেলে মেসি আজ বিশ্ব সেরা ফুটবলার। আমাদের দেশেও আছে এমন অনেক উদাহরণ।
আজাদ প্রোডাক্টস এর মালিক জনাব আজাদ এর পথ চলার শুরুটার গল্প আমরা সবাই জানি। সবকিছু হবে যদি আপনি সুস্থ থাকেন এবং সুস্থ জীবন যাপন করেন। Healthy খাবার খাবেন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। নেতিবাচক মানুষের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন। যারা ধূমপায়ী, মাদকাসক্ত, অসৎ তাদের কাছ থেকে আপনি ভালো কিছু পাবেন না। নির্দিষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন। বেডরুম আর ড্রইং রুমের পার্থক্য যদি বোঝেন তবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে পোষ্ট দেবেন না। আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।
একটা গাড়ি চালাতে হয়।গাড়ি নিজে চলতে পারে না। ড্রাইভার যেমন চালাবেন গাড়ি সেভাবেই চলবে। আপনি আপনার জীবনের গাড়িটা কিভাবে চালাতে চান? টেলিভিশন দেখা সীমিত করুন। দিন/সপ্তাহ শুরুর আগে তার পরিকল্পনা করুন। বিশ্বস্ত উৎস থেকে পরামর্শ নিন। উল বুনে বুনে পূর্ণাঙ্গ সোয়েটার তৈরি করা দেখেছেন? দুটো কাঠি দিয়ে কত ধৈর্য্য নিয়ে কাজটা করতে হয়। এভাবেই র্ধৈয্য নিয়ে সঠিকভাবে জীবনটাকে বুনতে হবে।