শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৩ ১৪৩১   ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

বন্যার মহামারী ছোবল বিশ্বব্যপী

বাংলাদেশসহ ৪ দেশে ৬০০ জনের মৃত্যু

সাজ্জাদ হোসেন

প্রকাশিত : ০৪:৩৫ পিএম, ২৮ জুলাই ২০১৯ রোববার

বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও নেপালে বন্যায় ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, “চারটি দেশে বন্যায় অন্তত আড়াই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে ৫ লাখ মানুষ।”

জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “আমার ত্রাণের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ,ভারত,নেপাল ও মিয়ানমার দুই কোটি ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।”

ভারতের আসাম, বিহার, উত্তর প্রদেশের কিছু অংশ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এক কোটিরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ লাখই শিশু। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্গত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছে।

এসব রাজ্যের মধ্যে আসামেই প্রায় দুই হাজার স্কুল বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ৪০ লাখেরও বেশি লোক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। মিয়ানমারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বন্যা আক্রান্ত লোকজন ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে দেশটিতে ৪০ হাজারেরও বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নেপালে প্রায় ৬৮ হাজার ৬৬৬ জন সাময়িক বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। বন্যায় দেশটিতে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ জনই শিশু।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই চারটি দেশেই জাতিসংঘ কাজ করছে বলে জানিয়ছেন ফারহান হক। ভারতীয় নৌবাহিনী হেলিকপ্টার, জরুরি সেবাপ্রদানকারী নৌকা এবং ডুবুরি দল ইত্যাদির মাধ্যমে মুম্বাইয়ে বন্যায় আটকে পড়া একটি ট্রেন থেকে অন্তত ১০৫০ জন যাত্রীকে উদ্বার করেছে। গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণের ফলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে শহরটি।

গত শুক্রবার শেষ রাতে মুম্বাই থেকে কোলহপুরের উদ্দেশে মহালক্ষ্মী নামের ওই ট্রেনটি ছেড়ে যায়। কিন্তু বন্যার কারণে গতকাল সেটি মাত্র ৬০ কিলোমিটার যেতে পারে। কিন্তু প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যা ছাড়াও রেল লাইন পাঁচ থেকে সাঁত ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়।

মুম্বইয়ের অদূরে ছোট শহর ওয়াঙ্গানির কাছাকাছি গেলে উপায় না পেয়ে ট্রেন বন্ধ রাখা হয়। ট্রেনে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাত্রীদের উদ্দেশে জানান, তারা যেন কেহ ট্রেন থেকে না নামে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
শনিবার বেলা ১১টায় সাভারের ধলেশ্বরী নদীতে নৌভ্রমণে এসে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ধানমন্ডি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিন শিক্ষার্থী।
নিখোঁজ আরও দুই শিক্ষার্থী হলো- ওই কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী (১৭) ও রাজন (১৭)।
ফায়ার সার্ভিসের সাভার শাখার সিনিয়র স্টেশন মাস্টার লিটন আহমেদ জানান, রোববার সকাল থেকে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের দু’জন ডুবুরি এবং ১০ জন সদস্য এ অভিযানে কাজ করছে। এছাড়া আমিনবাজারের তুরাগ নদীতেও আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রাজবাড়ীতে বাবার সঙ্গে নদীতে গোসল করতে নেমে স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে আলফি নামের সাত বছরের এক শিশু। বুধবার দুপুর ১টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের গঙ্গপ্রাসাদপুরের সুতা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ আলফি পার্শ্ববর্তী বড়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. মিলনের ছেলে। সে চরনারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্র।
রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক শওকত আলী জোয়ার্দার জানান, তার নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের ১০ জনের একটি টিম উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। তাদের সঙ্গে স্থানীয়রাও যোগ দেয়। পরে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে মৃত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বন্যায় দেশের ১৪ জেলায় এ পর্যন্ত ৭৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। আজ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১০ জুলাই উজান থেকে নেমে আসা পানি ও দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে ২৮ জেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হয়।
তিনি জানান, বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলবীবাজার, নেত্রকোণা, শেরপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও সিরাজগঞ্জ।