তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু : আরও ৩ তদন্ত কমিটি, এখনো হয়নি মামলা
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:৪৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ রোববার
গাজীপুরের শ্রীপুরে বিআরটিসির দোতলা বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ঘটনায় রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ৩টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট থানায় কোনো মামলা হয়নি।
দুই তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে এদিন দুপুর সোয়া ২টায় নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আকমল হোসেন।
বিআরটিসির পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর বিআরটিসি বাস ডিপো ম্যানেজার (অপারেশন) রাকিবুল হাসান শুভ।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আকমল হোসেন বলেন, ঘটনার পর খবর পেয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরপর রাতে পল্লীবিদ্যুতের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আসে। এ ছাড়া রাতেই এ ঘটনায় দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটি গঠন করা হয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ প্রধান কার্যালয় থেকে। অপরটি গঠন করে ময়মনসিংহ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। প্রধান কার্যালয় থেকে গঠন করা কমিটি আট সদস্য বিশিষ্ট ও অপরটি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ময়মনসিংহ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি।
তিন সদস্যের কমিটির প্রধান হলেন—ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ি জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
আট সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন—পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম মল্লিক।
গাজীপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) আফজাল হোসেন বলেন, দ্বিতল বাসে চড়ে পিকনিকে যাওয়ার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো শ্রীপুর থানায় কেউ মামলা করেনি। মামলা হলে এর প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পল্লী বিদ্যুতের পাওয়া তথ্য সূত্রে সায়মিক বরখাস্তরা হলেন—ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম, সদর-কারিগরি) কমলেশ চন্দ্র বর্মন, গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান, এজিএম মো. তানভীর সালাউদ্দিন, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মতিউর রহমান, লাইনম্যান পারভেজ মিয়া, আবুল কাশেম ও শাখাওয়াত হোসেন।
এর আগে গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে আঞ্চলিক সড়কে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা সবাই গাজীপুরের ইসলামিক ইউনির্ভাসিটি অফ টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে মোট ৪৬০ জন বিআরটিসির ছয়টি দ্বিতল বাসে চড়ে বার্ষিক পিকনিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া রিসোর্টে যাচ্ছিলেন। গন্তব্যের মাত্র দেড় কিলোমিটার আগে শেষের বাসটি সড়কে ঝুলে থাকা পল্লীবিদ্যুতের তারে জড়ি যায়। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ সময় আরও দুই শিক্ষার্থী আহত হন।
নিহতরা হলেন—ফেনীর মাস্টারপাড়া এলাকার মোতাহার হোসেনের ছেলে মীর মোজাম্মেল নাঈম (২৩), রাজশাহীর রাজপাড়া ডিঙ্গাব এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে জোবায়ের আলম সাকিব (২২) ও রংপুর সদরের ইমতিয়াজুর রহমানের ছেলে মুবতাছিন রহমান মাহিন (২২)। আহত কাবিদুল ইসলাম আলিফ (২২) ও নাফিজ আলম খান (২২) চিকিৎসাধীন। তারা সবাই মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের ছয়টি দ্বিতল বাসের মধ্যে সামনে থাকা পাঁচটি বাস গন্তব্যে চলে গিয়েছিল। শেষের বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে।