ক্যারেক্টার ইজ লস্ট অল ইজ লস্ট
প্রকাশিত : ০১:১২ পিএম, ২০ মে ২০১৯ সোমবার

প্রকৌশলীরা হলেন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ। গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে ব্যবহারিক সমস্যার নিরাপদ এবং অর্থনৈতিক বিচারে গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজাই প্রকৌশলীদের কাজ।
প্রকৌশলী শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Engineer এসেছে লাতিন Ingenium থেকে, যার অর্থ চালাকি। তবে গত কয়েক শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের পর ক্রমাগত প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই শব্দের অর্থটারও খানিকটা পরিবর্তন ঘটেছে।
বর্তমানে প্রকৌশলী বলতে ব্যবহারিক বিজ্ঞানীদেরকে বোঝানো হয়। ওপরের রাস্তার ছবিটি দেখার পর মনে হচ্ছে বাংলাদেশে Ingenium এর অর্থ চালাকি নয় এতো দেখছি বোকামি। সর্বনাশ! এই ছবিটি দেখার পর আমার প্রশ্ন প্রকৌশলীদের কাছে আপনারা কেমন আছেন? (যারা বিশেষ করে এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত না)। দেশের সবচেয়ে ভালো ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত প্রকৌশলী বা ডাক্তার হয়। বাবা-মা, পরিবার, সমাজ এমনকি দেশ, এদেরকে নিয়ে গর্ব করে। এত কষ্ট করে লেখাপড়া শিখে শেষে যদি বোকাই হবি তাহলে কি দরকার ছিল লেখাপড়া করা।
চুরি বা ডাকাতিই যদি করবি তবে শুরু থেকে ঐ প্রাকটিসটাই তো করতে পারতিশ, তাহলে ধরা পড়তিনা। বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়। এটাই কি বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিচয়? ভাবতেও ভয় হচ্ছে। আমরা সবাই ভালো আছিতো?
যে সমস্ত শিক্ষক, বাবা-মা এদের পেছনে অর্থ, স্বার্থ, ভালোবাসা দিয়েছেন তারাও বা কেমন আছেন? যদি সত্যি সত্যিই ক্লাসের পেছনে বসা ছেলেটি যে হয়তো তখন বেস্ট স্টুডেন্ট ছিল না, আজ যদি সেই ছেলেটি রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে উঠে বেস্ট স্টুডেন্টদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায় তবে বলতে হবে সেই পেছনে বসা ছেলেটিকে; হোয়াট এ গ্রেট এ্যাসিভমেন্ট, হোয়াট এ গ্রেট সাকসেস! ভালো ছাত্র হয়ে সারা জীবন যারা সবার মাথার মণি হয়ে থেকেছে। পরবর্তিতে তারা দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়ের দায়িত্বে মোটা অর্থে, সুন্দর পরিবেশে, গাড়ি-বাড়িসহ বসবাস করছে। তাদেরকে আজ জাতি ঘৃণা করবে, ধিক্কার দেবে বা দুর্নীতিবাজ বলবে ভাবতেও গা শিহরে উঠছে! শিক্ষার প্রতিফলন যদি এমনটিই হয় তবে বন্ধ করে দেয়া হোক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
যে শিক্ষাগ্রহণে সুশিক্ষার প্রতিফলন বা নৈতিক মূল্যের পরিকাঠামো ঘটেনি কী দরকার তাহলে এ ধরণের শিক্ষার? শুনেছি অভাবে হয় স্বভাব নষ্ট, কিন্তু এদের স্বভাব নষ্ট হওয়ার পেছনে কি কারণ রয়েছে? আমি এর আগেও লিখেছি যদি বাবার ইনকাম হয় পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং তার খরচ ১০০ হাজার হওয়ার পরেও যদি সেভিংস থাকে তবে ছেলেমেয়ে বা স্ত্রীর কি দায়িত্ব হওয়া উচিত? বাবাকে জিজ্ঞাসা করা হিসাবের গড় মিলের কারণ।
যদি জেনেশুনে সে কাজ না করা হয় তবে বাবার অন্যায়ের সঙ্গে পুরো পরিবার জড়িত। আমি তুমি সে মিলে আমরা, মানে পুরো দেশ জড়িত। কি আশা করতে পারি নতুন প্রজন্মদের কাছ থেকে? আম গাছের তলে যেমন আম পড়ে ঠিক অপরাধীর পরিবারে অপরাধীরই জন্ম হয়। তাহলে কি এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায়ই নেই? আমার লেখা পড়ে হয়তো অনেকে রেগে যাবে যেমনটি রেগেছি আমি। পার্থক্য এখানেই আমি চেষ্টা করছি আমাদের ভুলকে শোধরানোর কারণ বাংলাদেশের বদনাম হওয়া মানে আমারও বদনাম। আমরা সবাই জানি মৃত্যু অনিবার্য, শুধু কখন সেটাই অজানা।
আদৌ কি সম্ভব নয় পরিবর্তন আনা? আদৌ কি সম্ভব নয় অন্যায়কে উপেক্ষা করা? হয়তো সম্ভব হয়ত সম্ভব নয়। একটি বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে লেখার ইতি টানি তাহলে।
এক সুইডিশ বন্ধু স্টক শেয়ারের ব্যবসা করতে শুরু করে আমার সঙ্গে। আমি বেশ আবেগপ্রবণ (Impulsive) তারপর ধৈর্যও খুব একটা বেশি না। আমার ব্যবসার প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা লস করেছি। তবে এত টাকা লস হতে সময় লেগেছে ছয় বছর। আমার লসে পরিবার না খেয়ে থাকেনি কারণ সে টাকাগুলো ছিল আমার খরচের পর সেভিংস। আমি জানতাম লস হলে শুধু টাকাগুলো যাবে।
কিন্তু লাভ হলে অনেক কিছু করতে পারবো যা রেগুলার চাহিদার বাইরে। অন্যদিকে বন্ধুর স্টকের ব্যবসা ভালোই চলছিল। তার শুধু লাভের পর লাভ, কখনও লস হয়নি। তার পুঁজির অংক শুরুতে ছিল আমার থেকে কম পরে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকায়। সে বেশ কৃপণ হয়েছে, তারপর তার সময় নেই পরিবারের খোঁজ খবর নেয়ার, শুধু টাকা আর টাকা। সবকিছু থাকতেও তার বউ তাকে ছেড়ে চলে গেল। আমি একটু অবাক! বন্ধু টাকায় পাগল হয়েছে। হঠাৎ আমেরিকার ব্যাংক লেহম্যান ব্রাদার্সের পতন ২০০৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল আর্থিক প্রতিষ্ঠাণগুলির ব্যর্থতার ফলে ইউরোপে কয়েকটি ব্যাংক ব্যর্থতা এবং বিশ্বব্যাপী স্টক ও পণ্যগুলির মূল্যের তীব্র হ্রাস ঘটে।
বন্ধুর বেশির ভাগ স্টক ছিল ব্যাংক রিলেটেড। হঠাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধু লস করতে শুরু করে প্রায় অর্ধেক পুঁজি। তার মন খুবই খারাপ, আমি তাকে সান্তনা দিতে চেষ্টা করেছি অনেক। কয়েক দিন যেতে জানলাম বন্ধু চার তালা থেকে লাফ মেরে জীবনের অবসান ঘটিয়েছে। তার সম্পদের অর্ধেক থাকতেও সে মেনে নিতে পারেনি বাকি পুঁজির ক্ষতি। তার ভাবনায় ঢুকেছিল ‘পানির গ্লাস অর্ধেক খালি’ সে অন্যভাবে ভাবতে পারতো যেমন ‘পানির গ্লাস অর্ধেক পূর্ণ’।
আমার লস হয়েছে পুরো ক্যাপিটাল তবে মনকে লস করিনি। কারণ জানতাম “When wealth is lost, nothing is lost; when health is lost, something is lost; when character is lost, all is lost.” আমার কাছে জীবন, পরিবার এবং ভালোবাসার মূল্য বেশি তাই অতি লোভ কখনও আমাকে গ্রাস করতে পারেনি। সর্বোপরি ব্যক্তিজীবনে আমি মনে করি প্রশান্তিময় জীবন গড়ায় আমরা যেন সবাই সচেষ্ট হই। ভালো কাজ, সততা ও মনুষ্যত্ব মানুষকে মহান করে। মানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধন করে। আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করার ইচ্ছে যে মনে সে মনের মানুষ সাধারণত অন্যায় কাজ করে না।