সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪   আষাঢ় ২৩ ১৪৩১   ০১ মুহররম ১৪৪৬

মুন্সীগঞ্জে ড্রেজারে বালু উত্তোলনে বর্ষায় ভাঙন আতংক

স্টাফ রিপোর্টার:

প্রকাশিত : ০৪:২৬ পিএম, ২ জুলাই ২০২৪ মঙ্গলবার

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার সীমানাধীন মেঘনা নদী পাড়ের চারকালিপুর,ষোলআনীসহ কয়েকটি গ্রাম ঘেঁষে চলছে শতাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ। এতে বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে ভাঙন আতঙ্কে ভুগছে নদী পাড়ের কয়েক শ' পরিবার।


জানা যায়, উপজেলার চরকালিপুর, নয়ানগর, ও ষোলআনী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনার বালু মহাল ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বালু মহালটির ১২৮ একর এলাকা জুড়ে মেঘনা নদীর বুকে বালু উত্তোলন করা যাবে। এ বালু মহালটি ইজারা পেয়েছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড একটি কোম্পানি। তবে অভিযোগ উঠেছে মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের বৈধ ইজারা নিয়ে গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছেন এই ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। এতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বসতভিটা আর ফসলি জমি মেঘনায় বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। মেঘনা তীরের চর কালীপুরা গ্রামের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে থাকা বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে বর্ষায় জোয়ারের সময় হাঁটু পর্যন্ত পানি হয়। দিনের বেলায় ওই জমি থেকে কিছুটা দূরে বালু উত্তোলন করা হলেও রাতের আঁধারে জমি ঘেঁষেই বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলে।

 


সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় মেঘনা নদী তীরবর্তী উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনী ও চরকালিপুর, নয়ানগর, রমজানবেগ, মৌজা এলাকায় বসবাস বাড়ির অনেকটাই কাছাকাছি এসে বালু উত্তলন করছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্টাকচার লিমিটেড সহ ও অন্যান্য ড্রেজার মালিক কর্তৃপক্ষ। 

 


গ্রাম গুলো মেঘনা নদী ভাঙ্গন কবলিত হয়ে পড়ার আশঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, স্মরনাতীত কাল থেকেই মেঘনা নদী স্থানীয় অধিবাসীদের জীবন জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই সব মৌজার ফসিল ক্ষেত (জমি)। এই জনপদের পাশ দিয়ে মেঘনা নদীর শাখা নদী অতিবাহিত হওয়ায় নদীর ভাঙ্গনে বিভিন্ন চর ভেসে উঠেছে। এইসব চরগুলোতে চাষাবাদের মাধ্যমে স্থানীয় দরিদ্র-পীড়িত জনগনের জীবন জীবিকা অনেকাংশেই নির্ভর করে ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষার্থে বিভিন্নভাবে উপকার করে আসছে তা বর্ণনাতীত। চরগুলোতে বিভিন্ন মৌসুমে চীনাবাদাম, মিষ্টি আলু, করলা, শসা ইত্যাদি চাষাবাদ হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে কিছু স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহলের সহযোগীতায় এসব চরাঞ্চলের ১০-১৫টি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দাকে বিপন্নের দিকে ঠেলে দিয়ে চরের সন্নিকটে ম্যাক্স ইনফ্রাস্টাকচার লিমিটেড সহ ও অন্যান্য ড্রেজার মালিক অবৈধভাবে শতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে আসছে। এভাবে ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং নদীর পাড়গুলো মারাত্মক ভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে বলে দাবি করছে স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে কয়েকটি গ্রামের চাষযোগ্য জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

এ সব এলাকার সাধারন জনগন ভূমিহীন, বাসস্থানহীন ও কর্মহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। অবৈধভাবে মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে আজ পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে এবং অন্যদিকে মেঘনা নদী তীরবর্তী বসবাসরত হতদরিদ্র মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন স্থানীয়রা। তাছাড়া বালু উত্তোলনকারী শ্রমিকদের যেখানে সেখানে মলমুত্র ত্যাগের মাধ্যমে পানি দূষণের ফলে মেঘনা নদীর পানি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের অযোগ্য ও সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে যা মানুষের জীবন-জীবিকা ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।

 

তাছাড়া চরকালিপুর(ভেরুমোল্লাহ কান্দি) গ্রামের পাশেই শতাধিক ড্রেজার মেশিনের অতিরিক্ত শব্দ দুষনের ফলে স্থানীয় মানুষের জীবনযাপন ও ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া তারা আরো বলেন এভাবে বালু উত্তোলন যদি ক্রমাগত অব্যাহত থাকে তাহলে উল্লেখিত ৪টি মৌজার অর্ন্তগত ১০-১৫টি গ্রামের শত শত ঘরবাড়ী ফসলী জমি গাছপালা নদীপাড়ে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাজার সহ অনেক জায়গাই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে হাজার হাজার এলাকাবাসী আজ চরম আশংকা, দুঃচিন্তা ও নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে। জনগনের সার্বিক মঙ্গলার্থে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্টাকচার লিমিটেড সহ ও অন্যান্য ড্রেজার মালিক কর্তৃক নয়ানগর, রমজানবেগ, যোলআনী ও চরকালিপুরা মৌজা হতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন অনতিবিলম্বে স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এখণ প্রয়োজন হয়ে পরেছে বলে জোরালো দাবি করছেন স্থানীয়রা। 


এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন বলেন, সীমানা অতিক্রম করে বালু কাটার কথা শুনেছি। উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র - নয়া দিগন্ত।

এছাড়া গ্রামের জুলহাস প্রধান এবং আক্কাস প্রধান বলেন, গ্রামের সাথ লাগোয়া ১২০ শতক জমির পরেই মেঘনা নদী। বালু উওলনের ফলে নদী ভাঙনে আমরা বাড়ি ঘর হারাতে পারি।


তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ বলেন, সরকারি নিয়ম মেনেই ইজারা নিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। 
নির্ধারিত সীমানার বাহিরে কেন অবৈধভাবে বালু উত্তলন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে ম্যাক্স ইনফ্রাস্টাকচার লিমিটেড কতৃপক্ষকে কল করলে ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। 

সর্বোপরি, মুন্সীগঞ্জে ড্রেজারে বালু উত্তোলনে বর্ষায় ভাঙন আতংক দিন দিন বাড়ছে। সীমানা অতিক্রম করছে নাকি করেনি সেই প্রশ্নকে উর্ধে রেখে প্রশাসনকে নজর দেয়া উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় জনগন।