বড়লেখায় কনকনে শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন
রেদওয়ান আহমদ, বড়লেখা প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত : ০৭:১০ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ রোববার

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে মানুষ। বিশেষ করে গ্রামের স্বল্প আয়ের গরিব ও শ্রমজীবী মানুষ বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শীতে কষ্ট পাচ্ছে গবাদি-পশু। এদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে গৃহস্থ কৃষক ও খামারিরা। গত কয়েকদিন থেকে এই জনপদে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
হাকালুকি হাওর আর চা বাগান ঘেষা উপজেলার মানুষ শীতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তীব্র শীতের কারনে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। দেখা দিয়েছে নিউমোনিয়া সহ বিভিন্ন প্রকার ঠান্ডাজনিত রোগ। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জড়সড় হয়ে পড়েছেন হাওর ও চা বাগানের মানুষ। গত বুধবার থেকে সূর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় শীতের তীব্রতা যেন বেড়েছে কয়েকগুণ। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।বেলা বাড়ার সাথে কুয়াশা কাটলেও সন্ধ্যায় মৃদু শীতল বাতাশে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এমন অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। পাশাপাশি বিপাকে রয়েছে হাকালুকি হাওরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অতিথি পাখিগুলো শীতের তীব্রতা বাড়ার কারনে পাখিগুলো হাওর ছেড়ে বিভিন্ন গাছপালায় অবস্থান নিয়েছে।
হাকালুকি হাওরের মাছ ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিন বলেন, কয়েকদিন থেকে প্রচন্ড শীত থাকায় হাকালুকি হাওরে পাখি দেখা যাচ্ছে না। পাখিগুলো উজানে চলে গেছে। শীত কমলে আবার হাওরে আসবে।হাকালুকি হাওর পাড়ের কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, এখন বোরো ধানের চারা রোপণের সময়। ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে অনেক মানুষ হাওরে ধান রোপন করতে পারছেন না।যার ফলে সর্বসাধারণের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ।
নিউ সমনবাগ চা বাগানের শ্রমিকরা জানান, তীব্র শীতে চা শ্রমিকরা কাবু হয়ে পড়েছে। প্রায় ঘরেই টান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। স্বল্প আয় থাকায় গরম কাপড় কেনা তাঁদের বেশির ভাগেরই সামর্থ্যের বাইরে। নতুন কাপড়ের দামও অনেক বেশি।
অন্যদিকে, উপজেলার হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা জড়োসড়ো হয়ে পড়েছে। অনেকে খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। মাঝেমাঝে এলোমেলো হিমেল হাওয়া শীত আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অপরদিকে, নিম্ন আয়ের গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা পুরাতন কাপড়। সেই পুরাতন গরম কাপড়ের দামও চড়া। ২০০-৩০০ টাকার নিচে মিলছে না পুরাতন গরম কাপড়। কয়েকদিন হলো উপজেলা শহরের হাজিগঞ্জ বাজারের ফুতফাতের কাপড়ের দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মানুষজন এসব কাপড়ের দোকানে ভিড় করেন।
হাড়কাঁপানো শীতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানিসহ শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে শিশু এবং বয়স্করা ভর্তি হয়েছেন উপজেলার সরকারি ও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে।
বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শুভ্রাংশু শেখর দে জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ার কারনে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে অনেকেই হাসপাতালে আসছেন। তাদের মধ্যে বয়স্ক ও শিশুর সংখ্যা বেশি। তবে সর্দি-জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগী তুলনামূলক বেশী।
এদিকে তীব্র শীত নিবারণে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দিকে তাকিয়ে আছে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। সরকারি ভাবে বিগত বছরগুলোতে কয়েক ধাপে কম্বল বিতরন করা হয়েছে বলে জানা গেছে এবং বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হলেও এ বছর এখনো পর্যন্ত সেভাবে দেখা যায়নি তবে কিছু সংখ্যক কম্বল বিতরনের তথ্য পাওয়া গেছে।