নৌকা-স্বতন্ত্রের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে শেষ প্রচারণা, ভোটের অপেক্ষা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৩:০৫ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার
ভোটের বাকি আর দুদিন। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচন বর্জনের মধ্যেও সহিংসতা, সংঘাত কম হয়নি। এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগ ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচনে থাকা জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হলেও আসনগুলোতে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্রের সংঘাত হচ্ছে বেশি। এরই মধ্যে হতাহত হয়েছে অনেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থেকেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না।
হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ বেশি নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এবারের নির্বাচনে অন্তত ২২০টি আসনে সাড়ে তিনশর বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমনও আসন আছে যেখানে নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে চারজন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর মাদারীপুর, ফরিদপুর, পিরোজপুর, নওগাঁ, বাগেরহাট, বরিশাল, মুন্সিগঞ্জ, যশোর ও ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর গত ১৭ দিনে ২০০টির বেশি জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচন ঘিরে ১৮ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ দিনে হামলা, সংঘর্ষ, নাশকতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় ১৮৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২১৫ জনকে। কিছু এলাকার ভোটাররা সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ভোটের এক-দুদিন আগে ও এক-দুদিন পরে সহিংসতা এবং হামলা হতে পারে অনেক বেশি। কারণ একপক্ষ পরাজিত হলে অন্য পক্ষের সমর্থকরা হামলা চালাতে পারে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেও প্রশাসন ও কমিশনের প্রতি এখনো আস্থা রাখছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে কয়েকটি থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা এমনকি মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে এ পর্যন্ত কমপক্ষে আড়াইশর বেশি ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের নির্বাচনসংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেলে ১৪ দিনে ৪৬১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। একই সময় নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৪৫৭টি অভিযোগ। জননিরাপত্তা বিভাগের নির্বাচনসংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত ১৮ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের নিচতলায় নির্বাচনসংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেল স্থাপন করা হয়। সেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি আছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এস এম রেজাউল মোস্তফা কামাল এ সেলের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। ২৪ ঘণ্টা চালু এ সেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ যুক্ত করা হয়।
জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনসংক্রান্ত যে কোনো তথ্য ও সহায়তার জন্য এখানে ফোন করা যাবে, জানানো যাবে নির্বাচনসংক্রান্ত অভিযোগ। সেলে অভিযোগ আসার পর তা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে পাঠানো হবে। অভিযোগের বিষয়ে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত যে কেউ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে এই সেলে ফোন করতে পারবেন বলে জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্র জানায়।
নির্বাচনে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকার সব কটি কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে পুলিশ। যাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।- ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন
নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর ওপর নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা হামলার অভিযোগ উঠেছে। সামশুলের প্রচার শুরু হওয়ার পর নৌকার স্লোগান নিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি ঝাড়ু ও জুতা নিয়ে শান্তিরহাটে ভিড় করেন। পরে তারা স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেন। তবে হামলাকারীরা নৌকার কেউ নন বলে দাবি করেছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আ ক ম সামশুজ্জামান চৌধুরী।
এ হামলার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যাদের ধরা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন এই আসনে নৌকা প্রার্থী মোতাহারুল ইসলাম চৌধুরীর সমর্থক লিটন বড়ুয়া।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় সংঘর্ষে জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) নামে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর এক সমর্থক নিহত হয়েছেন। নিহত জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, বুধবার বিকেলে পিরোজপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী আশরাফ আলীর সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারণায় যান আমার ভাই। এসময় ঈগল প্রতীকের বশির ফরাজীর লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমার ভাই গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত অভিযোগ করে বলেন, ৩০ ডিসেম্বর গল্লাই কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকায় আমার ছয়জন নেতাকর্মীকে কুপিয়েছে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর সমর্থকরা। ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী হেরে যাওয়ার ভয়ে নৌকা সমর্থকদের ওপর একের পর এক হামলা করছে।
নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে মাদারীপুর-৩ আসনটি বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছে। কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্রপ্রার্থীর মিছিলে ককটেল হামলা হয়। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা এস্কান্দার খাঁ নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি আলোচিত হয়েছে নির্বাচনী সহিংসতা হিসেবে। নিহত এস্কান্দার খাঁর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, নৌকার বিপক্ষে থাকা এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থীকে সমর্থন করাটা এ হামলার অন্যতম কারণ। স্বতন্ত্রপ্রার্থীও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।
৩১ ডিসেম্বর ঢাকা-১৯ আসনের (সাভার-আশুলিয়া) স্বতন্ত্রপ্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের দুটি অস্থায়ী ক্যাম্প ভাঙচুর ও তার কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. এনামুর রহমানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আশুলিয়ার নরসিংহপুরের খান ম্যানশন এলাকায় এ ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।
গাজীপুরের টঙ্গীতে স্বতন্ত্রপ্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের তিন সমর্থক ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় টঙ্গীর হাজি মাজার বস্তির সান্দার পাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন লাল চান, সাহিদা ও শ্যামল।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম সোহেলের ছয়টি অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের ২০ কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে পূর্বধলা থানায় মামলা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকার সব কয়টি কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে পুলিশ। যাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে পেশিশক্তি প্রদর্শন ও সহিংসতা করার পরিকল্পনা যারা করছেন তাদের এরই মধ্যে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। নির্বাচনের দিন হরতালের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন যদি কোনো ভোটারকে ভোটদানে কেউ বাধা দেয় তবে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কাজ করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় যেসব সংসদীয় আসন রয়েছে, কোথাও কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা আশাবাদী কিছু ঘটবে না এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সেরকম প্রস্তুতিও রয়েছে। যে কোনো ধরনের অরাজকতা, নাশকতা ঠেকাতে ও প্রতিরোধে সক্ষমতা রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের।’
নির্বাচনে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলা, জঙ্গিদের মাথাচাড়া বা তাদের তৎপরতা কিংবা কোনো ঝুঁকি আমরা দেখছি না।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানীসহ সারাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী র্যাব ফোর্সেস শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সব নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনে গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং নিজস্ব সুইপিং ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম প্রস্তুত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড নিয়োগ করা হবে।’
ভোট দেওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার প্রয়োগে যাতে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে না পারে, জনগণ যাতে নিরাপদে ও নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে সেজন্য ডিএমপির সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিছু কিছু গোষ্ঠী নির্বাচনবিরোধী কার্যক্রম ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে। নাশকতা সৃষ্টি করছে। তাদের রুখে দেওয়ার জন্য পুলিশ রয়েছে।- ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান
পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন) আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন কেন্দ্র করে সারাদেশে প্রায় দুই লাখ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছেন। তারা নির্বাচনের সময় টহল দেওয়া থেকে শুরু করে স্ট্রাইকিং টিম, ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গেও ডিউটিতে থাকবেন। নির্বাচনী এলাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো অভিযোগ পেলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আর তাদের সহযোগিতা করছে পুলিশ। কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসাররা যেভাবে নিরাপত্তার নির্দেশনা দেবেন পুলিশ সেভাবে কাজ করবে।’
‘পুলিশের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা হারানোর অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বদলি বা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এরপরও তদন্ত হচ্ছে ওই কর্মকর্তার বিষয়ে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা হারানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোট দেওয়া জনগণের সাংবিধানের অধিকার। সেই অধিকার প্রয়োগে যাতে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে না পারে, জনগণ যাতে নিরাপদে ও নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে সেজন্য ডিএমপির সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিছু কিছু গোষ্ঠী নির্বাচনবিরোধী কার্যক্রম ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে। নাশকতাও সৃষ্টি করছে। তদের রুখে দেওয়ার জন্য পুলিশ রয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই লাখ ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৭২ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এবারের নির্বাচনে মোট ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। এবার ৩০০ নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫-১৭ জনের নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে আরও জানা যায়, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অস্ত্রধারী দুজন পুলিশ, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী একজন আনসার, ১০ জন আনসার, লাঠি হাতে একজন বা দুজন গ্রামপুলিশ সদস্যসহ ১৫-১৬ জনের একটি দল সব সাধারণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবে। তবে, প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের ক্ষেত্রে (যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত) অস্ত্রসহ তিনজন পুলিশসহ ১৬-১৭ জনের দল থাকবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সমগ্র বাংলাদেশের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত (যাতায়াত সময়সীমা ব্যতীত) সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগের জন্য বলা হয়েছে।
১. সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা/উপজেলা/মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট এবং সুবিধাজনক স্থানে নিয়োজিত থাকবেন।
২. রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা/উপজেলা/থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
৩. নির্বাচনী সশস্ত্র বাহিনীর টিমের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করবেন এবং আইন, বিধি ও পদ্ধতিগতভাবে কার্যক্রম গৃহীত হবে।
৪. সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধক্রমে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন প্ল্যান চূড়ান্ত হয়ে যান বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধক্রমে চাহিদামতো আইনানুগ অন্য কার্যক্রম সম্পাদন করা হবে।
৫. ভোটগ্রহণের দিন, তার আগে ও পরে কার্যক্রম গ্রহণ এবং মোতায়েনের সময়কালসহ বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে হবে।
সশস্ত্র বাহিনীর নিয়োজিত দলসমূহ ফৌজদারি কার্যবিধি ও অন্য আইনি বিধান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ইন্সট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ারের ৭ম ও ১০ম অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে। মোতায়েন করা সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী কাজে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের পরামর্শে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করবে।