নওগাঁ-৩ঃ মহাদেবপুর-বদলগাছীতে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা
মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৪৮ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার

নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে উৎসবমুখর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা জমে উঠেছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগের নৌকা।
অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনী উৎসবের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাকের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, কর্মী সমর্থকদের প্রচারে বাধা দেয়াসহ মারপিটে জখমের ঘটনা ঘটেছে। মামলা হামলার আতংকে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী এবং সমর্থকরা। নির্বাচনী আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা প্রচার প্রচারণা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাংচুরসহ পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় থানায় ৫টি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে নৌকার পক্ষে ৩টি ও স্বতন্ত্র ট্রাকের পক্ষে ২টি।
নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতিকের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এ আসনের হাটবাজার ও চায়ের দোকান এবং পাড়া মহল্লায় সূর্যোদয় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ কর্মী সমর্থকদের চলছে প্রচার প্রচারণা। ৭ জানুয়ারীর ফাইনাল খেলায় কোন প্রার্থী বিজয়ী হবেন তা নিয়ে প্রার্থীদের কর্মী সমর্থক এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে চায়ের কাপে ঝড় উঠছে। চলছে প্রার্থীদের সার্বিক দিক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার দিন থেকেই এ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সাবেক সিনিয়র সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম এমপি ট্রাক প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজা আকরাম চৌধুরী মায়া ঈগল প্রতীক, জাতীয় পার্টির মাসুদ রানা নাঙ্গল প্রতীক এই চার প্রার্থী মাঠে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলার হাটবাজার, গ্রাম ও পাড়া মহল্লায় ছেয়ে গেছে পোস্টার এবং ব্যানারে। সেই সাথে নির্মাণ করা হয়েছে নির্বাচনী তোরণ। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব-উল-আলম মান্নফ (শুভ) কেচি প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কৌতুক অভিনেতা শামীনুর রহমান শামীম (চিকন আলী) কেটলি প্রতীক এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সোহেল কবির চৌধুরী সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রচারণা শুধুমাত্র পোষ্টার ও মাইকেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাদের কর্মীদের তেমন কোন সারা পাওয়া যাচ্ছেনা।
ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম এমপির জেষ্ঠ্য পুত্র সাকলাইন মাহমুদ রকি অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তীর কর্মীরা প্রচারণা শুরুর পর দিন থেকেই তাদের বেশ কয়েকটি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, পোস্টার, ব্যানার ছিড়ে ফেলাসহ তার কর্মী সমর্থকদের মারপিটে গুরতর জখম করা এবং প্রচার প্রচারণায় বাধা দিয়ে আসছে। ওইসব ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতিকের পক্ষ থেকে জেলা রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অপর দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের কর্মীরা নির্বাচনী এলাকার কয়েকটি নৌকার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও আগুন দেয় বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন। এ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিটি প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী হলেও সাধারণ ভোটাররা বলছেন হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের। কোন দলকে সমর্থন করেন না এমন অনেক ভোটার রয়েছেন যারা দলাদলী বোঝেন না, কিন্তু এলাকার উন্নয়নে যে কাজ করেন তাকেই ভোট দেন। এমন ভোটারের সংখ্যাও কম নয়। এ আসনে আওয়ামী লীগ বিরোধী শিবিরের ভোটও রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ওইসব ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। এসব ভোটের পরিমাণ লাক্ষাধিক। তারা যেদিকে গড়াবেন, তার পাল্লাই ভারি হবে বলে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন। তাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ওইসব ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও দলটির স্থানীয় অধিকাংশ নেতা-কর্মী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের চিত্র ভোটারদের মধ্যে তুলে ধরার পাশাপাশি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এবং ভোট প্রার্থনা করছেন। একই কাজ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক মার্কার এমপি সেলিমের কর্মী বাহিনী।
উল্লেখ্য, ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং ২০১৮ সালে নৌকার প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এই দুই টার্মে তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এসব উন্নয়নের কথা তুলে ধরে এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দল মত নির্বিশেষে আবারো তাকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। উল্লেখ্য, এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৮৮ জন।