শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ১৬ ১৪৩১   ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জিয়া শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল: শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ০১:৪৭ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ রোববার

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়া শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস সেই থেকে শুরু।

রবিবার সকালে নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে ‘২০২৪ শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ’ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। 

শেখ হাসিনা বলেন, আমি ও আমার বোনকে ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থাকতে হয়েছে। ওই ৬ বছরে তারা (বিএনপি) বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পাঠ্যপুস্তকেও ইতিহাস বিকৃত করেছে তারা। ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার নেতৃত্বকে মুছে ফেলেছে, ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহর রহমতে এখন সবকিছুই আবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, পরবর্তী সরকারগুলো একই কাজ করেছে, যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতার খুনিদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়ে পাকিস্তানি কায়দায় দেশ শাসন করেছে। দেশকে দুর্নীতি-মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ঘাঁটি বানিয়েছিল। লেখাপড়ার জন্য কোনো সুস্থ পরিবেশ ছিল না। ’৯৬ সালে আমরা সরকারে এসে সাক্ষরতার হার পেয়েছি ৪৩ শতাংশ। ২০০১ সালে আমরা তা ৬৫ শতাংশে উন্নীত করি। এরপর আবার ২০০১ থেকে ০৬ পর্যন্ত সময়ে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত। তারা শিক্ষার হার নামিয়ে এনেছিল ৪৫ শতাংশে। সকল সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচকে ধস নামিয়েছিল। কৃষি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ সকল খাতই ছিল নিম্নগামী। ২০০৬ সালের সেই ৪৫ শতাংশ সাক্ষরতার হার বর্তমানে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে কোমলমতি শিশুদের হাতে পুরাতন, ছেঁড়া ও মলিন বই তুলে দেওয়া হতো। আমরা ২০১০ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক হতে মাধ্যমিক পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দিচ্ছি।

তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বালক-বালিকাদের জন্য শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার অঙ্গীকার করেছিলেন। একই সঙ্গে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সকল যুদ্ধবিধ্বস্ত স্কুল-কলেজ পুনর্নির্মাণ ও নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করেন। সর্বমোট ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করেন।

’৭২ সালেই ড. কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন বঙ্গবন্ধু। ’৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এর ১ বছরের মাথায় ১৯৭৪ সালে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা এবং আণবিক শক্তি বিভাগ’ নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বতন্ত্র বিভাগ সৃষ্টি করেন। ওই বছরই ‘টেরিটোরাল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাকট’ প্রণয়ন করে সমুদ্র বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নবদিগন্তের সূচনা করেন। ’৭৫-এর ১৪ জুন রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রেরণকারী দেশ। দুর্ভাগ্য, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর সেই রিপোর্ট কেউ বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে।

সকলের জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তকসহ চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা ও সাদরি এই পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করছি। ২০১০ সালে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ৫২৯ জন শিক্ষার্থীকে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬১ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল।

এবারও পহেলা জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভিন্ন স্তরে ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।