এক লাখ ৮৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন, বিশেষ নজরদারিতে দাগি আসামিরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৫:০৭ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার
# সারাদেশে ১ হাজার ৬০০ জন গ্রেফতার
# জামিনে আসা আসামিরা বিশেষ নজরদারিতে
# কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে বদলি-প্রত্যাহার
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সারাদেশে এক লাখ ৮৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছেন। তারা নির্বাচনের সময় টহল দেওয়া থেকে শুরু করে স্ট্রাইকিং টিম, ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গেও ডিউটিতে থাকবেন। এমনকি ওইদিন যিনি থানার সিসি লিখবেন, তিনিও থাকবেন নির্বাচনী দায়িত্বে। এছাড়া জামিনে ছাড়া পাওয়া আসামিরাও বিশেষ নজরদারিতে আছেন।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ সদরদপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন) আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকা থেকে পুলিশ যে কোনো অভিযোগ পেলে তা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছে। পুলিশের কাছে সব প্রার্থী সমান। প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে সব প্রার্থী যেন সমান সুযোগ পান, এর নির্দেশনা দেওয়া আছে। জামিন পাওয়া আসামিরাও পুলিশের বিশেষ নজরদারিতে আছেন।
ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো অভিযোগ পেলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আর তাদের সহযোগিতা করছে পুলিশ। কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসাররা যেভাবে নিরাপত্তার নির্দেশনা দেবেন পুলিশ সেভাবে কাজ করবে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৮৫০০ ব্যাটালিয়ন আনসার মোতায়েন
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়ে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। কোনো কোনো দুর্গম এলাকার কেন্দ্রও ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোর বিষয়েও বাড়তি ফোর্স দিয়ে কাজ করছে পুলিশ। পুলিশ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
নির্বাচনকেন্দ্রিক মারামারি ও দাঙ্গা হাঙ্গামার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কোনো ঘটনার পরই মামলা হচ্ছে। পুলিশ ওইসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছে না পুলিশ। পেশাদারত্ব ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা হারানোর অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বদলি বা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এরপরও তদন্ত হচ্ছে ওই কর্মকর্তার বিষয়ে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা হারানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে একটি পক্ষ রেলে আগুনসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। রেল পুলিশের মাধ্যমে রেলের নিরাপত্তায় বিভিন্ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইপি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা গ্রেফতার হয়েছেন তারা রাজনৈতিক কারণে নয়, রাজনীতি করা অপরাধ নয়। তবে কেউ যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যানবাহনে আগুন দেয়, ভাঙচুর করে, চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, তাহলে নির্দিষ্ট মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের কারও কারও রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। সেটা না দেখে নাশকতায় সম্পৃক্ত কি না তা দেখা হচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী পক্ষের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এ তথ্য সঠিক কি না জানতে চাইলে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, পরোয়ানা তামিলসহ বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগে সারাদেশে গড়ে এক হাজার ৬০০ জনের মতো গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের পদধারি সংখ্যা কত তার হিসাব আমাদের কাছে নেই। সারাদেশ থেকে তথ্য নিয়ে সে হিসাব তৈরির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কেউ ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত হলে পুলিশ শুধু তাদেরই গ্রেফতার করছে।
নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণে বাধা দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবে কি না বা ভোট দেওয়া, না দেওয়ার অধিকার ভোটারের আছে। কিন্তু ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই।
বিভিন্ন এলাকায় বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের এই ডিআইজি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে আমাদের বিশেষ অভিযান চলমান। বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও বহন নিষিদ্ধ করে একটি পরিপত্র জারি হয়েছে। নির্বাচনকালে কেউ বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন বা বহন করতে পারবেন না। আমাদের কাছে নির্দিষ্ট এলাকায় বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের দুটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে দেখেছি সেগুলো ছিল খেলনা অস্ত্র।
দাগি আসামি ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা জামিনে বেরিয়ে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, কোনো আসামি জামিনে বেরিয়ে এলে তিনি নতুন করে অপরাধে না জড়ালে পুলিশের গ্রেফতার করার সুযোগ নেই। তবে জামিন পাওয়া আসামিদের বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি অব্যাহত আছে। তারা কোনো অপরাধ করলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, এরই মধ্যে এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। আইজিপিও বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ফুটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ। উন্মুক্তস্থানে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। এছাড়া গুলশান, বনানী ও ৩০০ ফিটসহ বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, এআইজি এনামুল হক সাগর ও পুলিশ সদরদপ্তরের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা একেএম কামরুল আহসান।