রাজস্থান ভ্রমণে কী কী দেখবেন?
ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার
ভারতের রাজস্থানের কথা মনে পড়লেই চোখে ভেসে ওঠে মরুভূমি, হাওয়া মহল, উদয়পুরের সিটি প্যালেস ও জয়সালমের দুর্গের মতো বিখ্যাত সব স্থানের কথা। এসব বিখ্যাত স্থান তো বটেই, পারলে রাজস্থান ভ্রমণে ঘুরে দেখতে পারেন আরও কয়েকটি জনপ্রিয় স্পট-
কুম্ভলগড়
উদয়পুর থেকে আনুমানিক ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুম্ভলগড় ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলোর তালিকার অন্তর্ভুক্ত ও ঘুরে দেখার জন্য চমকপ্রদ এক ব্যাতিক্রমী গন্তব্য।
দুর্দান্ত সব স্মৃতিসৌধ, ঐতিহাসিক স্থানসমূহ ও বিস্ময়কর সব প্রাসাদকে ছাপিয়ে কুম্ভলগড় দুর্গ হলো সেখানকার প্রধান আকর্ষণ।
জায়গাটির গুরুত্ব আরেকটু বেশি হওয়ার কারণ হলো এটি সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজপুত রাজা মহারানা প্রতাপের জন্মভূমি। শুধু মন্দিরসমূহ নয়, কুম্ভলগড় ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিও পর্যটকদের জন্য বড় এক আকর্ষণ।
ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে বসবাস করে বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক প্রাণি যেমন- হায়েনা, লোপার্ড প্রভৃতি। এছাড়া আছে বিচিত্র প্রজাতির পাখি।
এলাকাটির চারদিকে রাতভর গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ানো আপনার ভ্রমণের আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। এর পাশাপাশি কুম্ভলগড় ফেস্টিভেল এমন এক জিনিস যা আপনার মিস করা উচিত নয়।
বুন্দি
কোতা শহর থেকে আনুমানিক ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বুন্দি হলো বিশুদ্ধ একটি লুকানো রত্ন। এটি কোনো কোলাহলমুখর জায়গা নয় আবার সেখানে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ারও ভয় নেই।
সবদিক দিয়ে আরাবল্লী হিলস দ্বারা বেষ্টিত আকর্ষণীয় শহরটির সমস্ত জায়গাই নিজের মতো করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
অতীতে বুন্দি ছিলো রাজস্থানের চমৎকার সব রাজ্যের রাজধানী। এটি রাজস্থানের বিশেষভাবে সংরক্ষিত একটি জায়গা যা তার প্রাসাদ ও স্নানঘাটসমূহের জন্য সুপরিচিত যেগুলোকে চতুর্দিক থেকে ঘেরা পানির কূপও বলা হয়ে থাকে।
বুন্দি একটি ছোট শহর ও এখানে ঘুরে বেড়াতে খুব বেশি সময় ব্যয় হবে না। সমৃদ্ধ ইতিহাসের কারণে জায়গাটি রাজস্থানের সেরা ব্যতিক্রমী জায়গাগুলোর একটি।
নার্লাই
দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী গ্রাম নার্লাই বিস্ময়কর আরাবল্লী পাহাড় দ্বারা ঘেরা ও উদয়পুর থেকে আনুমানিক দুই ঘণ্টার ভ্রমণ। যথেষ্ট উন্নত এই গ্রাম ঘুরে দেখার মতো অনেক জায়গার পাশাপাশি আছে পর্যটকদের জন্য ব্যতিক্রমী সব সেবা।
এই গ্রামে পাবেন একটি হেরিটেজ হোটেল, যা রাওয়া নার্লাই নামে পরিচিত। এটি তবে একসময় রাজস্থানের রাজকীয় পরিবারগুলোর শিকারের স্থান ছিলো।
এখানে থাকাকালে নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরুন ঝারোকা ক্যাফেতে যেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে রাজস্থানি রন্ধনশৈলীতে তৈরি দুর্দান্ত সব পানীয়।
তারা আপনার জন্য ডিনারের ব্যবস্থা করবে ‘নার্লাই স্টেপওয়েল’এ যা হবে আপনার জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। নার্লাইর লোপার্ড ও ঘোড়া সাফারিতে দারুণ কিছু সময় কাটাতে ভুলবেন না কিন্তু।
ঝালাবর
ঝালাবর একসময় রাজস্থানের আকর্ষণীয় রাজ্যগুলোর একটি ছিলো যা এখন দক্ষিণ-পূর্ব রাজস্থানে অবস্থিত। এই স্থানের অধিকাংশ জায়গাই অতীতের বিভিন্ন নিদর্শনে ভরপুর।
ঝালাবর ৫০টিরও বেশি গুহার সমন্বয়ে গঠিত যেগুলো নির্মিত হয়েছিলো পঞ্চম ও অষ্টম শতাব্দীতে। এখনো দণ্ডায়মান ও মজবুত আছে সেগুলো।
এই সুন্দর শহর কিন্তু ঘ্রাণে ভরপুর বাগানসমূহ এবং চমৎকার লাল জমি দ্বারা আবৃত। এই এলাকার প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে আছে ভবানী নাট্যশালা, গড় প্রাসাদ, পৃথবি বিলাস ও বৌদ্ধ কাভেসিন কলভি।
পুষ্কুর
দুর্দান্ত এই স্থানের অবস্থান রাজস্থানের আজমীর জেলায়। এখানে আছে ৪০০ মন্দির, নির্মল ও বিশুদ্ধ লেকসমূহ ও আনুমানিক ৫২টি ঘাট।
বিপুলসংখ্যক মন্দির থাকার কারণে সারা বিশ্ব থেকেই পুণ্যার্থীরা আসেন এখানে। কিছু পুণ্যার্থী এখানে লর্ড কার্তিকার সম্মানে ব্রহ্মমন্দিরে বিশেষ আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
পুরো জায়গাটিতেই অনেক পুণ্যার্থীর ভিড় থাকে। সেখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন যে, পুরোহিতরা পূজা আয়োজনের জন্য চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এখানকার বর্ণিল সব উৎসব আর উট মেলা বিশেষভাবে আপনার নজর কাড়বে। যদি এখানে ২/৩ দিন বেড়ানোর পরিকল্পনা আপনার থাকে তাহলে পরিবেশবান্ধব গ্রিনহাউস রিসোর্টে যেতে ভুলবেন না।
লঙ্গেবালা সীমান্ত
ভারতের যুদ্ধ ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর একটি লঙ্গেবালা। জয়সালমের থেকে এর দূরত্ব আনুমানিক ১২০ কিলোমিটার। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ও ভারতের বিখ্যাত যুদ্ধ এখানেই সংঘটিত হয়েছিলো।
যুদ্ধের অনেক স্মৃতিচিহ্নই সেখানে আছে বলে আপনি চাইলে তখনকার অনেক ঘটনাই জানতে পারবেন সেখান থেকে। কথিত আছে, পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি ছোট গ্রুপ এই সীমান্ত ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো বলে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সৈন্যদের মধ্যে খুব মতবিরোধ হয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এটি রাজস্থানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ গন্তব্য। পুরো দিন হাতে নিয়ে লঙ্গেবালায় বেড়াতে যান ও সৈন্যদের সঙ্গে আলাপচারিতার পাশাপাশি বড় বড় ট্যাংক ও জিপ দেখুন।
বারমের
পশ্চিম রাজস্থান থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বারমের কিন্তু বিখ্যাত থর মরুভূমির বিশাল জায়গাজুড়ে আছে। রাজস্থানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ব্যতিক্রমী গন্তব্যগুলোর একটি হলো বারমের।
অসংখ্য ছোট ছোট গ্রাম ও ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বারমের জুড়ে। গান, সংস্কৃতি ও বিভিন্ন উৎসবের কারণে সুপরিচিত বারমের শহর। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাজস্থানের ইতিহাসে অন্যতম বিখ্যাত শাসক বাহাদো রাও পারমার এই শহরটি আবিষ্কার করেন।
বারমেরের বিখ্যাত উৎসবগুলোর মধ্যে আছে তিলওয়ারা ও থর উৎসব। সিওয়ানা দুর্গ ও কিরাদু মন্দির বারমেরের প্রধান ঐতিহাসিক আকর্ষণ। শহুরে কোলাহল থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে জায়গাটি পারিবারিক ছুটি কাটানোর এক আদর্শ গন্তব্য।