রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৭ ১৪৩২   ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

দিনাজপুর-১ আসন

জাপা-জামায়াতের ১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন

মোহাম্মদ আলী, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি:

প্রকাশিত : ১২:২৪ এএম, ৩ নভেম্বর ২০২৩ শুক্রবার

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত সংসদীয়-৬ দিনাজপুর -১আসন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি আওয়ামীলীগের জন্য লোভনীয় আসন বলে পরিচিত।স্বাধীনতার পর থেকে একবার জাতীয় পার্টি ও একবার জামাত ছাড়া বেশিরভাগ সময় আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ৬১৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মোট ৩ লক্ষ ৮০ হাজার ভোটার রয়েছেন।এ  আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক থাকলেও পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও জামাতে ইসলামের একজন করে প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ও সাবেক ছাত্রনেতা আবুল হুসেইন বিপু। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মামুনুর রশিদ চৌধুরী,জাকির হোসেন ধলু,মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু।আর জাতীয় পার্টির শাহিনুর ইসলাম ও জামাত ইসলামের প্রার্থী রয়েছেন প্রভাষক মাওলানা খোদা বখস।


মনোরঞ্জন শীল গোপাল:
এ আসনের বর্তমান এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল। ২০০১ সালে জামাত ইসলামের এমপি আব্দুল্লাহ আল কাফির মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন তিনি। এরপর তিনি যোগদান করেন আওয়ামীলীগে।২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন তিনি।এ সময় তিনি রাস্তাঘাট পাকা করেন ব্রীজ কালভার্ট নির্মাণ বিদ্যুতায়ন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ ও উন্নয়ন শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স উপজেলা কমপ্লেক্সের নির্মাণাধীন কান্তজির মসজিদ মন্দিরকে পর্যটন এলাকা করা, গৃহহীনদের গৃহপ্রদানকরাসহ এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। মনোরঞ্জনশীল গোপাল সংসদ সদস্য হবার পর জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির ৯০ ভাগই পূরণ করেছেন দাবি করে বলেন,বাকি ১০ ভাগ ও মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ হয়ে যাবে। করোনা না থাকলে আরো আগে শতভাগ প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়ে যেত তিনি বলেন। তার মেয়াদকালে এলাকার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে। আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি তার নির্বাচনী এলাকাকে একটি ইকোনমিক জন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন যাতে বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান হবে। তিনি আরো বলেন এই এলাকার মানুষ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং তার পাশে থাকবে এবং তাকে ভোট দেবেন। তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগ থেকে আমাকে আবারো নৌকা প্রতীক দেয়া হয় তবে জনগণ আমাকে বিপুল সংখ্যক ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন।


মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম:
১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত সাবেক এমপি বর্তমান বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এবং আমিনুল ইসলাম ২০০১ সালে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান। তিনি বলেন দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি জয় লাভ করবো ইনশাআল্লাহ।


আবু হুসেইন দিপু:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু হোসেন বিপু। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতি পাশাপাশি দিনাজপুর-১ আসনে অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ কাজ করেছে। এবার তিনি এ  আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।মনোনয়ন পেলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।

মো.মামুনুর রশিদ চৌধুরী-
আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হতে লবিং চালাচ্ছেন কাহারোল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মামুন রশিদ চৌধুরী। ছাত্র জীবন থেকে জিয়ান আদর্শ লালনকারী মামুনুর রশিদ চৌধুরী ১৯৮৭ সালে দিনাজপুর জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক,যুবদলের জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে অধ্যবদি বিএনপি রাজনীতিতে একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করে চলেছেন।২০০৯ সালে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও তিনি সবসময় দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করেছেন এবং এখনো আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখছেন।মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন,আমি জনপ্রতিনিধি ছিলাম,এলাকায় আমার গণভিত্তি আছে। সেজন্য দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি জয় লাভ করব ইনশাআল্লাহ।

মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু:
বীরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু ও দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী।তিনি এলাকায় গণভিত্তি  তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন।বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সংযোগ তাকে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রাখবে বলে তার সমর্থকদের দাবি।তাছাড়া ২০১৮ সালে নির্বাচনে মঞ্জু দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। অবশ্য পরে দলীয় সিদ্ধান্তে জোট শরিক জামাতকে আসনটি ছাড় দেওয়ায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসেন।বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপিতে দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলন মুখী করতে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে বলে দলীয় সূত্র মনে করেন।দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি জয় লাভ করবো ইনশাআল্লাহ।


মোহাম্মদ জাকির হোসেন ধলু-
বীরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন এলাকায় একটি পরিচিত নাম। তিনি ১৯৯০ সালে বীরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন পরবর্তীতে যুবদলের সাধারণ সম্পাদকসহ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছেন।আন্দোলন সংগ্রামে সন্মুখে থাকায় ডজন খানেক আসামি ও হয়েছেন তিনি। জাকির হোসেন ধুলু জানান, জন্ম থেকে আমি জিয়ার আদর্শ লালন করে এসেছি। তৃণমূলে আমার পরিচিত ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে আমাকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী সিনিয়ে আনতে পারব ইনশাল্লাহ।


রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু:
বীরগঞ্জ বিএনপিতে একটি পরিচিত নাম রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। এজন্য তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতির নির্ধারণকারি ফোরামসহ সবপর্যায় ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি এলাকার মানুষের কাছে সমাধিক পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।তিনি মনোনয়ন পেলে এলাকায় ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবেনা বলে দাবি করেন তিনি।


মোঃ শাহিনুর ইসলাম:
পীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুর জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহিনুর ইসলাম জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে আছেন। ২০০৪ সালে জাপার ক্লান্তিলগ্নে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে অদ্যবধি জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মনোনয়ন পেলে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন,আমি সবসময় দলের জন্য কাজ করেছি এমতাবস্থায় দল সেগুলোর মূল্যায়ন করে আমাকে মনোনীত করবে আশা করি। অবশ্য এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন তাই এলাকার মানুষ লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।


মাওলানা খোদা বখ্স:
এই নির্বাচনী এলাকার সাবেক এমপি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল কাফির মৃত্যুর পর সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব মাওলানা মোঃ হানিফ জামাত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে  তিনি ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকেও  নির্বাচন করেন। সম্প্রীতি  মাওলানা হানিফ ইন্তেকাল করলে দলীয় মনোনয়ন পান  মাওলানা খোদা বকস। তিনি ইউপি নির্বাচন সহ বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে এলাকায় পরিচিত পেয়েছেন। এখন তিনি নিরবে পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক দাড়িপাল্লা না পেলেও তিনি সতন্ত্র প্রতিকে নির্বাচন করবেন বলে জানান। তিনি বলেন ভোটের পরিবেশ অনুকূল হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।তিনি নির্বাচিত হলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।