বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১   ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাংলাদেশ-ভারত

নব উচ্চতায় হাজার বছরের সম্পর্ক

ফারাজী আজমল হোসেন

প্রকাশিত : ১১:৪৬ এএম, ৩১ অক্টোবর ২০২৩ মঙ্গলবার

ভারত বর্ষের শিল্প-সংস্কৃতি, আচার, শিষ্টাচার ভাষার আদান-প্রদান থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে সম্পর্কটা হাজার বছরের। বিভিন্ন সময় আফগান, ব্রিটিশ শাসন ও শোষণকে পেরিয়ে আজ এই ভারত বর্ষ অসংখ্য ভাগে বিভক্ত। কিন্তু এই অঞ্চলের মানুষগুলোকে তাদের আদি সেই সম্পর্ক আজও এক সূত্রে গেঁথে রাখে এ অঞ্চলের মানুষকে।

বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক উত্থান-পতনে এ সম্পর্কে ভাটা পড়লেও সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। সম্প্রতি সেই সম্পর্ক আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজের যৌথ উদ্যোগে সিলেটে তিন দিনব্যাপী (৫-৭ অক্টোবর) ১১তম বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সংলাপ অনুষ্ঠিত হলো।

যৌথ উদ্যোগে একাদশ বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্ব সংলাপ এবং দ্বিতীয় সিলেট-শিলচর উৎসবের এ আয়োজনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানটি সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। গোটা অনুষ্ঠানের সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিল ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ।

হাজার বছরের ঐতিহ্যে একত্রিত হওয়া এই সম্পর্ক থাকার পরও ১৯৪৭ সালে শুধু ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্র। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ছিল না কোনো মানসিক, সাংস্কৃতিক বা ভাষাগত সম্পর্ক। সেই সঙ্গে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ নীতি এ দেশের মানুষকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করায়। আর এ দেশের সাধারণ মানুষকে সেদিন একতাবদ্ধ করেছিলেন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শত বছরের সম্পর্ক যে ধর্মের দেওয়ালে ছেদ পরে তা পুনরুদ্ধার হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান যখন এদেশে গণহত্যা চালায় তখন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় ভারত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের সঙ্গে সেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে নতুন করে শুরু হয় শতবর্ষের সেই সম্পর্ক।

সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সেই সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করে জানান, দুই প্রতিবেশী দেশের ভাগ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং উভয় দেশের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা বাংলাদেশের মানুষ ভোলেনি। বাংলাদেশ সরকার ও দেশের মানুষ সেটি সব সময় স্মরণ করে। আমরা বিশ্বাস করি, দুই দেশ একসঙ্গে একে অপরের সহযোগিতা করলে ‘কমন এনিমি’ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়তে পারব। সে সঙ্গে দুই দেশের জনসাধারণের উন্নতি করা সম্ভব। এমন সংলাপের মাধ্যমে দুই দেশের চ্যালেঞ্জ এবং সেটি মোকাবিলার পথ বের হবে। আমরা বলতে চাই, আমরা আরও ভালো করব যখন একসঙ্গে কাজ করব।’

এ সময় জি২০ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সেই সঙ্গে পি২০ পার্লামেন্টারি স্পিকারস সামিট আয়োজনের জন্য ভারতের প্রশংসা করেন। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এক অকৃত্রিম বন্ধুপ্রতিম দেশের উদাহরণ স্থাপন করেছে। দুই দেশের মধ্যকার শান্তি ও সমৃদ্ধি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও এশিয়ার দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয়’।
এছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুই দেশের সংসদের বৃহত্তর সম্পৃক্ততা, নারী আইন প্রণেতাদের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা এবং আইসিটি খাতে সহযোগিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গতিশীল নেতৃত্বের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন অনেক গভীরে। ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায়। এ সম্পর্ক দিন দিন আরও সুসংহত হচ্ছে’।

যথার্থই বলেছেন তিনি। দুই দেশের সম্পর্ক শুধু সীমান্ত সম্পর্কে আবদ্ধ নয়, বরং হাজার বছর ধরে উভয় দেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল তাদের খাদ্য, শিল্প, সাহিত্য, নদী, যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে। ব্রিটিশ শাসন আমলেও ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশে দুটি পথ দিয়ে ছিল রেল সংযোগ।

মাত্র ৭০ বছর আগেও এই দুই দেশ তাদের সবকিছু ভাগ করেই চলতো, যা মুক্তিযুদ্ধের পরেও ছিল জাতির পিতা ক্ষমতায় থাকাকালে। অধিক জনসংখ্যা হওয়ার কারণে বাংলাদেশ তার নিজ দেশের উৎপাদিত পণ্যের মাধ্যমে জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ফলে চাহিদা পূরণ করার জন্য বহির্বিশ্ব থেকে প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য আমদানি করতে হয়। এক্ষেত্রে ভারত থেকে এসব পণ্যদ্রব্য আমদানি করা সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশের জিডিপি ৯০ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৪৬০ বিলিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পর্যটকদের প্রচুর আগমন ভারতের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। তিনি বলেন, দ্রুত উন্নয়নশীল বাংলাদেশ উভয় দেশকে তার অর্থনৈতিক সুবিধা আরও গভীর করার সুযোগ দেয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তার বিবৃতিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, উন্নত সংযোগ, জ্বালানি খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, পানি খাতে সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ জোরদার করার উপায় অন্বেষণের মতো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ফোকাস করার ওপর জোর দেন। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে এই দুই প্রতিবেশীর অংশীদারত্ব গুরুত্বপূর্ণ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শিলচরের পর এ ডায়লগ উভয় দেশের নানা প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে খোলামেলা কথা হয়েছে। আপনারা শুনে খুশি হবেন, উভয় দেশের সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পেরেছি। প্রথম দিনে পাঁচটি প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছি। পাঁচটির একটি ইকোনমিক, আরও আরও বিনিয়োগ।

এছাড়া বিদ্যুৎ সমন্বয়ের কথা বলেছি। আমরা ভারত থেকে ১ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনি, আরও কিনতে চাই। নেপাল থেকেও এনার্জি কিনতে ভারত আমাদের সাহায্য করবে। তাছাড়া দেশের নদীগুলোর কথা বলেছি, যাতে উভয় দেশের সম্পর্ক আরও ভালো হয়।

 

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে রেল ও নদীপথ ভেঙে পড়ে এবং পাকিস্তান ভারতের ট্রানজিট অধিকার বাতিল করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হলে ১৯৭২ সালে নদীপথের ট্রানজিট পুনরায় চালু করা হয়। বিশ্বায়নের এ যুগে কোনো দেশ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। বাংলাদেশও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত করতে পারে। বিগত ১৫ বছরে সেই চেষ্টাই করে গেছে বাংলাদেশ ও ভারত।

 

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন বিগত ১৫ বছরে ছিল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। সড়ক ও সীমান্ত নিয়ে বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি রেল, নৌ ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ অসংখ্য চ্যানেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে উভয় দেশ।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও উন্নত ও কার্যকর করার ওপর এ সংলাপে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করা হয়। আলোচিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথাও। এই অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত এখন সম্পর্কের স্বর্ণালি সময় অতিক্রম করছে। দুই দেশের মধ্যে এ সংলাপ সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

আমরা সবসময় মনে করি ভারত বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় প্রবেশ করেছে’। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সংলাপ থেকে আমরা প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারবো। তিনি বলেন, দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া সমাধানের পাশাপাশি ভিসামুক্ত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রত্যাশা করছে উভয় দেশ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাও বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের ইতিহাস তুলে ধরেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই সংলাপের লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে যায়। দুদিন ধরে চলে সংলাপ। ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় সিলেট-শিলচর উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। ভারতের বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ এই নীতি ব্যাখ্যা করেন।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনারও প্রশংসা করেন তিনি। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, সীমান্ত এখন আর যুদ্ধ করার জায়গা নয়। উন্নয়নের নতুন নতুন দরজা খুলে দিচ্ছে সীমান্ত। ত্রিপুরার ডেপুটি স্পিকার রামপ্রসাদ পাল বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশের একঝাঁক মন্ত্রী-সংসদ সদস্য ছাড়াও সংলাপে অংশ নেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ভারত থেকেও রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের গবেষক ও শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন। সিলেটের পাশাপাশি শিলচরের শিল্পীরাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

সমাপনী ও সাংস্কৃতিক পর্বের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের কারণে আলাদা হলেও দেশ দুটির মধ্যে শক্ত বন্ধন রয়েছে। ভারতের মানুষ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রক্ত ঝরিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি ভারতের মানুষও যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। এ কারণে দুই দেশের মানুষের মধ্যে রক্তের বন্ধন রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যকার বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব তাসনিমা ইফফাতের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের ইন্ডিয়া চ্যাপ্টারের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট রাধা তমাল গোস্বামী। বাংলাদেশের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলও দু’দেশের সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। সমাপনী পর্বে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের ডিস্টিংগুইশড ফেলো রামি নিরঞ্জন দিশাই।

এ সংলাপ ঘিরে উৎসবের চেহারা নিয়েছিল সিলেট। সংলাপ উপলক্ষে মেলারও আয়োজন করা হয়। উভয় দেশের প্রতিনিধিরাই মনে করেন, সাধারণ মানুষের উন্নয়নে বাণিজ্যিক সম্পর্কও আরও সুদৃঢ় করতে হবে। সংলাপের মাধ্যমেই মেটাতে হবে যাবতীয় সমস্যা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের মোকাবিলায় একজোট হয়ে কাজ করার কথা বলেন। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আরও বেশি করে যোগাযোগ রক্ষার বার্তা দিয়ে শেষ হয় একাদশতম সংলাপ।

১৯৪৭ সালের পূর্বে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ বাণিজ্যই হতো আজকের বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর এ অঞ্চলের পণ্য পরিবহনের অন্যতম রুট ছিল। নদী, সড়কপথ ও রেলপথ—এ অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থার বাস্তবতার আলোকেই তৈরি। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে রেল ও নদীপথ ভেঙে পড়ে এবং পাকিস্তান ভারতের ট্রানজিট অধিকার বাতিল করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হলে ১৯৭২ সালে নদীপথের ট্রানজিট পুনরায় চালু করা হয়। বিশ্বায়নের এ যুগে কোনো দেশ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। বাংলাদেশও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত করতে পারে। বিগত ১৫ বছরে সেই চেষ্টাই করে গেছে বাংলাদেশ ও ভারত।

অবশ্য এই কোনো সম্পর্কই হয়তো কার্যকর হতো না, যদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় না আসতেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে হাজার বছরের সম্পর্ককে তোয়াক্কা না করে এই দেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতের ভূখণ্ডে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে জামায়াত-বিএনপি’র মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

শুধু তাই নয়, পরে ক্ষমতায় গেলে ভারতের একাধিক অঞ্চলে বোমা হামলা চালানোর প্রতিশ্রুতি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও দাউদ ইব্রাহিমকে প্রদান করেছিলেন বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক রহমান। সেই সব ইতিহাস পেছনে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে আবারও ১৯৭১ সালের মতোই দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ বাংলাদেশ ও ভারত। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ যেন বিশ্বের বুকে এক অনন্য উদাহরণ।