বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নারীদের কান্নার আড়ালে মকবুলের ভোগবিলাস

আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী 

প্রকাশিত : ১২:০২ পিএম, ২ অক্টোবর ২০২৩ সোমবার

সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভাল কাজ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার করছেন এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে রিক্রুটিং এজেন্সীর স্বত্বাধিকারী মোঃ মকবুল হোসেন। যার রিক্রুটিং লাইসেন্স নং - ১১৬৬।

অসহায় ও দুস্ত মহিলাদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের‌ ভাব মূর্তি উজ্জ্বল করতে এবং তাদের মনোরঞ্জন এবং সুদৃষ্টি কামনায় মহিলা গৃহকর্মীদের প্রেরণ করা আজ তার সেবার বদলে ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে। যা মাঝে মাঝেই কালো অধ্যায়ের সূচনা করে। যার ফলশ্রুতিতে এই সব প্রতারকেরা ফুলে ফেঁপে বৃত্ত শালীতে রূপান্তরিত হয়।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সহ অন্যান্য তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে দেখা যায় যে, M.H Trade International, RL 1166, Proprietor: Md. Mokbul Hossain, Office Address: 147/2, DIT Extension Road(Ground floor), Fokirapul, Dhaka -1000. Mobile: 01611-553355, 01914-226669. Email: mhtrade2011@gmail.com

নিজস্ব আত্মীয় স্বজনের দ্বারা গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মোঃ মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে মানব পাচার চক্রের অন্যান্য সদস্যগণ হলেন পারভেজ মাহমুদ, আনোয়ার হোসেন ও মাইনুদ্দীন ইসলাম পান্না সহ প্রমুখ।


এম,এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের (আর এল নং- ১১৬৬) লাইসেন্স ব্যবহার করে তারা বৈধ ও অবৈধ ভাবে নারীদের বিদেশে পাঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরব,জর্ডান ও ব্রুনাইতে লোক পাঠানো হয়। তবে বিশেষ করে নারীদের গৃহপরিচারিকা হিসেবে বিদেশ পাঠান মকবুল সিন্ডিকেট। বিদেশে গিয়ে এসব নারীরা পরিস্থিতির কারণে ইচ্ছা- অনিচ্ছায় পরেন নানা বিপদে। প্রভুদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেই তাদের উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। অনেককেই যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে। এজন্য প্রতিটি নারী পাচার বাবদ মকবুল সিন্ডিকেট পান মোটা অংকের ক্যাশ টাকা। যার বিনিময়ে তিনি বিভিন্ন দপ্তরকে উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করে তার এই সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে রিক্রুটিং লাইসেন্স প্রাপ্ত এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (আর এল নং- ১১৬৬) এর স্বত্বাধিকারী মোঃ মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে‌ মানব পাচারের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মামলা। তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানায় দায়েরকৃত মামলা নম্বর - ১৭ (৫)১৭, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন। ৬(১)/৭/৮১১, পল্টন থানায় দায়েরকৃত মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইনেও একটি মামলা রয়েছে যার নং-১২(১২)১৬, কুমিল্লার হোমনা থানার মামলা নং ১৪(৫)১৬ ধারা ১৪৩ /৩৪১/ ৩২৫ /৩২৬/ ৩০৭/ ৩৭৯/ ৪২৭/ ৫০৬ পেনাল কোড, কুমিল্লা হোমনা থানার অপর একটি মামলা নম্বর ১০ (৫) ১৬ ধারা ১৪৩ ৩৪১ ৩২৩ ৩২৪ ৩২৫ ৩৬০ ৩৭৯ ৪২৭ ৫০৬,পেনাল কোড, আবার ডিএমপির পল্টন থানায় মামলা নং-৪৯(০২)১৬ ধারা মানব পাচার প্রতিরোধও দমন আইন ৭/৮/৯/১০/১৪ এবং পল্টন থানার মামলা নং ৫০ (১২)১৫ধারা মানব পাচার প্রতিরোধও দমন আইন ৭/৮/৯/১০/১৪।

মানব পাচারে ভুয়া কাগজপত্র সহ নানা অভিযোগে চার শতাধিক পাসপোর্ট ও শতাধিক জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল কাগজ পত্র সহ সিআইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ইতোপূর্বে ।

গ্রামের সহজ-সরল নারীদের বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভনে সর্বস্বান্ত করাই তাদের মূল কাজ বলে দেখা যায়। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, নানা ধরনের সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে মানব পাচার করে এই চক্র। প্রশাসনের হাতে তাদের কৃতকর্মের গোমর ফাঁস হলে, মুচলেকা দেয় নারী পাচার ব্যবসা আর করবে না বলে অথচ এখনো সক্রিয় রয়েছে এই চক্রটি।

ফতুল্লা মডেল থানার মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে একটি মামলায় ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ফকিরাপুল থেকে গ্রেফতার করা হয় মকবুল হোসেনকে। এ সময় তার অফিস থেকে ৪৮৪টি পাসপোর্ট, ৮৬টি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স সমাপনী সার্টিফিকেট সহ বিভিন্ন জাল কাগজপত্র জব্দ করা হয়। 

পাচারকারী চক্রের দুই সদস্য পান্না ও তৈয়ব নামে দালাল ফকিরাপুলের এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠিয়ে থাকে। সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর সেখানকার মালিক মোটা অংকের টাকা দিয়ে নারী গৃহকর্মীদের কিনে থাকে, আবার কাউকে যৌন কাজে বাধ্য করা হয়।

নারীদেরকে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে দালাল পান্না। পরে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে তাকে নানা ভাবে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করা হয়। এভাবেই চক্রটির হাতে দিনের পর দিন পাচার হচ্ছে দেশের অসহায় নারীরা।

বিদেশে নারী পাচার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই মকবুল হোসেন। শোনা যায় তারা নাকি আবার রাজনৈতিক ব্যানারে নির্বাচনেও দাঁড়াবে, টাকার বিনিময়ে এরা নির্বাচনে জিতলে তখন তো দেশের নারীদেরকে‌ দিয়েই রমরমা ব্যবসা শুরু করবে। এতে করে বহির বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় অথচ এই ধরনের মানুষরূপী শয়তানেরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের শক্তিশালী বলয় তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন, জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরো,‌ বায়রা, বোয়েসেল সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের‌ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধিত আইনের মধ্যে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করলে দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন সাধিত হয় তা রিক্রুটিং এজেন্সি গুলোর বোঝা উচিত।

বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এবং দালালদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য যায় তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করার জন্য তাদের অনেকেই বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হয়, যা ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের ভাব মূর্তি ক্ষুন্ন করে। আমাদের দেশের মানুষ যদি আমাদের দাঁড়াই নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে তারা অন্য ভাষাভাষী মানুষের কাছে আর কি আশা‌ করতে পারে?

আমাদের দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, যারা সুষ্ঠুভাবে বিদেশে লোক প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধির সাথে সংযুক্ত, আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই আর যারা অন্যায় ও প্রতারণার মাধ্যমে তাদের ব্যক্তি স্বার্থকে অক্ষুন্ন রাখতে বদ্ধপরিকর থাকবে, জনস্বার্থে তাদের মুখোশ উন্মোচন এবং আইনের আওতায় আনা অতীব জরুরী।