শাল্লায় অনৈতিক রঙ্গ লীলায় এক ইঞ্জিনিয়ার
শাল্লা(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত : ০৬:৪৫ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার
রোজ বৃহস্পতিবার। ঘড়ির কাটা বেলা ১১টা। অফিস বন্ধ উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলীর। খোঁজ নেয়া হয় তিনি কোথায় আছেন। অফিসে কর্মরত স্টাফরা জানান মাঠে তদারকির কাজে বাহিরে আছেন। প্রায় প্রতিদিনই এই কর্মকর্তার অফিসকক্ষে এভাবে তালা ঝুলানো থাকে। বিষয়টি সন্দেহজনক হয়। এই প্রতিবেদক বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গেলে বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। অফিস বন্ধ রেখে একই দপ্তরের আরইআরএমপি-৩ প্রকল্পের এক মহিলা শ্রমিকের বাড়িতে তার অনৈতিক আরাম-আয়েশের অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার অফিস চলাকালীন সময় বেলা সাড়ে ১১টায় বাহাড়া ইউপির সুখলাইন গ্রামে জনৈক ওই মহিলা শ্রমিকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ নুরুজ্জামান ওই মহিলার বিছানায় শুয়ে নারকেল খাচ্ছেন। অথচ অফিস তালাবদ্ধ রয়েছে। অফিস থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দুরে ওই মহিলার বাড়ি। যার একটি ভিডিও রেকর্ড রয়েছে এ প্রতিবেদকের কাছে। জানা যায়, তিনি ২০১৭ সালে শাল্লা উপজেলায় যোগদান করেন। ফলে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় নানা অপকর্মে জড়িত হন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে শাল্লা উপজেলায় কর্মরত থাকায় ওই দরিদ্র মহিলার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বলে চাওর রয়েছে এলাকায়।
সরজমিনে সুখলাইন গ্রামে ওই মহিলার বাড়ি গিয়ে উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ নুরুজ্জামানকে মহিলার বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে এখানে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সুখলাইন প্রাথমিক স্কুল ভবন নির্মাণ কাজ দেখতে এসেছি। কিন্তু সুখলাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ে অনেক দিন ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে এবং ওইদিনও কোনো লোক কাজ করেনি। তিনি বিদ্যালয়ের কি কাজ পরিদর্শন করছেন জানতে চাইলে এর কোনোরূপ সদুত্তর দিতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুখলাইন গ্রামের অনেকেই জানান, এলজিইডি’র ওই অফিসার সব সময়ই এ মহিলার বাড়িতে আসে এবং অনেক সময় রাত্রি যাপনও করে। হিন্দু মহিলার বাড়িতে একজন মুসলিম সরকারি কর্মকর্তার এরূপ অনৈতিক যাতায়াতে সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে গ্রামবাসির সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা কি করবো, বার বার নিষেধ করার পরও তাকে বিরত করা সম্ভব হয়নি। ওই মহিলা ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ নুরুজ্জামানের এরূপ অনৈতিক সম্পর্কের কারণে আমাদের গ্রামের সামাজিক মূল্যবোধের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুখলাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, প্রকৌশলী নুরুজ্জামান প্রায় দিনই সকালে সাড়ে ১০ টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহিলার বাড়িতে থাকেন। তাঁর এই কার্যকলাপের প্রভাব বিদ্যালয়ে পড়ছে।
শুধু তাই নয়, আরইআরএমপি-৩ প্রকল্পের আওতায় অনেক নারী শ্রমিকেরা কাজ করে। বেশিরভাগ নারীরা প্রকৌশলী নুরুজ্জামানের কাছে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এমনকি প্রকল্পের নারীদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রকল্পের আওতায় কাজ করা নারী শ্রমিক রঞ্জনা চৌধুরী জানান, জনৈক মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে নুরুজ্জামানের। যার ফলে প্রকল্পের সকল কাজে আধিপত্য বিস্তার করে চলছে এই মহিলা। এমনকি প্রত্যেক সদস্যের বেতন কাটা হলেও ওই মহিলা আর মহিলার বোনের বেতন কাটা হয়নি।
আঙ্গুরা বিবি নামে আরেক শ্রমিক জানান, নুরুজ্জামানের বিভিন্ন কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি তাঁর সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকা দুই মহিলা দিয়ে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দেন।
ওইসময় উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ নুরুজ্জামানের সাথে এ প্রতিবেদকের আলোচনা কালে আরইআরএমপি-৩ প্রকল্পে নিয়োজিত জনৈক মহিলা এগিয়ে এসে বিভিন্ন ধরণের অশালীন কথাবার্তা সহ নুরুজ্জামানকে নিয়ে রঙ্গলীলা করবে এবং প্রতিবেদককে দেখে নেয়ারও হুমকি দেয় উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ নুরুজ্জামানের কথিত রক্ষিতা।
সুখলাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাবতী সরকার বলেন, সারা বর্ষা মাসই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের ভবনে কোনো শ্রমিক কাজ করেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সহদেব দাস জানান, প্রায় সময় ইঞ্জিনিয়ার সাব এই গ্রামে আসেন। জিঙ্গাসা করলে বলেন স্কুল পরিদর্শনে আসেন। তবে এই এই ঘটনায় সমাজে বিরুপ প্রভাব পড়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, শাল্লার উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেকার হোসেন(অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানান, ভিডিওটি এখনো পাইনি। তবে কোনো কর্মকর্তা অফিস চলাকালীনর সময়ে কারো বাড়িতে শুয়ে থাকার বিধান নাই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেব বলেন, বিষয়টি এর আগেও চাওর হয়েছিল, আমি তার উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও ছিলাম। এখনো জানাবো এবং উপজেলা পরিষদের আগামি মাসিক সাধারণ সভায় এবিষয়টি আলোচনা করবো।
সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম এপ্রতিবেদককে বলেন, ভিডিওটি আমার কাছে পাঠান। ভিডিও দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।