শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৩ ১৪৩১   ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

সিনিয়র শিক্ষক

“ঈর্ষা”

মোঃ সুলতান আহম্মেদ

প্রকাশিত : ১১:২২ পিএম, ১০ মে ২০২৩ বুধবার

স্বর্গের পরে যদি কোন দ্বিতীয় স্বর্গ থেকে থাকে তাহল এই শান্তির নীড়
পৃথিবী। কিন্তু এই শান্তির নীড়কে আমরা অশান্তির নীড়ে পরিনত
করেছি, আর এই অশান্তির মূল কারণ ঈর্ষা।
যা-বলছিলাম, ঈর্ষা একটি‘দু’অক্ষরের শব্দ বটে কিন্তু এর করাল
গ্রাসে সারাবিশ্ব আজ ক্ষতবিক্ষত। এর দাবানলে জ্বলছে আজ সারা
পৃথিবী।
ঈর্ষা ব্যক্তি জীবনের একটি বড় ধরণের আবেগ, যা সব মানুষের মধ্যেই কাজ
করে। প্রায় প্রতিটি মানুষই কোননা কোন সময় ঈর্ষান্বিত হয়। জন্মের পর
থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ প্রতি নিয়তই যেন ঈর্ষার সংগে বসবাস করে
আসছে। আর ঈর্ষার থেকেই অনেক সময় জন্ম নেয় প্রতিহিংসা বা ধ্বংস
করার প্রবণতা আর এর পর আসে ধ্বংস করার চিন্তা।
পৃথিবীর সব বড় বড় অঘটনের পেছনেই কাজ করে কারোনা কারো ঈর্ষা। ধনী ও
গরীবের মধ্যে ঈর্ষা, বউ-শাশুড়ীর মধ্যে ঈর্ষা, ননদ-ভাবীর মধ্যে ঈর্ষা, স্বামী-
স্ত্রীর মধ্যে ঈর্ষা, প্রতিবেশীদের মধ্যে ঈর্ষা, সরকারী ও বেসরকারীদের মধ্যে

ঈর্ষা। আর এই ঈর্ষা থেকেই জন্ম নেয় হিংসার। যে হিংসার আগুনে জ্বলছে
সারাবিশ্ব সমাজ।
কে শিক্ষিত, কে অশিক্ষিত, কে বেশিজানে, কে কম জানে, কে কম গুনী, কে
বেশী গুনী, কে নিচুবংশের, কে উঁচুবংশের, মানুষ কাকে বেশি চেনে, কাকে
কম চেনে, কে ভাল, কে মন্দ এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সবই ঈর্ষার
কারণে।
ভাইয়ে ভাইয়ে বর্ণে বর্ণে, জাতিতে জাতিতে গোত্রে গোত্রে রাজনৈতিক
দলের মধ্যে, পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে মারামারি, হানাহানি অহরহ চলছে,
আর এ সব কিছুরই মূলে রয়েছে ঈর্ষা নামক কীটটি। এই কীট মানুষকে
মর্মে মর্মে পীড়া দেয়। যক্ষ্মা যেমন মানুষের ফুসফুসকে ধ্বংস করে দেয়
তেমনি এই কীট যে ব্যক্তি, যে সমাজ , যে জাতির মধ্যে প্রবেশকরে সেই
ব্যক্তি, সমাজ বা জাতিকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়। এই পৃথিবীতে
ভাইয়ের মত আপন কে আর আছে? সেই ভাইও একদিন দূরে সরে যায়
ঈর্ষার কারণে।
আমাদের এই ঘুণে ধরা বর্তমান বিশ্ব সমাজ আজ এই কীটের করাল
গ্রাসে ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। যা নিরাময়ের জন্য কোন ঔষধ আজ
পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারেননি।
যার কাছে হার মেনেছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব বা শ্রেষ্ঠ নবী হযরত
মোহাম্মদ (সঃ) এর শান্তির বাণী, যার কাছে হার মেনেছে নজরুলের
সাম্যের বাণী। যার কাছে হার মেনেছে বিশ্বের অগণিত মুনীঋষিদের
বাণী।
হিংসা মানুষের মধ্যে কখন জন্ম নেয়? যখন কোন কাজ কর্মে, ব্যবসা-
বানিজ্যে, চাকুরীর ক্ষেত্রে, অর্থসম্পদের ক্ষেত্রে কেহ কাহারও সম পর্যায় পৌছে
অথবা কাউকে ডিঙ্গিয়ে উপরে উঠে যায়, তখনই তাদের মধ্যে জন্ম নেয়
ঈর্ষা নামের এই কীটটির। যে কীট মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে
মানুষের সমস্ত ¯্নায়ু তন্ত্রকে ঈর্ষার অনলে পুড়ে দেয়।
পৃথিবীর কোন ধর্মেই হিংসার স্থান নেই। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত
আছে, “ হে খোদা, তুমি হিংসুকের অনিষ্ঠ থেকে বাঁচাও” -সুরা

আল-ফালাক। পবিত্র হাদীসে আছে “ আগুন যেমন কাঠ পুড়িয়ে ভষ্মীভূত
করে ফেলে তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়।”
স্বয়ং আল্লাহ-ই- হিংসাকারী কে পছন্দ করেননা। খোদ বৌদ্ধ ধর্মেই আছে
অহিংসা পরম ধর্ম। পবিত্র কুরআনে আছে- ‘মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত’
অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাইতো কবি বলেছেন “ সকলের তরে সকলে
আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।”পৃথিবীর সকল জীবের মধ্যেই ঈর্ষা
বিদ্যমান তবে মানব সমাজে ইহার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ঈর্ষা শুধু
সমাজে মারাত্মক ব্যধি রূপেই কাজ করছে না, এই ব্যধি পশ্চাৎপদ সমাজকে
সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছাতেও অনেক ক্ষেত্রে সহায়তা করে। ঈর্ষা যদি
মানুষের মধ্যে নাইবা থাকতো তাহলে প্রতিযোগিতার জন্ম হতোনা
আর প্রতিযোগিতা না থাকলে মানুষ এক জায়গায় থেমে থাকতো।
পৃথিবীর যা কিছুরই জন্ম তা এই ঈর্ষা থেকে।
আজকের ছাত্র সমাজ, আজকের তরুণ সমাজ, একে অন্যের সাফল্যে
ঈর্ষান্বিত হয়, অনুপ্রাণিত হয়, নতুন নতুন পন্থায় নিজেরাও সাফল্য খুঁজে
বেড়ায়।
শক্তি সাহস ও মনোবল নিয়ে সব বাঁধা অতিক্রম করে সাফল্যের দিকে এগিয়ে
যায়, ফেল করা ছাত্রটিও পাস করতে পারে যদি পাশের ছাত্রটির সাফল্য তাকে
ঈর্ষান্বিত করে। আবার যা কিছু অকল্যাণকর তারও জন্ম দিয়েছে ঈর্ষা,
আমাদের মধ্যে কখনই এরকম ঈর্ষা থাকা উচিত নয়, যা আমাদের ধ্বংসের
দিকে নিয়ে যায়। অকল্যান কর এই ঈর্ষা নামক দাবানলটির ছোবল থেকে রক্ষা
পেতে হলে আমাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। সমাজ থেকে অশিক্ষা,
কু-শিক্ষা দূর করতে হবে।
যার যার ধর্মের প্রতি আস্থাশীল থাকতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে
চলতে হবে। খাঁটী ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে ঈর্ষার সৃষ্টি হয়না। মহৎ ব্যক্তিদের
জীবনী আলোচনা করলে জানা যায় যে, তারা কখনও ঈর্ষান্বিত ছিলেন না,
তাদের মধ্যে ঈর্ষার লেশমাত্র ছিলনা।