যেসব কারণে রোজা ভাঙে না
ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২৩ শনিবার
মধ্যমপন্থার ধর্ম ইসলাম। এতে না আছে কোনো বাড়াবাড়ি, আর না আছে ছাড়াছাড়ি। রমজান মাসের অন্যতম বিধান রোজা পালন। এর জন্য প্রয়োজন সংযম। কিন্তু এ সংযম পালনের মধ্যেও দৈনন্দিন ভুলবশত কিছু বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির শিকার হয় মানুষ। এসব ক্ষেত্রে এমন কিছু কাজ আছে, যা দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। অথচ অনেকে এগুলোকে রোজা ভঙ্গের কারণ মনে করে। এ কারণগুলো কী?
১. ভুলে পানাহার করলে
কোনো রোজাদার রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে তার রোজা নষ্ট হবে না। তবে রোজার কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই পানাহার ছেড়ে দিতে হবে। (মুসলিম ১/২০২, আল বাহরুর রায়েক ২/২৭১)
২. চোখে ওষুধ-সুরমা লাগালে
রোজা রেখে রোজার দিনে চোখে ওষুধ-সুরমা ইত্যাদি লাগালে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। (আবু দাউদ ১/৩২৩, রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫)
৩. সহবাস বা স্বপ্নদোষের পর গোসল না করলে
রাতে স্ত্রী সহবাস করলে বা স্বপ্নদোষ হলে সুবহে সাদিকের আগে গোসল করতে না পারলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কোনো ওজর ছাড়া (বিশেষত রোজা অবস্থায়) দীর্ঘ সময় অপবিত্র থাকা অনুচিত। (ফতোয়ায়ে শামি ২/৪০২)
৪. স্ত্রীকে চুমু দিলে
বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে রোজার দিনে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া জায়েজ। তবে কামভাবের সঙ্গে চুমু খাওয়া যাবে না। আর যুবকদের যেহেতু এমন আশঙ্কা থাকে, তাই তাদের এটা এড়িয়ে চলা উচিত। (মুসনাদে আহমদ ২/১৮০ ও ২৫০, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২০০)
৫. অনিচ্ছাকৃত বমি হলে
অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোজা ভাঙ্গবে না। তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজে ভেতরে চলে গেলেও রোজা ভাঙ্গবে না। (তিরমিজি ৭২০, রদ্দুল মুহতার ২/৪১৪)।
৬. তেল ব্যবহার ও নখ বা চুল কাটলে
রোজা রেখে শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভাঙ্গবে না। অনুরূপভাবে রোজার দিনে নখ বা চুল কাটলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৪/৩১৩, আল বাহরুর রায়েক ২/১৭৩)
৭. যৌন চিন্তায় বীর্যপাত হলে
রোজা রেখে শুধু যৌন চিন্তার কারণে বীর্যপাত হলে রোজা ভাঙ্গবে না। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য যে, সব ধরনের কুচিন্তা তো এমনিতেই গুনাহ। আর রোজা রেখে তো তা আরও বড় অপরাধ। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি। (রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬)
৮. সহবাস ছাড়া বীর্যপাত হলে
কামভাবের সঙ্গে কোনো মেয়েলোকের দিকে তাকানোর ফলে কোনো ক্রিয়া-কর্ম ছাড়াই বীর্যপাত হলে রোজা ভাঙ্গবে না। তবে রোজা অবস্থায় স্ত্রীর দিকেও এমন দৃষ্টি দেওয়া অনুচিত। আর অপাত্রে কুদৃষ্টি দেওয়া তো গুনাহ। যা রোজা অবস্থায় আরও ভয়াবহ। এতে ওই ব্যক্তি রোজার ফজিলত ও বরকত থেকে মাহরুম হয়ে যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/২৫৯, ফতোয়ায়ে শামি ২/৩৯৬)
৯. অনিচ্ছাকৃত পেটের মধ্যে কীট-পতঙ্গ ঢুকলে
মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলেও রোজা ভাঙ্গবে না। অনুরূপ ধোঁয়া বা ধুলোবালি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোজা ভাঙ্গবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/৩৪৯, রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫)
১০. স্বপ্নদোষ হলে
রোজার দিনে রোজা অবস্থায় স্বপ্নে পানাহার করলে বা কারও স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙ্গবে না। (সুনানে কুবরা, বায়হাকি ৪/২৬৪)
১১. চোখের পানি মুখে গড়ালে
চোখের দু’এক ফোটা পানি মুখে চলে গেলে রোজার ক্ষতি হয় না। তবে তা যদি গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (আল মুহিতুল বোরহানি ৩/৩৪৯)
১২. অজ্ঞান হলে
সুস্থ অবস্থায় রোজার নিয়ত করার পর যদি অজ্ঞান বা অচেতন হয়ে যায়, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। (সুনানে কুবরা, বায়হাকি ৪/২৩৫)