শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৩ ১৪৩১   ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

উকিলদের জন্য তৈরি হয়েছিল সানগ্লাস

ফিচার ডেস্ক  

প্রকাশিত : ১১:৫৯ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রোববার

সানগ্লাস ছাড়া রোদে বাইরে যাওয়া খুবই কঠিন। এছাড়াও ফ্যাশনের অনেক বড় একটি অংশ জুড়ে আছে নানান ধরনের এবং রঙের সানগ্লাস। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন রঙের সানগ্লাস এখন বেশ ট্রেন্ডি। হরেকরকম ফ্রেমের, নানা রঙের কাচ দিয়ে এখন তৈরি হচ্ছে সানগ্লাস। তবে জানেন কি? রোদ থেকে চোখ বাঁচাতে নয়, উকিলদের জন্য তৈরি হয়েছিল রঙিন চশমা।

সানগ্লাস বা রঙিন চশমার জন্ম চীনে। দ্বাদশ শতাব্দীতে চীনে এই চশমা তৈরি হয়েছিল আদালতে ব্যবহারের জন্য। তার আগে এমন কিছু যে চোখে দেওয়ার জন্য হতে পারে সেটাই কারও জানা ছিল না। এটি তৈরি হয়েছিল মূলত চোখের কথা আড়াল করতে। আর তা সবার জন্য নয়। উকিলদের চোখের কথা আড়াল করতেই তৈরি হয় এই রঙিন চশমা।

সেসময় চীনে যখন আদালতে বিচার বসতো, সেখানে যিনি বিচারক তিনি কোনো এক পক্ষের কথা শুনতেন, তখন তিনি ধোঁয়াটে স্ফটিকের একটি চশমা জাতীয় জিনিস চোখে পরে থাকতেন। যাতে যিনি বক্তব্য রাখছেন তার বক্তব্য শুনে বিচারকের অভিব্যক্তির পরিবর্তন কারও চোখে না পড়ে।

আরও পড়ুন: নারীকে আকৃষ্ট করতেই সুগন্ধি ব্যবহার শুরু করেন পুরুষরা

আবার আদালতে উকিলরা যখন অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ চালাতেন তখন নিজেদের চোখের ভাব আড়াল করার জন্য দরকার হত রঙিন চশমার। কারণ অনেক সময় জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় উকিলেরও মন গলে যায়। অভিযুক্ত মিথ্যা বললে বুঝতে কখনো উকিলেরও ভুল হতে পারে। তিনিও তো মানুষ। তাই চোখের কথা যেন উল্টোদিকে কাঠগড়ায় থাকা ব্যক্তি বুঝতে না পারেন, সেজন্যই উকিলদের দরকার হত ধূসর কাঁচের চশমা। সেই থেকেই রোদ চশমার জন্ম বলে মনে করা হয়। যার সঙ্গে রোদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।


তবে বর্তমানে আমরা যে ধরনের সানগ্লাস ব্যবহার করি সেসময়ের রঙিন চশমা এমন ছিল না। ধারণা করা হয়, ১৮ শতকে এই আধুনিক সানগ্লাসের জন্ম। ইংরেজ দৃষ্টিবিদ জেমস আইসকফ এই চশমার উদ্ভাবন করেন। তিনি টিন্টেড লেন্স দিয়ে চশমা তৈরি করেছিলেন, তার ধারণা ছিল এতে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হতে পারে।

তবে সানগ্লাসের ব্যবহার সাধারণ মানুষের জন্য শুরু হয় অনেক পরে। ১৯ শতকে ইউরোপে সিফিলিসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। হলুদ এবং বাদামী রঙের সানগ্লাস ছিল এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য। সিফিলিস হচ্ছে একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা সাধারণত যৌন যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়ায়। যেন সাধারণ মানুষ তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে এজন্য চিকিৎসকরা তাদের হলুদ ও বাদামী রঙের চশমা পরে থাকতে বলতেন। এবং এই রঙের চশমা ছিল আলো সংবেদনশীল। ফলে রোগীরও দৃষ্টি ভালো রাখতো রোদে।

আরও পড়ুন: ছোট্ট টি-ব্যাগ সাজিদের আঁকার ক্যানভাস


১৯২৯ সালের দিকে আমেরিকায় সাধারণ মানুষের কাছে সানগ্লাস জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ফস্টার গ্রান্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ফস্টার কমদামে সানগ্লাস বাজারে আনেন। তবে শুরুতে যে সানগ্লাস তারা তৈরি করেছিল সেগুলো রোদ থেকে চোখকে রক্ষা করতে পারত না। ১৯৬০ সালের দিকে নতুনভাবে সানগ্লাস তৈরি করে তারা। যা রোদ থেকে চোখকে রক্ষা করতে পারত।

১৯ শতকের শেষ দিকে এসে জনপ্রিয় হয় সানগ্লাস। যখন সেলিব্রেটি, সংগীতশিল্পী এবং রাজনীতিবিদরা সানগ্লাস পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের ফ্রেম এবং রঙের সানগ্লাস আসতে থাকে বাজারে। সঙ্গে থাকত নানান ধরনের প্রযুক্তি। যেমন- স্ক্র্যাচ-প্রতিরোধী লেন্স, ইউভি সুরক্ষা এবং কিছু ছিল অ্যান্টি-রিফ্লেক্টিভ এবং অ্যান্টি-ফোগ লেপ।