দুর্নীতি কি বন্ধ হবে?
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন
প্রকাশিত : ০১:৩৭ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার
দুর্নীতি নিয়ে দেশের সবার ভাবনা দেখে মনে হয় আমরা অনেক সচেতন। কিন্তু এই সচেতন মানুষগুলো দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে!
দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম।
গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের এক ধাপ অবনমন হয়েছে। টিআই বলেছে, ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৫, যা গতবারের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম (প্রথম আলো, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩)।
আরও পড়ুন >>> দুর্নীতি বনাম আইএমএফের ঋণ
এটা কোনোভাবেই সম্মানের নয়। এমন কোনো খাত পাওয়া যাবে না যেখানে দুর্নীতি নেই। শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলা, যোগাযোগ, সেবা সব খাতেই দুর্নীতি। মনে হয় দুর্নীতি করার জন্যই তাদের নিয়োগ দেওয়া।
পত্রিকা খুললেই দুর্নীতির খবর, টেলিভিশন খুললেই দুর্নীতির খবর। এত এত খবর কিন্তু দুর্নীতিবাজরা ধরা পড়ে না...
এত দুর্নীতির পরও একটা দেশ কীভাবে আগাচ্ছে তা আমার কাছে বিস্ময় লাগে। একদিকে দেশের ধনীরা কানাডায় বেগমপাড়া বানাচ্ছে অপরদিকে প্রান্তিক মানুষের দিন পার করছে কষ্টে। এই দেশ কি বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন?
পত্রিকা খুললেই দুর্নীতির খবর, টেলিভিশন খুললেই দুর্নীতির খবর। এত এত খবর কিন্তু দুর্নীতিবাজরা ধরা পড়ে না। তারা ঠিকই বুক ফুলিয়ে হেঁটে যায়। তাদের দেখে দুদকই মনে ভয় পায়। দুর্নীতির নমুনাগুলো দেখেন।
আরও পড়ুন >>> জনগণের টাকায় আনন্দ উল্লাস!
দূষণ মাপার যন্ত্র নেই, আন্দাজে ফিটনেস সনদ (প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩); সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিল—১৩ উৎপাদন তলানিতে, ডুবে আছে লোকসানে (প্রথম আলো, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩); পাঠদানের অনুমতি নেই, তবু শিক্ষার্থী ভর্তি (প্রথম আলো, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩); স্মার্ট গতি নেই স্মার্টকার্ডে (প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩); রাজউক থেকে নথি গায়েব কীভাবে, ২ মাসেও অজানা (প্রথম আলো, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩); ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না পেট্রোবাংলা (দেশ রূপান্তর, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩); আ.লীগ ও জাসদ নেতারা মিলেমিশে পদ্মার বালু লুট (প্রথম আলো, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। এইসব দেখার মতো মনে হয় দেশটা সত্যিই এদের কাছে জিম্মি।
সবচেয়ে অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, দেশে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে ২১ ব্যক্তির। ক্রেডিট সুইস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তৈরি করা ডাটাবেজের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২২ সালের সংস্করণে দেখা যায়, দেশে এখন ৫০ কোটি ডলার বা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিমাণের সম্পদ আছে ২১ ব্যক্তির কাছে।
আরও পড়ুন >>> দুদকের ধার গেল কই?
করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২১ সালে দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে, এমন ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। ওই বছরের শেষে দেশে ১ মিলিয়ন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকার সমপরিমাণ) বা এর বেশি মূল্যমানের সম্পদের মালিক ছিল ৩০ হাজার ৫৫৯ জন। ২০২০ সালে করোনার বছরে এই সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৩৯৯ জন। (বণিক বার্তা, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)
শুধু বিদেশে টাকা পাচার আর পদে বসে দুর্নীতি হচ্ছে এমন নয়, দুর্নীতিবাজদের ধরার পর তাদের মামলার অগ্রগতিও তেমন দেখা যায় না...
একবার শুধু ভাবেন, এত টাকা তারা কীভাবে পাচার করেছে? দেশের কেউ জানলো না? প্রশ্ন হলো, তাহলে প্রশাসন কী করছে? কেন তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে না? এইভাবে দেশ থেকে দুর্নীতি বন্ধ করা অসম্ভব।
শুধু বিদেশে টাকা পাচার আর পদে বসে দুর্নীতি হচ্ছে এমন নয়, দুর্নীতিবাজদের ধরার পর তাদের মামলার অগ্রগতিও তেমন দেখা যায় না। ফলে একজন দুর্নীতিবাজের অপরাধ প্রমাণিত হতে সময় লাগছে দীর্ঘদিন। এতে করে দুর্নীতিবাজদের আরও উৎসাহিত করা হয়।
আরও পড়ুন >>> দুদক, দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ
২৫ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথমবারের মতো জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে ডিসিদের একক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মাঠ প্রশাসনের অফিসগুলোর দুর্নীতি বন্ধে ডিসিদের কোনো প্রস্তাব ছিল না (কালের কণ্ঠ, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩)।
তার মানে হলো, ডিসিরাই চাইছে না দুর্নীতি বন্ধ হোক! অথচ দুর্নীতি বন্ধে তাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তারা যদি ঘুরে দাঁড়ায় দেশটা সোনার দেশে পরিণত হবে। কবে দেশ থেকে দুর্নীতি বন্ধ হবে আমি সেইদিনের অপেক্ষায়। সেই দিন কি আদৌ আসবে?