পুনঃব্যবহার
পরিবেশের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ ও নতুন উদ্যোগ বাড়বে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০১:১২ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০২৩ শনিবার

#রিসাইকেল পণ্যের বিক্রিতেও ভ্যাট মওকুফ চান ব্যবসায়ীরা
#এ খাতে যারা কাজ করছেন তাদেরও পুরস্কৃত করা উচিতসারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। অটোমোবাইল, ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রসাধন পণ্যের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব খাতের অন্যতম কাঁচামাল প্লাস্টিক। তবে যত্রতত্র প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিবেশের ক্ষতি করছে। এমন পরিস্থিতিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহার ও প্লাস্টিক পণ্য রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহারে বড় বিনিয়োগ করছে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ প্রাণ-আরএফএলসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তাদের এই উদ্যোগ পরিবেশের উপকারের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বেসরকারি এসব উদ্যোগকে সাধুবাদ দিতে রিসাইকেল করা বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিটি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) মওকুফ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া প্লাস্টিক পণ্যের প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে প্লাস্টিকের চিপস বা ছোট টুকরো পর্যন্ত প্রক্রিয়াজাতকরণে পাওয়া যাবে। তবে এ ছাড়ের সুযোগ উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
আরও পড়ুন: দেশেই পলিস্টাইরিন ফেব্রিকস উৎপাদন করবে প্রাণ-আরএফএল
গত বছরের ১ জুন প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে প্লাস্টিক দানা উৎপাদনের ওপর ভ্যাট মওকুফের ঘোষণা করে রাজস্ব বোর্ড আদেশ জারি করে। যদিও তা নিয়ে মাঠ পর্যায়ের ভ্যাট অফিসগুলোতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর দাবির ভিত্তিতে চলতি বছরের শুরুতে এনবিআর এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।
এর আগে বিপজ্জনক রাসায়নিক উপাদানের আগ্রাসন থেকে পরিবেশ রক্ষায় আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছিল এনবিআর। এবারই মূসক মওকুফের বিষয়টি স্পষ্ট করছে রাজস্ব বোর্ড।
আরও পড়ুন: দেশে প্লাস্টিক শিল্পের বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারে সংগ্রহ, বাছাই এবং প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। পণ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত করতে বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়। যার মধ্যে বর্জ্য সংগ্রহের কাজটিই সবচেয়ে কঠিন। এছাড়া ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য নতুন ভার্জিন প্লাস্টিকে রূপান্তর করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়। সেখানে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।
কারখানায় প্লাস্টিক রিসাইকেল হচ্ছে
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর প্রতিষ্ঠান টেল প্লাস্টিকের নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়। আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র এতে ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করাটা ব্যাপক ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। সংগ্রহ করা নতুন পণ্যের মতো রূপান্তরে নানা ধাপ অতিক্রম করতে হয়, সেখানে আসলে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। মূসক অব্যাহতি দেওয়া হলে উদ্যোক্তারা উৎসাহ পান। এ খাতে কাজ করতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসবেন। পরিবেশ বাঁচাতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। রিসাইকেল করা পণ্যটি পরিবেশের জন্য ভালো। এগুলোর দাম বেশি হয়, কেননা এতে অনেক খরচ যোগ হয়। কিন্তু অনেকের ধারণা রিসাইকেল করা পণ্যের দাম কম বা অর্ধেক। সব ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে প্রশংসনীয় উদ্যোগের জন্য নানা পুরস্কার দেওয়া হয়, রিসাইকেল খাতে যারা কাজ করছে তাদেরও পুরস্কৃত করা উচিত।
আরও পড়ুন: টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার
প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমাণ চাহিদা বাড়ায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ২০১২ সাল থেকে প্লাস্টিক পণ্য রিসাইকেলের উদ্যোগ নেয় প্রাণ-আরএফএল। হবিগঞ্জসহ সারাদেশে তিনটি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্লান্ট করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ খাতে প্রায় ৩২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে গ্রুপটি। বর্তমানে প্রাণ-আরএফএল তার মোট প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রায় ১০ শতাংশ রিসাইক্লিং করে। আর রিসাইকেল কারখানাগুলোতে বছরে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যবহৃত প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হয়। এসব থেকে সংগ্রহ হয় ২৭ হাজার মেট্রিক টন কাঁচামাল। এই কাঁচামাল থেকে প্লাস্টিকের বালতি, চেয়ার, বেলচা, ফুলের টবসহ ১০০ ধরনের পণ্য তৈরি হয়।
টোকাই কিংবা ভাঙারির দোকান থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে। এরপর রিসাইকেলের উদ্দেশ্যে সেগুলো পরিষ্কার করে চিপের মতো ছোট ছোট টুকরো বা দানায় পরিণত করে। উৎপাদনের এই ধাপকে মধ্যবর্তী পণ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই দানা থেকেই পরে নতুন প্লাস্টিক তৈরি করা হয়।
আরও পড়ুন: রিসাইকেল প্লাস্টিকে তৈরি পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি
কামরুল হাসান বলেন, উন্নত বিশ্বে রিসাইকেলের পর এখন আবার আপসাইকেল করা হচ্ছে। অর্থাৎ কোকের বোতল একাধিকার ব্যবহার হচ্ছে। কিংবা সেটা পানির বোতল হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে আমাদের এই খাতটি এখনও আন-অর্গানাইজড। তবে কর ছাড় ও সবুজের অর্থায়নের আওতায় রিসাইকেলের এই খাতটি আনা গেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে, এমনকি প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা পাবে। কেননা প্লাস্টিক চিপের সিংহভাগই আমদানি করতে হয়। এই উদ্যোগের ফলে নতুন উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।
রিসাইকেল প্লাস্টিকে তৈরি পণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা-ফাইল ছবি
যদিও প্রক্রিয়াজাতের পাশাপাশি রিসাইকেল পণ্য বিক্রিতে ভ্যাট মওকুফ সুবিধা চায় বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
সংগঠনটির সভাপতি শামীম আহমেদ জানান, বর্জ্য সংগ্রহ থেকে প্রক্রিয়াজাত পর্যন্ত ভ্যাট সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত করার পর আবার পণ্য বিক্রিতে এই সুযোগটা চাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে রাজস্ব বোর্ডকে আমরা চিঠি দিয়েছি।