রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৭ ১৪৩২   ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

১০ কোটি টাকার চিনিবাহী জাহাজে ‘রহস্যময়’ ডাকাতি

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত : ০১:০৭ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার চিনি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার পথে একটি লাইটার জাহাজে ‘রহস্যময়’ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। জাহাজটি নিখোঁজ থাকার এক দিনের ব্যবধানে ২০ হাজার ৩০০ বস্তা চিনির সিংহভাগ কীভাবে প্রকাশ্যে ডাকাতেরা নিয়ে গেল তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।  

ডাকাতির কবলে পড়া জাহাজটি বিশেষ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে চাঁদপুর নৌ পুলিশ। জাহাজটি এখন চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনপুর এলাকায় পুলিশের জিম্মায় রয়েছে। পুলিশ জাহাজের নাবিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জাহাজটির বেশির ভাগ পণ্য ডাকাতেরা নিয়ে গেছে। তবে প্রকৃত হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।

আমদানিকারক ও জাহাজমালিকের প্রতিনিধিরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ ‘এমভি লয়ালটি’ থেকে ১ হাজার ১৫ টন চিনি বোঝাই করা হয় ‘এমভি দেওয়ান মেহেদী–২’ নামের একটি লাইটার জাহাজে। ১৫ ডিসেম্বর জাহাজটি নারায়ণগঞ্জের রূপসীর উদ্দেশে রওনা হয়। জাহাজটির মালিক এমএসটি মেরিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড। জাহাজটিতে থাকা আকিজ গ্রুপের চিনি পরিবহনের দায়িত্ব ছিল মেসার্স মডার্ন লজিস্টিকসের।

মেসার্স মডার্ন লজিস্টিকসের কর্ণধার পারভেজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্ধারিত গন্তব্যে না পৌঁছানোর কারণে গত মঙ্গলবার সকালে জাহাজের মাস্টারকে ফোন করি আমরা। তিনি জানান, জাহাজটির ইঞ্জিন সমস্যার কারণে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। জাহাজটি তখন নারায়ণগঞ্জের রূপসীর অদূরে মুক্তারপুর এলাকায় অবস্থান করছে বলে মাস্টার জানান। এক দিন পর গতকাল বুধবার জাহাজটি ডাকাতের কবলে পড়েছে বলে জানানো হয়। এটি রহস্যজনক।

জানতে চাইলে জাহাজের মালিক এমএসটি মেরিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক প্রদীপ বাবু, ডাকাতির অভিযোগ শুনেছি। একটি স্পিডবোটে ১৭ জন ডাকাত এসে জাহাজে থাকা চিনি নামিয়ে বিক্রি করেছে। জাহাজে থাকা আমদানিকারকের প্রতিনিধির যোগসাজশে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর দাবি। জাহাজের ১৩ নাবিক ছাড়া একজন কীভাবে ডাকাতির যোগসাজশ করতে পারে, প্রশ্ন করলে তিনি তাঁর বক্তব্যে অনড় থাকেন।


ডাকাতির কবলে পড়া জাহাজটিতে গতিপথ শনাক্তকরণ যন্ত্র ছিল। জাহাজটি নিখোঁজ হওয়ার পর বেসরকারি ই-লজিস্টিকস ও ডেটা অ্যানালিটিকস প্রতিষ্ঠান ‘জাহাজী’সর্বশেষ গতিপথ অনুসরণ করে নৌ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায়।

জাহাজীর সহপ্রতিষ্ঠাতা কাজল আবদুল্লাহ বলেন, জাহাজটি থেকে সর্বশেষ সংকেত পাওয়া যায় ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। সে সময় জাহাজটি চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার মোহনায় অবস্থান করছিল।

চাঁদপুর নৌ পুলিশ অঞ্চলের প্রধান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, জাহাজী থেকে প্রাথমিক ক্লু পাওয়ার পর নৌ পুলিশের তিনটি দল রাতেই অভিযান চালায়। যেখানে জাহাজটিতে গতিপথ শনাক্তকরণ যন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে, তার ১০ কিলোমিটার দূরেই জাহাজটি উদ্ধার করা হয়।

মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, জাহাজের নাবিকদের মুঠোফোনের অবস্থান শনাক্ত করে জাহাজ চলাচলের গতিপথ অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহাজের লোকজন জড়িত বলে সন্দেহ হচ্ছে। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসবে এটি সাজানো ঘটনা নাকি আসলেই ডাকাতি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের কার্যক্রম চলছে।