শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রায় শেষে উৎফুল্ল ডিআইজি মিজান যা বললেন

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৫:৫২ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার

ঘুস লেনদেনের মামলায় বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের কারাদণ্ড­ হয়েছে। 


বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম বিভিন্ন মেয়াদী কারাদণ্ডের এ রায় ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার পর থেকে দুর্নীতি দমন সংস্থা, দুর্নীতি দমন ব্যুরো ও পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের ইতিহাসে ঘুস লেনদেনের মামলায় সাজার এমন ঘটনা বিরল।

 

রায়ে ডিআইজি মিজানুরের এক ধারায় ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও দুদকের বাছিরকে দুই ধারায় ৮ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর বাছিরকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৮০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদ­ণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুই ধারায় দেওয়া সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে করে বাছিরকে সব মিলিয়ে ৫ বছর সাজাভোগ করতে হবে। দুজনের ক্ষেত্রেই হাজতবাসের সময় বাদ যাবে।

রায় উপলক্ষে মিজানুরকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এবং বাছিরকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আদালতে আনা হয়। সকাল ১১টার পর তাদের আদালতের এজলাসে তোলা হয়। এরপর বিচারক এজলাসে এসে সোয়া ১১টার দিকে রায় পড়া শুরু করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি মিজানুরকে অনেকটাই উৎফুল্ল দেখা গেলেও বাছির ছিলেন নিশ্চুপ।

রায় ঘোষণা শেষে মিজানুর সাংবাদিকদের বলেন, বাছির আমাকে ঘুষ দিতে বাধ্য করেছেন। দুদকে বাছিরের মতো আরও বাছির আছে। আদালতের আদেশে এটাই প্রমাণিত হয়েছে। তাদেরও খুঁজে বের করুন। রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কোনো মামলাই না। ভুয়া মামলা।

 

এদিকে আসামিপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের যাওয়ার কথা জানিয়েছে। অপরদিকে রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, দুর্নীতি করলে কারো রক্ষা নেই এই রায়ই তার প্রমাণ। দুর্নীতিবাজদের জন্য এ রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

মামলা, তদন্ত ও বিচার : ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই ৪০ লাখ টাকা ঘুস লেনদেনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানুর ও এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের বছরের ১৯ জানুয়ারি দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। এরপর ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। একই বছরের ১৯ আগস্ট মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর তা শেষ হয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৭ জনের মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। গত ২৪ জানুয়ারি দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ওই দিন দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল দুই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। 

গত ৩ ফেব্রুয়ারি মিজানুরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। যুক্তিতর্কে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী খালাস দাবি করেন। এরপর গত ৬ ফেব্রুয়ারি খন্দকার এনামুল বাছিরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু করেন আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান। অবশিষ্ট যুক্তিতর্ক গত ১০ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। ওই দিন দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার এদিন ধার্য করা হয়।

 

চার্জশিটে বলা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনে দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশ্যে, নিজের লাভবান হওয়ার আশায়, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ডিআইজি মো. মিজানুর রহমানকে অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার হীন উদ্দেশ্যে ৪০ লাখ টাকা ঘুস গ্রহণ করেন। 

অপরদিকে মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনীত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য অর্থাৎ অনুসন্ধানের ফলাফল নিজের পক্ষে নেওয়ার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিক করার লক্ষ্যে ৪০ লাখ টাকা ঘুস দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। 0