মঙ্গলবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ১৬ ১৪৩২   ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

নীলফামারীতে ভোটের মাঠে নবিন-প্রবিনদের লড়াই

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:৫৬ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০২১ সোমবার

নীলফামারী পৌরসভার নির্বাচন আগামি ২৮ নভেম্বর। হাতে আছে আর মাত্র ছয়দিন। শেষ সময়ে ভোটের নানা সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটারদের দারে দারে প্রার্থী ও প্রার্থীদের সমর্থকেরা।

বিগত পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে জনগনের দ্বারা নির্বাচিত টানা সাত বারের মেয়র প্রার্থী দেওয়ান কামাল আহমেদ’র (নৌকা) প্রতিদ্বন্ধিতা করতে মাঠে নেমেছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুজ্জামান বুলেট (নারকেল গাছ) ও জহুরুল আলম (কম্পিউটার)। নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে ও নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগনের কাছে নীলফামারীর পৌরসভার নেতৃত্বে পরিবর্তনের কথা বলছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে থেমে নেই টানা সাত বারের নির্বাচিত মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পৌরবাসী আবারো তাকে নির্বাচিত করবে বলে আশাবাদী তিনি। তবে নেতৃত্ব বাছায়ের জন্য থেমে নেই ভোটাররাও। মেয়র প্রার্থীদের দেওয়া আশার বানীতে মন গলছে না তাদের। নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে পূর্বের ন্যায় এবারও যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন তারা। এবারই প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার মধ্যে কৌতুহল কাজ করছে ভোটরদের মাঝে।

সরেজমিনে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ মানুষের উন্নয়নে যে প্রার্থী সব সময় যুক্ত রাখবেন, পৌরবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিবেন তাদের কেই নির্বাচিত করবেন জনগন। তবে ভোটের মাঠে প্রতিককে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যাক্তি ও তার ভাবমূর্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন ভোটাররা। যোগ্য প্রার্থী যে প্রতিক নিয়ে ভোটের মাঠে নামুক না কেনো দলমত নির্বিশেষে তাকেই নির্বাচিত করবে ভোটাররা। 
কেমন মেয়র চান প্রশ্নে ভোটাররা বলেন, সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান মেয়র। যার দ্বারা পৌরবাসীর উন্নয়ন হবে, পানি সমস্যা দূর হবে, সহজ যোগাযোগ স্থাপন, থাকবে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা, স্বাস্থ্য সেবাসহ  সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। সর্বোপরী মেয়র হিসেবে দেখতে চান, যিনি স্বপ্ন দেখবেন এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের সক্ষমতা রাখবেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নাগরিকদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন, কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবেন, পাঁচ বছরের মধ্যে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করবেন। তরুনদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মসংস্থানের পথ দেখাবেন।

স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, পৌরসভা নির্বাচনে প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা কাজ করে ভোটারদের কাছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখা যায় যদি যোগ্য ব্যক্তি দলীয় প্রতিক না পায় তাহলে দলীয় অনেক নেতা-কর্মীও উন্নয়নের স্বার্থে দলের বাইরে ভোট দিয়ে থাকেন। এমনকি এটিও পরিলক্ষিত হয় যে দলের মধ্যে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর ভাবমূর্তি নষ্ট করে দলের মধ্যে নিজের অবস্থান সুদূঢ় করনে দলীয় প্রতিকের বাইরে কাজ করে থাকেন। তাই এবারের পৌরসভা নির্বাচনে নবীন ও প্রবীনের লড়াইয়ে কে জয় লাভ করে সেটাই দেখার অপেক্ষায় তারা।

বিগত নীলফামারী পৌরসভার দুই ধাপের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জহুরুল আলম সরকার দলীয় এই হেভিওয়েট প্রার্থী দেওয়ান কামালের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও কপাল ফেরে নি তার। দলীয় কোন্দল আর পদের লড়াইয়ে হেরেছেন তিনি। তবে এবার বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বড় বে-কায়দায় এই প্রার্থী। এরপরেও ভোটের মাঠে হাল ছাড়েন নি তিনি। বুকভড়া আসা নিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত আশাবাদী তিনি।
এদিকে, তরুন রাজনীতির ধারক, সাবেক ছাত্র নেতা নুরুজ্জামান বুলেট প্রথমবারের মতো ভোটের রাজনীতিতে ভাগ্য নির্ধারনে নেমেছেন। তার প্রতীকে লেগেছে হাওয়া। নবীন প্রবীনের সূরের মূর্ছনায় বাতাসে দোল খাচ্ছে তার প্রতিক নারকেল গাছ। এই প্রার্থী বয়সে নবীন হলেও এলাকায় রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি, সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতা। 

একাধানে পৌরবাসির পছন্দের সাত বারের নির্বাচিত মেয়র, নৌকার পরিক্ষিত মাঝি দেওয়ান কামাল আহমেদ পার করেছেন ভোটের অনেক পরিক্ষা। এছাড়া পারিবারিক ভাবেই তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে সক্রিয়। একাধারে একজন কৃষিবিদও তিনি। মানুষের মন যোগাতে অনেকটাই পারদর্শী। ১৯৮৯ সালে প্রথম পৌর পিতা নির্বাচিত হন এই নেতা। তার সময়ে তৃতীয় শ্রেনীর পৌরসভাকে বর্তমানে উন্নিত করেছেন প্রথম শ্রেনীতে। এর পর থেকে মাঠে শক্তিশালী কোন প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী না থাকায় গত সাত ধাপে তিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।  

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর নীলফামারী জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল আলম জানিয়েছেন, অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এবারের নীলফামারী পৌরসভা নির্বাচন অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমবারের মতো পৌরবাসী ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এই মেশিন সর্ম্পকে খুব বেশি ধারনা নেই ভোটারদের। বিশেষ করে নতুন, বয়স্ক ও কম শিক্ষিত ভোটাররা বিব্রতকর অবস্থায় পরবেন। এছাড়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অনেক শক্তিশালী। মাঠ পর্যায়েও রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। অপর দিকেও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই অপর দুইজন নবীন ও মাঝবয়সী প্রার্থী। এর পরেও পৌরবাসী তাদের অধিকার আদায়ে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করবে।

জেলা রির্টানিং অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, সীমানা জটিলতার কারনে ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকে আর কোন নির্বাচন হয়নি। ২৮ নভেম্বর পৌর এলাকার ৯ ওয়ার্ডের ১৬ কেন্দ্রে ইভিএম এর মাধ্যমে নেয়া হবে ভোট। উৎসব মুখোর পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রস্তুত তারা। এবারের নির্বাচনে ৩ মেয়র, ৬০ সাধারন সদস্যসহ সংরক্ষিত আসনে লড়ছেন ২২ জন প্রার্থী। ৩৫ হাজার ৯শ’ ৮১ ভোটারের মধ্যে নারী ১৮ হাজার ৫শ’ ৬৫ ও পুরুষ ১৭ হাজার ৪শ’ ১৬ জন ভোটার রয়েছে।