ঐক্যবদ্ধ থাকার মাঝেই মুসলমানদের সফলতা
প্রকাশিত : ০৫:৫২ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিভক্ত হও না। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনি তোমার হৃদয় প্রীতির বাঁধনে বেঁধে দিলেন এবং তোমরা তারই অপার অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের কিনারায় ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করলেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা হিদায়াত লাভ কর’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)।
এই আয়াত অনুসারে আমরা যদি জীবন পরিচালনা করি তা হলে আমাদের মাঝে আজ যে মতভেদ, পরস্পর বিভক্তি তা দূর হবে। আমাদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত থাকবে। জাতীয় ও ধর্মীয় ঐক্য সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর এই ঐক্যই আমাদের এক উম্মতে পরিণত হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করবে, যার ফলে আমরা এক শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে পারব। আর এর জন্য আমাদের আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে মহানবী (সা.)-এর পরিপূর্ণ অনুসরণ করা, তার শিক্ষানুসারে চলা।
কেননা আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হলো— ‘তুমি বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তা হলে তোমরা আমার অনুসরণ কর। (এমনটি হলে) আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত:৩১)।
এ নির্দেশ অনুসারে মহানবীর (সা.) আনুগত্য ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হতে পারে না আর না-ই জাতির শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় থাকতে পারে। মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের পর খেলাফতে রাশেদাই হচ্ছে আল্লাহর সেই মজবুত রজ্জু, যার মাঝে ধর্মীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা নিহিত।
হজরত আবু দারদ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার পরে আবু বকর এবং উমরের অনুসরণ কর। কেননা তার দুজন খোদার সেই দীর্ঘ রজ্জু, যে এই দুজনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে সে যেন এমন এক হাতল ধরেছে, যা ভাঙার নয়’ (বৈরুত থেকে প্রকাশিত তফসির দূররে মনসুর, প্রথম খণ্ড, পৃ: ৫৮৪)।
কাজেই আকাশ থেকে নেমে আসা এই আল্লাহর রজ্জু হচ্ছে, প্রথমে নবুয়ত আর পরবর্তী সময় খেলাফত, যা মানবজাতির জন্য একটি বিপ্লব সৃষ্টিকারী, অনুসরণীয় ও ঐতিহাসিক যুগের সূচনা করে।
অতএব ৬১০ সনে যখন আল্লাহতায়ালা আরবের মরুভূমি এবং অনুর্বর উপত্যকার শহর পবিত্র মক্কায় হজরত রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে ইসলামের বীজ বপন করেন। আরব জাতি হিংস্র জন্তুর মতো স্বভাব, নৈতিকতা বিবর্জিত এবং সর্বপ্রকার ঘৃণ্য আচার-আচরণ এবং নির্লজ্জতা নিয়ে গৌরবকারী, দাম্ভিক ও বিদ্রোহী মনোভাব সম্পন্ন জাতি ছিল, যে কারণে সে যুগের সংস্কৃতিশীল ও শক্তিশালী দুটি বড় বড় সাম্রাজ্য অর্থাৎ ইরান ও রোম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তাদের নিজেদের অধীনস্ত রাখাও পছন্দ করত না।
এ অসভ্য ও বর্বর জাতি যখন মহানবী (সা.)-এর মতো শ্রেষ্ঠ নবী, পবিত্রকারী ও সম্মানিত রসুলের আঁচল ধরে, তার দাসত্ব বরণ করে এবং আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে তখন তাদের জীবনাচার পাল্টে যায়। তারা অসভ্য হতে মানুষ এবং মানুষ হতে উন্নত স্বভাব চরিত্রের অধিকারী মানুষ আর উত্তম স্বভাবের মানুষ হতে খোদাপ্রেমী মানুষে পরিণত হয়।
পাঁচবেলা মদের নেশায় মাতালরা পাঁচবেলা আল্লাহর দরবারে সিজদাকারী নামাজি বনে যায়। একে অপরের রক্তপিপাসুরা পরস্পর এমন ভাই ভাই হয়ে যায়, যার সামনে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়ও তুচ্ছ মনে হয়। এবং বিক্ষিপ্ত ও বিদ্রোহী জাতি এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ হয় যেন শিশাগলিত প্রাচীর। তারা আল্লাহর বাণী প্রচার করাকেই নিজ জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং এ পথে নিজেদের প্রাণ ও ধনসম্পদ নির্দ্বিধায় উৎসর্গ করে।
আর এই উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে উত্তাল সমুদ্রও তাদের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারেনি এবং ভয়ানক মরুভূমিও তাদের উদ্যমে চিড় ধরাতে পারেনি। এমনকি অল্প সময়ের মধ্যেই ইসলামের দিগ্বিজয়ী, চিরস্থায়ী, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং সত্য ও খাঁটি তৌহিদের শিক্ষা এবং জীবন প্রদায়িণী খোদাপ্রেমের বাণী দ্বারা গোটা বিশ্বজগতকে প্রদীপ্ত করার জন্য এই তারা ‘কর্মের মূর্ত প্রতীক’ হিসেবে সব সমস্যাকে পায়ে ঠেলে সম্মুখে এগিয়েছে। ফলে আল্লাহ তাদের উত্তরোত্তর সফলতাও দান করেছেন।
আমরা দেখতে পাই যখনই ঐশী খেলাফতের রজ্জু থেকে মুসলমানরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন থেকেই তাদের উন্নতির ধারা বন্ধ হতে থাকে এবং বিশ্বময় অমুসলিমদের দ্বারা মার খাওয়া শুরু হয়। তাই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।
পরস্পর বিভক্ত না হয়ে মহানবীর (সা.) শিক্ষার ওপর আমল করে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হবে।