বাজারে ঊর্ধ্বমুখী পণ্যের দাম, নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের
শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:০৫ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার
শান্তিগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ মানুষ দিন আনে দিন খায়। দিনমজুর, কৃষক, পরিবহণ শ্রমিক কিংবা মৎস্যজীবী। সারাদিন রোজগার করে যা আয় করেন তা দিয়ে বাজার সদাই করে ক্লান্ত শরীরে স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেন। কিন্তু ইদানিং আর স্বস্তিতে নেই উপজেলার সাধারণ মানুষ। বাজারে প্রত্যেকটি ভোগ্য পণ্যেরই দাম বাড়ছে হুহু করে; ক্রমশ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। এভাবে চলতে থাকলে চরম সংকটে পড়তে হতে পারে এ হাওরিয়া উপজেলার নিম্ন আয়ের ও মধ্যভিত্ত শ্রেণির মানুষকে। সাধারণ মানুষেরা মনে করেন দ্রুত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নিত্যপণ্যের বাজারের লাগাম টেনে ধরা দরকার। পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে যেসব সিন্ডিকেট কাজ করে, তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। তবে সুনামগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, পূজার কারণে বাড়তি চাপ থাকায় বাজার কিছুটা এলোমেলো। দ্রুতই বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার ও বুধবার শান্তিগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে একাধিক ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিত্যপণ্যের দু’একটি পণ্য ছাড়া সব পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। কাঁচাবাজার, ব্রয়লার মুরগির বাজারও বেসামাল। গত দু’সপ্তাহ আগে যে প্যাকেট সোয়াবিন তেল ১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে সেই তেলের বর্তমান বাজার দর ১৩৫ টাকা। বোতলের সোয়াবিনও লিটার প্রতি ১৫ থেকে ২০টাকা দাম বেড়েছে। পিয়াজের দাম দু’সপ্তাহে দ্বিগুণ বেড়ে ৩৫ টাকা থেকে ৬৫-৭০ টাকায় এসেছে। ৫ কেজি ওজনের প্যাকেট আটায় দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা, প্যাকেট ময়দায় কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ টাকা, চিনি ও ডালে কেজি প্রতি বেড়েছে যথাক্রমে ২৫ ও ২০ টাকা, কাপড় কাছার কামাল সাবান প্রতি পিচে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি গত দুই সপ্তাহ আগে যেখানে দাম ছিলো প্রতি কেজি ১৩৫-১৪০ টাকা তা বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা দরে। মসলা ও কাঁচা বাজারে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। তবে দাম কিছুটা কমেছে কাঁচামরিচ ও ডিমে। অপরিবর্তিত আছে শুকনা মরিচ, রসুন, ধনিয়া, লবন ও টিস্যুর দাম। এ উপজেলার ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা গ্রামের বাজারের ক্ষুদ্র দোকানদার। পণ্যের দাম বাড়ায় সিলেট-ঢাকার আড়তদারেরা। তারা আমাদের কাছে যখন যে পণ্য যে দরে বিক্রি করবে আমরাও সেই দরে ক্রেতাদের সেবা দেবো। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা আছেন পণ্য মজুত করে সিজনে বেশি দামে বিক্রির অপচেষ্টটা করে। তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনলে বাজার কিছুটা ভারসাম্যপূর্ণ থাকবে।
হুমায়ূন কবির, রোমান আহমদ ও আমির আলী নামের তিনজন ব্যবসায়ীর সাথে এ নিয়ে কথা হয়। তারা বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। আমরা আড়তদারদের কাছ থেকে দামে মাল কিনি তাই দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবু আমরা যতটুকু পারি ক্রেতাদের সূলভমূল্যে ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। প্রত্যেকটা মালের দাম কোম্পানিগুলোও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এদিকে শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করলেও দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী।
সুনামগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরের সহকারি পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে বিরামহীনভাবে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। চেষ্টা করছি বড় বড় বাজারগুলোতে পণ্যের দাম ঠিক রাখতে। তাহলেই ছোট বা গ্রামের বাজারগুলোতে দাম কমে আসবে। পণ্যের দাম এতো ঊর্ধ্বমুখী কেনো জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, পূজার বাজার চলছে। পণ্যের উপর ভোক্তার বাড়তি চাপ। হয় তো বাড়তি চাপের কারণেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী। তবে, এমনটি থাকবে না। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। শনিবার থেকে আমরা আরো ছাপিয়ে কাজ করবো।