ত্রিশ সহস্রাধিক মানুষের স্বপ্নপূরণে মহাসিং নদীতে সেতু
জামিউল ইসলাম তুরান, শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি:
প্রকাশিত : ০৭:০৮ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের মহাসিং নদীর উপর নির্মিত হতে যাচ্ছে মহাসিং সেতু। ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের কবরস্থান এলাকা থেকে কাদিপুর খেয়াঘাটকে সংযোগ করবে সেতুটি। এতে খুব বেশি উপকৃত হবেন নদীর অপারের ৮ গ্রামের ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেতু নির্মাণে ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়ে মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। চলছে ল্যান্ড সার্ভে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত ল্যান্ড সার্ভের প্রায় ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সার্ভে কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, আরো দু’দিন সময় নিয়ে ব্যাথোমেডিক্স সার্ভে, ট্রপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে ও লেভেল বিএম ফ্লাই সার্ভে এন্ড ক্রসসেকশনের কাজ করবেন তারা। তাদের এ কাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলীদের হাতে সার্ভের সামারি তুলে দেবেন। সে অনুপাতে ড্রয়িং করেই সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হবে। তবে, আনুমানিক ৫শ ফুট দীর্ঘ সেতু হবে বলে ধারণা করছে সার্ভে টিম।
মহাসিং নদীর উপর এ সেতু নির্মাণ হলে উপকৃত হবেন জয়কলস, পূর্ব পাগলা ও পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেতুটিকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানও হবে কয়েক হাজার মানুষের। সুনামগঞ্জ জেলার শস্যভাণ্ডার খ্যাত দেখার হাওরের সাথে সরাসরি তৈরি হবে সড়ক সংযোগ। এতে কৃষকেরা জমি থেকে সড়কপথে কম খরচে ও কম সময়ে ধান আনা নেওয়া করতে পারবেন। উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হবেন জেলেরা। সিলেট-ঢাকা থেকে মাছ কিনতে আসা ক্রেতারা সরাসরি সড়কপথ ব্যবহারে হাওরের পাদদেশে চলে যেতে পারবেন। তখন জেলেদের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পাগলা বাজারে না এসে হাওর পাড়েই কেনাবেচা করতে পারবেন। এ ছাড়াও সহজ সড়ক পথ হলে দেখার হাওরকে কেন্দ্র করে তৈরি হতে পারে পর্যটন সম্ভাবনা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের মহাসিং নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গত নির্বাচনে। তিনি তার কথা রাখছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শুরু হচ্ছে নির্মাণ কাজ। এতে উপকৃত হবেন জয়কলস ইউনিয়নের আসামপুর, পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের উত্তর কাদিপুর, দক্ষিণ কাদিপুর, শরীয়তপুর, মানিকপুর ও পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের খাড়ারাই, চিকারকান্দি, রনসী গ্রামের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিশেষ কথা হচ্ছে- সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে শস্যভাণ্ডার দেখার হাওরের সাথে। এতে উপকৃত হবেন কয়েক হাজার পরিবণ শ্রমিক, কৃষক ও মৎস্যজীবীদের।
আসামপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির, কাদিপুরের হাজি কমর আলী, আবদুল কাইয়ুম, আজাদুল হক আজাদ ও শিবলী মিয়া উচ্ছ্বাস করে বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। সেতুটি নির্মাণ হলে মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আমরা সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। এখন সার্ভের কাজ চলছে। কাজটি সম্পন্ন হলেই আমরা খুশি।
পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরুল হক বলেন, অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটলো। অপেক্ষার প্রহর ফুরালো ৮টি গ্রামের ৩০/৪০ হাজার মানুষের। এখন সময়ের অপেক্ষা। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়কে বার বার অনুরোধ করেছি সেতুটির জন্য। সেতুর পেচনে লেগে ছিলাম। আমি জানি, মন্ত্রী মহোদয় কাজের মানুষ। তাঁর পক্ষেই সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব। তাই আমি তাঁকে বার বার অনুরোধ করেছি। তিনি আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।
পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নান বলেন, মহাসিং নদীর উপর সেতু হবে এটি আমার নিজেরও একটা স্বপ্ন। এ জন্য আমি বারবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশলকে বলেছি। তাদেরকে তাড়া দিয়েছি। আশা করছি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এ সেতুর একটি বাস্তব রূপ আমরা দেখতে পাবো। সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী বলেই দেশে এতো উন্নয়ন হচ্ছে।##