ধর্ষণের অভিযোগে দুপুরে গ্রেপ্তার, সন্ধ্যায় দেড় লাখে দফারফা
স্টাফ রিপোর্টার, কবির হোসেন (শান্ত)
প্রকাশিত : ১০:২৫ এএম, ৪ অক্টোবর ২০২১ সোমবার
ফুফাতো বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে মামাতো ভাইকে গ্রেপ্তারের ৫ ঘণ্টা পর থানায় বসে রফাদফার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় সালিশে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা রায় করে ভূক্তভোগীকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৬০ হাজার টাকা থানার খরচ বাবদ রেখে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
শনিবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শাহিন(২৫) বাহরাইন প্রবাসী। সে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইউসুফ নগর গ্রামের নূরু মিয়ার ছেলে।
এদিকে বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যার আলোচনা ও সমালোচনা এখন উপজেলা সদরের প্রতিটি চা-স্টলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শাহিন প্রবাসে থাকাকালে দুই পরিবারের সম্মতিতে মামাতো বোনের সাথে বিয়ে ঠিক করেন। চলতি বছরের আগষ্ট মাসের ১৭ তারিখ শাহিন দেশে আসার পর তার মামাতো বোনকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরা করেন। এক পর্যায়ে তাদের দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে শাহিন পরিবারের পরামর্শে অন্যত্র বিয়ে করার কথা শুনে তার ফুফাতো বোন শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনদের অবহিত করেন। এতেও কোন সূরাহা না হওয়ায় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হন। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) শাহিন অন্যত্র বিয়ে করেন। বিয়ের পরদিন অভিযোগকারী পুনরায় ঘটনাটি নিস্পত্তি চেয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হলে কোন কাজ না হওয়ায় শনিবার সকালে মুরাদনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে ওইদিন দুপুরে মুরাদনগর থানার এএসআই নুর-আজম অভিযুক্ত শাহিনকে তার নিজবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
অভিযোগে ৪ নম্বর আসামি অভিযুক্ত শাহিনের বোন শাহিনা আক্তার মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগকারী আমার ফুফাতো বোন। আমার ভাই বিয়ে করেছে মাত্র ৪ দিন হয়। তার টাকা পয়সা দেখে তাকে বিপদে ফেলার জন্য গ্রামের কিছু খারাপ লোকের কুপরামর্শে থানায় গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করে। তারই জের ধরে শনিবার দুপুরে পুলিশ আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়।
বর্তমানে কি অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রফাদফার জন্য প্রথমে থানায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরো ৩০ হাজার টাকা নেয়। আমাকে বড় স্যার বলেন, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে অভিযোগকারীকে ৮০ হাজার টাকা দেয়া হবে, বাকি ৬০ হাজার টাকা থানার খরচ বাবদ রাখা হয়েছে।
সালিশে উপস্থিত ইউসুফনগর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ মাস্টার মুঠোফোনে বলেন, আমি উপস্থিত ছিলাম, তবে বিচার করিনি। দুপক্ষের উপস্থিতিতে থানায় বসে ৮০ হাজার টাকা টাকা ধার্য্য করে এক ঘণ্টার মধ্যে মেয়েকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সালিশকারী এএসআই নূর-আজম বলেন, ফুফাতো বোনকে তার মামাতো ভাই বিয়ে না করে অন্য জায়গায় বিয়ে করায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় ওই মেয়ে। পরে তার অভিযোগের ভিত্তিতে মামাতো ভাই শাহিনকে থানায় নিয়ে আসি। দু’পক্ষের অনুমোতিক্রমেই ওসি স্যারের নির্দেশে সালিশ করেছি। আর সালিশে মেয়েকে ক্ষতিপূরণ বাবদ যে ৮০ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। সেই টাকাই ছেলের পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর বাহিরে অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান সালিশের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মামাতো ভাই বিয়ে না করায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ফুফাতো বোন। মূলত আমার অনুমোতিক্রমেই এএসআই নূর-আজম এই সালিশটি করেছে। আমার জানামতে মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওই ছেলের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকা আমার জানা নেই, আমি কুমিল্লায় আছি রাতে বলতে পারবো কত টাকা নেওয়া হয়েছে।